ভক্তি ভূমি, রাঢ় বাংলার গোপালদাসপুর ....✍প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
অন্যরকম
ভক্তি ভূমি, রাঢ় বাংলার গোপালদাসপুর
প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র

রাঢ় বাংলার পূর্ব বর্ধমান জেলার অর্ন্তগত কালনা মহকুমার বৈদ্যপুর এক প্রাচীন জনপদ। বৈদ্যপুর গ্রামটি ঘিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর মন্দির। এই গ্রামের জগদ্ধাত্রী পূজার বিশেষ সুনাম আছে। বৈদ্যপুর এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জমিদার বাড়ি, অসংখ্য শিব মন্দির, দুর্গা মন্দির, নারায়নের মন্দির । অনেক মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।এই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি আজ ধ্বংসের পথে। বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত গোপালদাসপুর গ্রাম প্রাচীনকাল থেকেই এলাকার ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম পীঠস্থান। এখানে আছেন “রাখাল রাজা”। এই এলাকায় অসংখ্য মন্দির কালের নিয়মে ধ্বংস হলেও আজও ভক্তি আন্দোলনের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে প্রাচীন রাখাল রাজা মন্দির।স্থানীয় মানুষদের কাছে রাখাল রাজা এক আবেগ। তাঁদের অনেকেরই বিশ্বাস রাখাল রাজার কৃপাতেই এই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি। চাষ আবাদেও এই এলাকার সুনাম আছে জেলায়।
রাখাল রাজার ইতিহাস বড়ই রোমাঞ্চকর। কাটোয়ার খাটুন্তি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ধর্মপ্রাণ রামকানু গোঁসাই। পারিবারিক কলহে অতিষ্ট হয়ে তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতা গোপীনাথকে সঙ্গে নিয়ে সপরিবারে গোপালদাসপুর জঙ্গলে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই সময় এই এলাকা ছিল গভীর জঙ্গলে পরিবেষ্টিত। আশেপাশের মানুষজন খুব একটা দরকার না পড়লে এই জঙ্গলে আসতেন না।মাধুকরি করেই সেকালে রামকানু জীবিকা অর্জন করতেন ও দেবতার সেবা করতেন। তাঁর তিন পুত্র সন্তান ছিল। নিমাই চাঁদ, বলদেব ও রাখাল। এই রাখাল একদিন খেলতে খেলতে পিতার লাগানো মাধবী গাছটির ডাল পালা সব ভেঙে ফেলে। এদিকে অন্যান্য ফুলের গাছগুলিতেও কোন ফুল ধরেনি সেদিন।রামকানু সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন কে মাধবী গাছটির ফুল ছিঁড়েছে। সবাই পিতার ভয়ে নিশ্চুপ ।রামকানু রেগে গেলেন, পূজার ফুল না পেয়ে ক্রোধে বলে বসলেন, যে ফুল ছিঁড়েছে তিন রাত্রির মধ্যে তাঁর মৃত্যু হবে।

পিতার অভিশাপে রাখালের মৃত্যু হয় তারপর দিনই। রামকানু পরে জানতে পেরে অবশ্য দেবতার সামনে কান্নাকাটি করেও পুত্র রাখালের মৃত্যু রোধ করতে পারেন নি। রাখালের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মন দুঃখে বৃন্দাবনের দিকে হাঁটতে থাকেন। একদিন সন্ধ্যায় একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নেবার সময়, তিনি স্বপ্নাদেশ পান বৃন্দাবন তো তাঁর গ্রামেই। ভগবান রামকানু গোস্বামীকে গ্রামে ফিরতে বলেন। ব্রজধামে না গিয়ে গ্রামে ফিরে এসে রাখাল রাজের প্রতিষ্ঠা ও পূজা শুরু করেন রামকানু গোস্বামী।
স্বপ্নাদেশে রাখাল রাজের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। এখানে বর্তমানে যে মূর্তি পূজিত হয় রাখাল রাজের তা বড়ই সুন্দর। কৃষ্ণ রাখাল, বাম হাতে ক্ষীরের নাড়ু, ডান হাতে লাঠি। মূর্তির ডান হাঁটু ভাঙা। রাখাল রাজার চারিদিকে গাভী ধবলী। কথিত আছে যে নিমকাঠটি দিয়ে মূর্তিটি তৈরি হয়েছিল তা পাশের পুকুরে ভেসে উঠেছিল। এই পুকুরটি যমুনা নামে খ্যাত। স্বপ্নাদেশে রামকানু নির্দেশমত সেই কাঠটি দিয়ে দেবতার মূর্তি বানিয়েছিলেন বাঘনাপাড়া গ্রামের পাঁচ বছরের শিশু মহাদেব।এসবই লোককথা বা স্থানীয় মানুষের ও ভক্তদের বিশ্বাস।
শত শত বৎসর ধরে এই এলাকায় আসছেন সাধুসন্ন্যাসী, তীর্থযাত্রী ও ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা। সীতারাম ভক্ত ব্রহ্মানন্দ দাস সহ অজানা অচেনা অনেক সাধু সন্ত এখানে এসেছেন। একসময় গভীর জঙ্গলের মধ্যেই এই মন্দির গড়ে তুলেছিলেন পোঁটবার জমিদার গোপাল দাস। যদিও ওনার জীবনী বিশদে জানতে পারিনি। তবে সে সময় মুর্শিদাবাদের নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। রামকানু গোস্বামীর কথা শুনে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ও নিষ্কর জমি দান করেছিলেন রাখাল রাজের সেবার জন্য।
জনশ্রুতি পোঁটবার জমিদার গোপাল দাস শিকারে বেরিয়ে এই এলাকার গভীর জঙ্গলে একদিন সন্ধ্যায় তাঁবু ফেলেন। এমনি সময় তিনি জঙ্গলে কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ ধ্বনি শোনেন। সেই আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে তিনি একটি বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়ে দেখেন একজন ব্রাহ্মন কৃষ্ণের পূজা করছেন। গভীর জঙ্গলে এ দৃশ্য দেখে তিনি অবাক হন। এদিকে ব্রাহ্মন গোপাল দাসকে দেখেও অবাক। তিনি প্রশ্ন করেন গোপালের এখানে আসার হেতু। এরপর ব্রাহ্মন তাঁদের সকলকেই ভোগ খাবার অনুরোধ করেন। কিন্তু অল্প ভোগ থাকলেও সেদিন জমিদার ও তাঁর সহযাত্রী সকলের সেদিন পেট ভরে। জনশ্রুতি এই গোপাল দাস প্রথম এখানে মন্দির করেন ও রাখাল রাজের ভোগের জন্য সম্পত্তি দান করেন ব্রাহ্মনকে। ১৭৭৫ সালে এই মন্দির তৈরি হয়। অন্যান্য মন্দিরগুলি যদিও ধ্বংস হয়েছে। এই গোপাল দাসের নাম অনুসারেই গ্রামের নাম গোপালদাসপুর।
মন্দির প্রাঙ্গণ খুবই সুন্দর। ফাঁকা মাঠের মধ্যে বড় বড় বট, অশল্থ, করবীর জঙ্গল আজও চোখে পড়ে। মন্দিরের পাশেই যমুনা নামের পুষ্করিনি,যা পবিত্রতার নিদর্শন। অনতি দূরেই বয়ে চলেছে একটি খাল। পঞ্চায়েতের পরিচর্যায় অনেক বৃক্ষ রোপিত হয়েছে চারিপাশে। মন্দিরের আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই। এ যেন এক তপোবন।
মন্দিরে আসার জন্য বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও তা যথেষ্ট নয়। গ্রামের পাকা রাস্তা হইতে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার উন্নতি হলে ভালো হয়। তবে এ রাস্তায় ছায়াঘন পরিবেশ দূর দুরন্ত থেকে আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
বংশপরম্পরায় রামকানু গোঁসাই এর পরিবারের লোকজনই এখানে পৌরহিত্য করেন। যদিও এখন পালা করে পূজাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। ভাত, ডাল, শুক্ত, চরচরি,চাটনি, পরমান্য সহযোগে রোজ দুপুরে ভোগ দেওয়া হয়। এখানে এলে প্রসাদ না পেয়ে কেউই ফিরে যায় না। এটাই এখানকার স্থান মাহাত্ম। তবে এখন পঁচিশ টাকা করে মূল্য দিতে হয়। পূজারীরাই ভোগের ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির সংলগ্ন প্রশস্ত মাঠটি বিশেষ সুন্দর।
সন্ধ্যা আরতির পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়। জনশ্রুতি আরতির পরে এই স্থানে আর কেউ আসেন না। কারন পুরো এলাকাতেই এক অলৌকিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষের বিশ্বাস ভগবান রাখালরাজা এই স্থানে সাক্ষাৎ বিরাজ করেন সন্ধ্যার পর। এক পুরোহিত কে এই ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে উনি বলেন- “কিছু মানুষ এসেছিলেন রাত্রে বিষয়টির সত্যতার প্রমান পাওয়ার জন্য। বেশির ভাগ জনই ভয়ে ফিরে গেছেন। আবার অনেকের অপমৃত্যু হয়েছে ,নয়তো মুক ও বধির হয়ে গেছেন ।” পাঁচালিকার অজিত কুমার গোস্বামীর লেখা বই থেকেও সে ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
তবে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই এই তীর্থভূমিতে জনসমাগম দিন দিন বাড়ছে। বর্ধমান -হাওড়া মেন লাইন ট্রেন ধরে বৈচি স্টেশনে বা হাওড়া-কাটোয়া লোকাল ধরে কালনা স্টেশনে নেমে বাসে আসতে হয় বৈদ্যপুর। বৈদ্যপুর থেকে অটো বা টোটো রিক্সা নিয়ে গোপালদাসপুর আসা সুবিধা। গোপালদাসপুর আসার পথেই পড়বে আরও একটি প্রাচীন মন্দির “জগৎ গৌরী” মায়ের। এই স্থান জগৎ গৌরী তলা নামে খ্যাত।বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক দুর্গদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই তান্ত্রিক সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
বৈদ্যপুর অঞ্চলে রথযাত্রা মহা ধুমধামে অনুষ্ঠিত হয়। বৈদ্যপুরের অনতি দূরে দত্তদাড়িয়াটন স্বামীজির পৈতৃক ভিটে। এই অঞ্চলকে ঘিরে গ্রামীন পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানোও সম্ভব।

রাখাল রাজার ইতিহাস বড়ই রোমাঞ্চকর। কাটোয়ার খাটুন্তি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন ধর্মপ্রাণ রামকানু গোঁসাই। পারিবারিক কলহে অতিষ্ট হয়ে তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতা গোপীনাথকে সঙ্গে নিয়ে সপরিবারে গোপালদাসপুর জঙ্গলে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই সময় এই এলাকা ছিল গভীর জঙ্গলে পরিবেষ্টিত। আশেপাশের মানুষজন খুব একটা দরকার না পড়লে এই জঙ্গলে আসতেন না।মাধুকরি করেই সেকালে রামকানু জীবিকা অর্জন করতেন ও দেবতার সেবা করতেন। তাঁর তিন পুত্র সন্তান ছিল। নিমাই চাঁদ, বলদেব ও রাখাল। এই রাখাল একদিন খেলতে খেলতে পিতার লাগানো মাধবী গাছটির ডাল পালা সব ভেঙে ফেলে। এদিকে অন্যান্য ফুলের গাছগুলিতেও কোন ফুল ধরেনি সেদিন।রামকানু সবাইকে জিজ্ঞাসা করলেন কে মাধবী গাছটির ফুল ছিঁড়েছে। সবাই পিতার ভয়ে নিশ্চুপ ।রামকানু রেগে গেলেন, পূজার ফুল না পেয়ে ক্রোধে বলে বসলেন, যে ফুল ছিঁড়েছে তিন রাত্রির মধ্যে তাঁর মৃত্যু হবে।

পিতার অভিশাপে রাখালের মৃত্যু হয় তারপর দিনই। রামকানু পরে জানতে পেরে অবশ্য দেবতার সামনে কান্নাকাটি করেও পুত্র রাখালের মৃত্যু রোধ করতে পারেন নি। রাখালের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মন দুঃখে বৃন্দাবনের দিকে হাঁটতে থাকেন। একদিন সন্ধ্যায় একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নেবার সময়, তিনি স্বপ্নাদেশ পান বৃন্দাবন তো তাঁর গ্রামেই। ভগবান রামকানু গোস্বামীকে গ্রামে ফিরতে বলেন। ব্রজধামে না গিয়ে গ্রামে ফিরে এসে রাখাল রাজের প্রতিষ্ঠা ও পূজা শুরু করেন রামকানু গোস্বামী।
স্বপ্নাদেশে রাখাল রাজের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। এখানে বর্তমানে যে মূর্তি পূজিত হয় রাখাল রাজের তা বড়ই সুন্দর। কৃষ্ণ রাখাল, বাম হাতে ক্ষীরের নাড়ু, ডান হাতে লাঠি। মূর্তির ডান হাঁটু ভাঙা। রাখাল রাজার চারিদিকে গাভী ধবলী। কথিত আছে যে নিমকাঠটি দিয়ে মূর্তিটি তৈরি হয়েছিল তা পাশের পুকুরে ভেসে উঠেছিল। এই পুকুরটি যমুনা নামে খ্যাত। স্বপ্নাদেশে রামকানু নির্দেশমত সেই কাঠটি দিয়ে দেবতার মূর্তি বানিয়েছিলেন বাঘনাপাড়া গ্রামের পাঁচ বছরের শিশু মহাদেব।এসবই লোককথা বা স্থানীয় মানুষের ও ভক্তদের বিশ্বাস।
শত শত বৎসর ধরে এই এলাকায় আসছেন সাধুসন্ন্যাসী, তীর্থযাত্রী ও ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা। সীতারাম ভক্ত ব্রহ্মানন্দ দাস সহ অজানা অচেনা অনেক সাধু সন্ত এখানে এসেছেন। একসময় গভীর জঙ্গলের মধ্যেই এই মন্দির গড়ে তুলেছিলেন পোঁটবার জমিদার গোপাল দাস। যদিও ওনার জীবনী বিশদে জানতে পারিনি। তবে সে সময় মুর্শিদাবাদের নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। রামকানু গোস্বামীর কথা শুনে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ও নিষ্কর জমি দান করেছিলেন রাখাল রাজের সেবার জন্য।
জনশ্রুতি পোঁটবার জমিদার গোপাল দাস শিকারে বেরিয়ে এই এলাকার গভীর জঙ্গলে একদিন সন্ধ্যায় তাঁবু ফেলেন। এমনি সময় তিনি জঙ্গলে কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ ধ্বনি শোনেন। সেই আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে তিনি একটি বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়ে দেখেন একজন ব্রাহ্মন কৃষ্ণের পূজা করছেন। গভীর জঙ্গলে এ দৃশ্য দেখে তিনি অবাক হন। এদিকে ব্রাহ্মন গোপাল দাসকে দেখেও অবাক। তিনি প্রশ্ন করেন গোপালের এখানে আসার হেতু। এরপর ব্রাহ্মন তাঁদের সকলকেই ভোগ খাবার অনুরোধ করেন। কিন্তু অল্প ভোগ থাকলেও সেদিন জমিদার ও তাঁর সহযাত্রী সকলের সেদিন পেট ভরে। জনশ্রুতি এই গোপাল দাস প্রথম এখানে মন্দির করেন ও রাখাল রাজের ভোগের জন্য সম্পত্তি দান করেন ব্রাহ্মনকে। ১৭৭৫ সালে এই মন্দির তৈরি হয়। অন্যান্য মন্দিরগুলি যদিও ধ্বংস হয়েছে। এই গোপাল দাসের নাম অনুসারেই গ্রামের নাম গোপালদাসপুর।
মন্দির প্রাঙ্গণ খুবই সুন্দর। ফাঁকা মাঠের মধ্যে বড় বড় বট, অশল্থ, করবীর জঙ্গল আজও চোখে পড়ে। মন্দিরের পাশেই যমুনা নামের পুষ্করিনি,যা পবিত্রতার নিদর্শন। অনতি দূরেই বয়ে চলেছে একটি খাল। পঞ্চায়েতের পরিচর্যায় অনেক বৃক্ষ রোপিত হয়েছে চারিপাশে। মন্দিরের আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই। এ যেন এক তপোবন।
মন্দিরে আসার জন্য বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও তা যথেষ্ট নয়। গ্রামের পাকা রাস্তা হইতে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার উন্নতি হলে ভালো হয়। তবে এ রাস্তায় ছায়াঘন পরিবেশ দূর দুরন্ত থেকে আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
বংশপরম্পরায় রামকানু গোঁসাই এর পরিবারের লোকজনই এখানে পৌরহিত্য করেন। যদিও এখন পালা করে পূজাপাঠ অনুষ্ঠিত হয়। ভাত, ডাল, শুক্ত, চরচরি,চাটনি, পরমান্য সহযোগে রোজ দুপুরে ভোগ দেওয়া হয়। এখানে এলে প্রসাদ না পেয়ে কেউই ফিরে যায় না। এটাই এখানকার স্থান মাহাত্ম। তবে এখন পঁচিশ টাকা করে মূল্য দিতে হয়। পূজারীরাই ভোগের ব্যবস্থা করেন। প্রতিদিন কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির সংলগ্ন প্রশস্ত মাঠটি বিশেষ সুন্দর।
সন্ধ্যা আরতির পর মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়। জনশ্রুতি আরতির পরে এই স্থানে আর কেউ আসেন না। কারন পুরো এলাকাতেই এক অলৌকিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষের বিশ্বাস ভগবান রাখালরাজা এই স্থানে সাক্ষাৎ বিরাজ করেন সন্ধ্যার পর। এক পুরোহিত কে এই ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে উনি বলেন- “কিছু মানুষ এসেছিলেন রাত্রে বিষয়টির সত্যতার প্রমান পাওয়ার জন্য। বেশির ভাগ জনই ভয়ে ফিরে গেছেন। আবার অনেকের অপমৃত্যু হয়েছে ,নয়তো মুক ও বধির হয়ে গেছেন ।” পাঁচালিকার অজিত কুমার গোস্বামীর লেখা বই থেকেও সে ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়।
তবে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই এই তীর্থভূমিতে জনসমাগম দিন দিন বাড়ছে। বর্ধমান -হাওড়া মেন লাইন ট্রেন ধরে বৈচি স্টেশনে বা হাওড়া-কাটোয়া লোকাল ধরে কালনা স্টেশনে নেমে বাসে আসতে হয় বৈদ্যপুর। বৈদ্যপুর থেকে অটো বা টোটো রিক্সা নিয়ে গোপালদাসপুর আসা সুবিধা। গোপালদাসপুর আসার পথেই পড়বে আরও একটি প্রাচীন মন্দির “জগৎ গৌরী” মায়ের। এই স্থান জগৎ গৌরী তলা নামে খ্যাত।বিখ্যাত তান্ত্রিক সাধক দুর্গদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেই তান্ত্রিক সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
বৈদ্যপুর অঞ্চলে রথযাত্রা মহা ধুমধামে অনুষ্ঠিত হয়। বৈদ্যপুরের অনতি দূরে দত্তদাড়িয়াটন স্বামীজির পৈতৃক ভিটে। এই অঞ্চলকে ঘিরে গ্রামীন পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানোও সম্ভব।

সমাপ্ত
--------------------