ই তোদের কেমন স্বাধীনতা .....✍অনিমেষ সূত্রধর
কবিতা
ই তোদের কেমন স্বাধীনতা
অনিমেষ সূত্রধর
পতাকা তুলে একটা কেক দিয়েই ছেড়ে দিলি?
আজও পেট ভরে দুটি ভাত পাবোনি?
ই তোদের কেমন স্বাধীনতা ?
রাগে গরগর করতে করতে
কথাগুলো বলেছিল হারান বাগদি।
সাত পুরুষের চাষের জমি
খেয়ে নিল কারখানা আর রেল
ডাকসাইটে নেতা কালীপদ বুঝিয়েছিল
এ হল দ্যাশের কাজ।
হারান বাগদি ভাঙা ঘরের দাওয়ায় বসে ভাবে
দাদুটা ইংরেজের গুলি খেইয়ে মরেছিল
বাপটা কুতোবার ইংরেজের জেল খাইটল
সিটাও তো ছিল দ্যাশের কাজ
তবে বাপটা কেন মইরল
টিবি রোগে না খেতি পেইয়ে?
ই তোদের কেমন স্বাধীনতা?
হারান বাগদির ছেলে পরাণ,
বয়স ছয় কি সাত ,কাল থেকে উপোস
ভোর হওয়ার আগেই খিদে তাকে জাগিয়ে দেয়,
হারান বলে, "এত সকাল সকাল উইঠে পড়লি?"
পরাণ বলে, "বাপ খুব খিদে পেইয়েছে"
হারান বেড়ার থেকে একটা কঞ্চি ভেঙে
পরাণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
"ইটাতে ছোট্ট পতাকা লাগিয়ে লিবি
এক ছুটে চইলে যা হু--ই মাঠে,
যিখেনে বাবুরা পতাকা তুইলছে,
স্বাধীনতা পালন কইরছে সিখেনে"।
পরাণ বলে ,"খিদেয় পেট জ্বইলছে বাপ
উখানে গেলে খেতি দিবে?"
হারান বলে,"সব দিবে ,কেক দিবে মিষ্টি দিবে"
পরাণ একদৃষ্টে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
"ভাত দিবেক? কাইল থিকে যে ভাত খাই নাই"
হারান বলে ,"সব সব সব দিবেক ছুইটে যা"
ভাতের লোভে ছুটতে থাকে পরাণ
হারান কাটারি হাতে দাওয়ার পাশে গিয়ে
ঝোপ জঙ্গল কেটে, স্বাধীনতা সংগ্রামী
বাবা ও দাদুর স্মৃতিফলকটা পরিষ্কার করে,
কাক ও কুকরের বিষ্ঠা জল দিয়ে ধুয়ে দিয়ে
ফুল দেয়,
গাল বেয়ে টপ টপ করে জল পড়ে,
বলে," কিসের লেগে তুরা মইরতে গেছিলি?
দেখ বাপ দেখ তোর নাতিটা ভাতের লেগে
ঠায় দাঁইড়ে আছে বাবুদের দোরে।
তুরা এনেছিস স্বাধীনতা,
আর উয়ারা লিচ্ছে পকেট ভরে।
ই তোরা কি স্বাধীনতা আইনলি বাপ?
পিছন থেকে পরাণ ডাকে," বাপ"
হারান ঘুরে দেখে পরানের হাতে কেক
বলে ,"কয়েছিলাম না কেক দিবেক মিষ্টি দিবেক"
পরাণ বলে ,"মিষ্টি দেয় নাই বাপ,
বইলল মিষ্টি তোদের লেগে লয়, বাবুদের লেগে।"
হারান পরানকে জড়িয়ে ধরে, দুচোখে জল,
পরাণ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলে,
"ভাত রাঁইধছে কিন্তু দিলে নাই ,
বইলল
ই বাবুদের ফিষ্টির ভাত,
দিলে কম পইড়ে যাবে,
বলে বাপকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে অভিমানে।
সূর্য তখন মধ্য গগনে
বাবুরা বসেছে ভাতের থালায়
পরাণ চোখ মুছে বাপকে বলে,
"গরম ভাতের কি সুন্দর গন্ধ তাই নারে বাপ।"
--------------------