শুভমিতার জন্য ....✍প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র




ছোটগল্প

শুভমিতার জন্য

প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র


শুভমিতা দাশগুপ্ত। আপনারা চেনেন না। অথবা কেই কেউ হয়ত চেনেন। একজন গৃহবধূ। আর পাঁচজন আদর্শ মায়ের মতোই একজন মা অথবা একজন গৃহবধূ।
শুভমিতা সবে তখন একাদশ শ্রেণীতে পরে। বাবা মায়ের আদরের মেয়ে। লেখাপড়ায় ভালো। ওর ভাই ওর থেকে দুই বছরের ছোট। লেখাপড়ায় ভালো হলেও মেয়ে বলে বাবামায়ের একটু চিন্তা বেশি। মধ্যবিত্ত পরিবার। বেশ স্বাচ্ছন্দেই চলে ওদের সংসার।তবে পড়াশুনার থেকে সেকালে সব পিতামাতাই, মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে একটু বেশি চিন্তা করতেন।আজ যদিও চিত্রটা অনেকটাই পাল্টিয়েছে।
কড়া শাসন ওর মায়ের। মেয়ে বড় হয়েছে। কোন ছেলে বন্ধুর সংস্পর্শের উপর একটু নজর বেশিই। বাড়িতে কোন বন্ধুর আশা যাওয়াও বারন।
যদিও এতে শুভমিতার অসুবিধা তেমন একটা ছিল না। যদিও ওই বয়সে ভিন্ন লিঙ্গের প্রতি একটু বেশি টান সবারই থাকে। শুভমিতারও ছিল, থাকাটাই তো স্বাভাবিক। তবুও পারিবারিক অনুশাসনকে অগ্রাহ্য করার মানসিক ইচ্ছা কোনদিনই শুভমিতার ছিল না। স্কুল যাবার পথে রোজ একই জায়গায় বিকাশের উপস্থিতি আর লাজুক হাসি শুভমিতাকে বাড়তি আনন্দ দিলেও ওরা একে অপরকে কোনদিনই তা প্রকাশ করতে পারে নি।

আরো কয়েক জনের নেপথ্যে চোখা -চাওনিও শুভমিতা অনুভব করেনি তা নয়।
একদিন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সময় কলকাতার নামি প্রতিষ্ঠানের উচ্চ বেতনের প্রতিষ্ঠিত ছেলের মায়ের পছন্দ হয়ে যায় শুভমিতাকে। হঠাৎ করেই কন্যার অনুমতি না নিয়েই শুভমিতার পিতা রাজি হয় মেয়ের বিয়ের। সুপাত্র, কোন পিতামাতা হাতছাড়া করতে চায়না। বাঙালি মেয়েদের সেকালেও বাবার মুখের উপর বিয়ে না করার ইচ্ছাপ্রকাশ করার ক্ষমতা ছিল না। তাই বিয়ে।
শুভমিতার থেকে ওর স্বামী ১৫ বছরের বড়। দাম্পত্য জীবনের পরিপক্কতা স্বামীর থাকলেও শুভমিতার তখনও সেই পরিপক্কতা ছিল না। না থাকারই কথা। শুভমিতার বাবার ইচ্ছা ছিল তার মেয়ে বিয়ের পরেও পড়াশুনা করুক। সেই আবেদন জানিয়েও ছিলেন শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে। তারাও না করেনি।

বিয়ের পরেই শুভমিতা উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক পরীক্ষায় বসে ভালো ফলও করে। সন্তানের জন্ম দেয়। সুখী জীবন শুভমিতার। কিন্তু কোথাও যেন শুভমিতার মানসিক খেদ রয়েই গেছে। কোথাও একটা নাপ্রাপ্তির যন্ত্রনা।শুভমিতা চেয়েছিল পোষ্ট গ্রাজুয়েট পরীক্ষা দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও স্বামীর অমত অগ্রাহ্য করে বসতে পারেনি পরীক্ষায়।

শুভমিতা বাপের বাড়ির শৈশবের বন্ধু অলোকের বন্ধুত্ব চেয়েছিল কিনতু অলোকের স্ত্রী ও স্বামীর সন্দেহের কারনে সে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেনি। লুকিয়ে হলেও চেষ্টা করেনি।শুভমিতা অলোক কে খুব ভালোবাসলেও স্বামীর বারনে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সব প্রাপ্তি অঢেল সুখের মধ্যেও আজ এক নিঃসঙ্গতা শুভমিতার। স্বামী ভালোবাসে না তা নয়। দাম্পত্য সুখী জীবনের আস্বাদ আজও প্রতি রাত্রে শুভমিতার প্রাপ্তি। তবুও মধ্য ত্রিশে শুভমিতা নি:সঙ্গ।

একদিন হঠাৎই রাহুলের সাথে বন্ধুত্ব হয় শুভমিতার। রাহুল অনেক দূরে থাকে। ফেসবুকে বন্ধুত্ব। একে অপরকে না চিনলেও বন্ধুত্বের গভীরতা হয় ওদের ।এর পর হোয়াটস এপে কথা। যেন কত জন্মের পরিচিত ওরা।কিন্তু শুভমিতা সেই বন্ধুত্বকে আমল দেয় না। শুভমিতা বন্ধুত্বকে ভয় পায়, ঘৃণা করে। শৃঙ্খলিত জীবনে বন্ধুত্বও যদি সন্দেহের টানাটানি নিয়ে আসে, তাহলে সেই বন্ধুত্বের কিবা প্রয়োজন।

বারেবারে রাহুল চাইলেও শুভমিতা কেমন একটা দূরত্ব বজায় রাখে। জীবনের প্রতি কেমন যেন এক অবিশ্বাস। আজ সব পেয়েও কেমন যেন না পাওয়ারই স্বর্গের রানী শুভমিতা। সংসার, স্বামী ,পুত্র নিয়ে শুভমিতা অতিবাহিত করে এক যান্ত্রিক জীবন।
শুভমিতা ভালো আছে। ঘরে ঘরে শুভমিতারা ভালো থাকুক।
(সম্পুর্ন কাল্পনিক গল্প)
ছবিটি কাল্পনিক

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।