প্রাণ ভোমরা ....✍ সঞ্চারী চ্যাটার্জী




গল্প

প্রাণ ভোমরা

সঞ্চারী চ্যাটার্জী


--এ গুলো মাছ? হ্যাঁ গো তুমি এখনো মাছ চেনোনা ? একেই তো এটা সিলভার মাছ তারপর গলা পচা | কবে শিখবে তুমি বাজার করতে ?তিন কাল গিয়ে এক কাল ঠেকলো আর কবে হবে বাপু ? মাছ ধুতে ধুতে বললেন ছায়া দেবী |

--সব সময় আমাকে ইনসাল্ট করা?আমি ভালো বাজার করি ,বাজার আমার রক্তে |আজ না হয় মাছটা খারাপ ,তাই বলে তুমি এমনি বলবে ? তুমি কি সবজান্তা গামছা ওয়ালা ? গলা উঁচিয়ে বললেন শ্যামল বাবু |

--বুড়ো বলে কি ? শুধু কি আজ? রোজই তো তুমি পচা মাছ নাহলে সবজি আনছো |

--মিন্টুর মা,ধম্মে সইবে না কিন্তু ,এতো মিথ্যে বলোনা ,মুখে পোকা হবে,মরণের সময় মুখে জল পাবে না এই বলে দিলাম |

--নিজে তো ভুষুন্ডির কাক হয়ে বেঁচে আছেন ,আর আমাকে বলছেন ...

--মিন্টুর মা,আমি মরলে তুমি যে বিধবা হবে ,তখন মাছ ,মাংস জুটবে কি করে???

--বাবা,মা তোমরা এবার থামো ,তোমাদের জ্বালায় যে কাক চিল ঘরে বসতে পারে না |মিন্টু ,ঝন্টু সমবেত স্বরে বলে উঠলো |



সম্পর্কে শ্যামল বাবু আর ছায়া দেবীর বড়ো ও ছোট ছেলে | ওদের চিৎকারে দু জনেই ঝিম মেরে যায় | ছায়া দেবী তাও সাহস জুগিয়ে অনুযোগের সুরে বললেন
--মাছওয়ালা ঠকিয়ে রুই মাছ বলে পেট নরম সিলভার মাছ দিয়েদিয়েছে ,সেটা বলবোনা বল ?

--কি আর করা যাবে ওই দিয়ে চালিয়ে নাও ,ছোট ছেলে ঝন্টু বলে উঠলো |

শ্যামল বাবু কিছু না বলে গজ গজ করতে করতে ওই স্হান ত্যাগ করলেন |

এতক্ষণ যারা বুড়ি -বুড়ির তামাশা দেখছিলো ,মানে ওনাদের পুত্র বধূরা ততক্ষনে যে যার কাজে চলে গেছে |
একা মাছ নিয়ে ছায়া দেবী দাঁড়িয়ে রইলেন |

এহেন বড়োবুড়ির চুলোচুলির কথা কারুর জানতে বাকি নেই,দিনে বেশিরভাব সময় বাক্যালাপ বন্ধ থাকে ওনাদের |
সেদিনও একটা সেই রকম দিন ,রাগে শ্যামল বাবু ভাতের থালা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন | দুপুর থেকে মুখ দেখাদেখি বন্ধ দুজনের ....

বিকেলে দুই ছেলের কাছে এলো সোনা,যে সোনাদা নামে এই অঞ্চলে অধিক পরিচিত | লোকটাকে মোটেও পছন্দ করেন না ছায়াদেবী | এলেই ঘুরে ঘুরে বাড়ি দেখে,ইদানিং যেন আসা আরো বেড়েছে | আলোচনার পর হাসি মুখে চলে সোনা |

সন্ধ্যে বেলায় দু ছেলের জরুরি তলব,তাই ওই মিনসের মুখ সহ্য করতে হবে জেনেও বসার ঘরে যেতে বাধ্য হলেন ছায়াদেবী|
ছেলেদের মুখ থেকে ওদের প্রস্তাব শুনে তো ছায়া দেবীর গা কাটা দিয়ে উঠলো | মিন্টু বললো



--আমাদের এই ছোট ঘরে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে ,এর ওপরে দোতলা আমার বা ঝন্টুর সাধ্যের অতীত | তাই বাবা তুমি শুধু এখানে সই করে দাও | আমরা দুটো ফ্লাট আর কিছু টাকা পাবো ,আর আমি তোমাকে আর ঝন্টু মাকে
পাকাপাকি ভাবে রাখবো | তোমরা এক কাছে থাকলে চুলো চুলি করে মরবে | তাই এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত | লম্বা চওড়া ভাষণ দিয়ে থামলো ওনাদের বড়ো ছেলে |

ছায়া দেবীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ,বুড়ো বয়েসে ওনাদের কে আলাদা করে দেবে ?? এবার যদি ওনার কর্তা রাগের মাথায় সই করে দেন তো সব শেষ ,সারাজীবন ছেলে- বৌদের অধীনে থাকতে হবে ?

--ও তোমরা তাহলে হেঁসেল আলাদা করতে চাইছো ? ভালো ভালো, সেই চাওয়ায় খারাপ কিছু নেই | তোমাদের আশা পূর্ণ হবে | এতোটা বলে থামলেন শ্যামল বাবু |

ঐদিকে ছেলে বৌদের মুখে হাজার ওয়াটের আলো | সব শেষ হয়ে গেলো বলে প্রমাদ গুনলেন ছায়া দেবী |

--বাবা,তাহলে সই টা করে দাও ,খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে উঠলো ঝন্টু |

--তোমাদের হেঁসেল আলাদা করার জন্য সই করার কি দরকার? তোমারা দুই ভাই অন্যত্র চলে যাও | আমরা দুই বুড়ো-বুড়ি এখানে থাকবো ,পেনশনের টাকায় দিব্য কাটবে আমাদের |

--আপনারা দু জন এক সাথে থাকবেন বাবা ?থাকতে না পেরে বড়ো বৌমা বলে ফেলে |

--হ্যাঁ,থাকবো বৌমা | আমাদের যতই ঝগড়া হোক খেয়াল সেই তোমার মা রাখে | আজ যে আমি খাবার ফেলে উঠে গেলাম ,তোমার মাও অভুক্ত রইলো | ￶অন্যকারুর কিছু এসে যায় কি ?

--তাহলে তুমি সই টা করবে না ?চোয়াল শক্ত করে বললো মিন্টু |

--না ,এখানে থাকতে হাঁড়ি আলাদা হবে না ,দৃঢ় স্বরে বললেন শ্যামল বাবু |
ছেলেরা আর কিছু বাক্যব্যায় না করে বাইরে চলে গেলো |

--তুমি আমাকে এত ভালোবাসো ?



--হ্যাঁ বাসি তো,চুলে সব পাক ধরেছে তাও বোঝোনা ?

--তাহলে এমন ধারা ঝগড়া করো কেন ?

--ওটাও এক রকম প্রেমের বহিঃপ্রকাশ মিন্টুর মা |

স্বামীর কথা শুনে মুখ বেঁকায় ছায়াদেবী |

--আহা! তুমি যে প্রানেশ্বরী ,আমার প্রাণ ভোমরা |

--বাব্বা !

--মিন্টুর মা,খিদে পাচ্ছে ,গোটা চার লুচি ভেজে দেবে ?করুণ স্বরে বললেন শ্যামল বাবু |

--একটা কথা বলি ? আমি জানতাম আমার বুড়ো টার রাগ পড়লে লুচি খেতে চাইবে ,তাই আগে ভাগে ময়দা মেখে রেখেছি | এখুনি গিয়ে ভেজে আনছি |

--সোনা বৌ আমার |

--মরণ! বলে হেসে ওঠেন ছায়া দেবী |

ওনার সাথে তাল মেলায় শ্যামল বাবুও |


সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।