ডাক্তার ও মানবিকতা ....✍নূরুল হুদা আল মামুন
অন্যরকম
ডাক্তার ও মানবিকতা
নূরুল হুদা আল মামুন
জীবন যেখানে, রোগ-ব্যাধি সেখানে। নিরুপায় হয়ে তখন ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হয় বৈ কি! বলা হয়ে থাকে ভাল ডাক্তারের সোহবত পেলে রোগ এমনিতেই সেরে যায়। এমন ডাক্তারের সাক্ষাৎ লাভ নেহায়েত ভাগ্যের ব্যাপার এখানে। বাংলাদেশের মত দেশে ডাক্তারের সাথে রোগীর সম্পর্ক কেমন এটা বোধ করি নতুন করে বলার প্রয়োজন নাই। সবার জীবনে কম বেশি টক ঝাল তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ভেবেছিলাম এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে নিজকে সংবরণ করব। কিন্তু পারলাম না। কেননা বাংলাদেশের ডাক্তার কী বস্তু তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ পেয়েছিলাম ২০১২ সালে যখন আমার প্রথমা সন্তান অনাকাঙ্খিত সময়ে ভূমিষ্ঠ হয়। ডাক্তারের অবহেলার কারণে আমার প্রাণাধিক প্রিয় কন্যা পৃথিবীর রূপ দেখতে ব্যর্থ হয়েছে। হায়দ্রাবাদের বিশ্ব খ্যাত রেটিনা স্পেশালিষ্ট সুভাদ্রা জালালী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার দেশের যে ডাক্তার এতবড় ক্ষতি করলেন তিনি কি কমপেনসেশন দিয়েছেন? আমি বললাম, তিনি শুধু SORRY বলেছেন। জালালী বলেন, এতবড় সর্বনাশ করে শুধুমাত্র SORRY বললেই হলো? আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশে কমপেনসেশন দেওয়ার নজির স্থাপন হয়নি।
এদিকে আমার ঐ আত্মীয় দক্ষ একজন নার্স আনলেন এবং সহী সালামতে স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় সন্তান ভূমিষ্ট করানো হলো। যখন সব কিছু শেষ হলো তখন ঐ ডাক্তার এলেন। সব ঠিকঠাক দেখে রেগে মেগে বললেন, 'সমস্যা নাই আমার ১০ হাজার টাকা পেলেই হলো।' শেষ বিকেলে বাসায় ফেরার জন্য ক্লিনিকের পাওনাদি মিটাতে গেলাম। তখন কর্তৃপক্ষ জানালেন যে, ডাক্তারের টাকাও দিতে হবে। আমরা বললাম, ডাক্তার আমাদের জন্যতো কিছুই করেননি তাহলে কেন ডাক্তারের টাকা দিতে হবে? কোন যুক্তি দিয়ে পারা গেল না (সদ্য হাজী সাহেবা) ডাক্তার বা ঐ ক্লিনিকের লোকজনের সাথে। ক্লিনিকের লোকজন জানালো, তারা অসহায় । ডাক্তারকে তারা কিছুই বলতে অপারগ। অগত্যা ডাক্তারের দাবীকৃত টাকা সমেত ক্লিনিকের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করে বাসার পথে পা বাড়ালাম।
২
যাহোক,২৮ সেপ্টেম্বর ১৮ আমার সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীকে নিয়ে শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের গাইনী বিভাগের প্রধানের অধীনে ঝালকাঠীর একটা ক্লিনিকে যাই। প্রথমে জানানো হলো বাচ্চার পজিশন ঠিক নাই তাই সিজারিয়ান করতেই হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেডিকেল অভিজ্ঞ এক আত্মীয় সহ আমরা রাজী হলাম। স্বাভাবিক বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ দৃশ্যমান হওয়ায় আমার ঐ আত্মীয় গাইনী ডাক্তারকে দেখার অনুরোধ করলেন। এবারো দেখে শুনে জানালেন না সিজারিয়ান করতে হবে। এরপর আমার ঐ আত্মীয় যখন জোর দিয়ে বললেন, 'আপনি ভাল করে দেখেন এখনতো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।' এবার তিনি বিরক্তির সুরে অপেক্ষা করতে বলে অন্য চেম্বারে চলে গেলেন। বেচারী ডাক্তার খুব একটা খুশি হলেন না তা তার কথায় স্পষ্ট বুঝা গেল। এবং ক্লিনিকের কোন নার্সও কোন দায়িত্ব নিলেন না।এদিকে আমার ঐ আত্মীয় দক্ষ একজন নার্স আনলেন এবং সহী সালামতে স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় সন্তান ভূমিষ্ট করানো হলো। যখন সব কিছু শেষ হলো তখন ঐ ডাক্তার এলেন। সব ঠিকঠাক দেখে রেগে মেগে বললেন, 'সমস্যা নাই আমার ১০ হাজার টাকা পেলেই হলো।' শেষ বিকেলে বাসায় ফেরার জন্য ক্লিনিকের পাওনাদি মিটাতে গেলাম। তখন কর্তৃপক্ষ জানালেন যে, ডাক্তারের টাকাও দিতে হবে। আমরা বললাম, ডাক্তার আমাদের জন্যতো কিছুই করেননি তাহলে কেন ডাক্তারের টাকা দিতে হবে? কোন যুক্তি দিয়ে পারা গেল না (সদ্য হাজী সাহেবা) ডাক্তার বা ঐ ক্লিনিকের লোকজনের সাথে। ক্লিনিকের লোকজন জানালো, তারা অসহায় । ডাক্তারকে তারা কিছুই বলতে অপারগ। অগত্যা ডাক্তারের দাবীকৃত টাকা সমেত ক্লিনিকের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করে বাসার পথে পা বাড়ালাম।
৩
আমি জানি কোথাও বলে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে না। তবুও আপনাদের সাথে বিষয়টা শেয়ার করলাম। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা কী এভাবেই চলতে থাকবে? আমরা কী মানবিক হবো না কখনো?
সমাপ্ত
--------------------