ট্যুরিস্ট থেকে ট্রাভেলার ....✍অয়ন দাস




ভ্রমণ

ট্যুরিস্ট থেকে ট্রাভেলার

অয়ন দাস


জালিয়ানওয়ালাবাগ

ইতিহাস যেখানে বেঁচে আছে

"I WISH TO STAND,SHORN,OF All SPECIAL DISTINCTIONS,BY THE SIDE OF THOSE OF MY COUNTRY MEN WHO,FOR THEIR SO CALLED INSIGNIFICANCE,ARE LIABLE TO SUFFER DEGRADATION NOT FIT FOR HUMAN BEINGS".
Rabindranath Tagore

এই চাবুকের মত চিঠিটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন লর্ড চেমসফোর্ড কে-যখন ইংরেজ সরকার তাঁকে নাইট উপাধি দেওয়ার কথা ঘোষণা করে এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করে কবিগুরু তা বর্জন করেন।

পাঞ্জাবে সেইসময় নেতা ছিলেন দুজন।সৈফুদ্দিন কিচলু ও ডাঃ সতপাল।হিন্দু মুসলমানের মধ্যে এহেন ঐক্য দেখে ভয় পেয়ে গেল ইংরেজ।আলোচনার নাম করে ডেকে এনে দুজনকেই আচমকা অ্যারেষ্ট করে নিল।এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠল পাঞ্জাব।শুরু হল হরতাল,সভা সমিতি।শহরে জারি হল কার্ফু।রাত আটটা থেকে কার্ফু অতএব বিকেলে জমায়েত হতে অসুবিধা নেই।কিন্তু ইংরেজ তখন খ্যাপা কুকুর।
১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল বিকেলবেলা।অমৃতসর শহরের কেন্দ্রস্থলের এই বিশাল উদ্যানে অসংখ্য নারী,পুরুষ ও শিশু সমবেত হয়েছেন তাদের অতি প্রিয় বৈশাখি উৎসব পালন করতে।গত রাত থেকেই শহরে চলছে কার্ফু।কার্ফু অমান্য করেই মানুষ মিলিত হয়েছেন উৎসবে।এই খবর গেল তৎকালীন পাঞ্জাবের প্রশাসনিক প্রধান Michael o dwer এর কাছে।সে লেফট্যানেন্ট জেনারেল ডায়ার কে নির্দেশ দিলো গুলি চালানোর।এই নির্দেশ পেয়ে রক্তলোলুপ বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়লো ডায়ার।গোর্খা বাহিনী নিয়ে উদ্যানের সমস্ত গেট বন্ধ করে দিয়ে টানা দশ মিনিট ধরে চলল নির্বিচার গুলিবর্ষন।নারী,পুরুষ,শিশু নির্বিশেষে প্রাণ হারালেন সহস্রাধিক মানুষ।
এর প্রতিবাদে সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল আগুন।রবীন্দ্রনাথ বর্জন করলেন নাইট উপাধি।বীজ বপন হল অসহযোগ আন্দোলনের।গান্ধীজী সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিলেন এই নারকীয় হত্যার খবর।



অমৃতসর শহরের কেন্দ্রে সবচেয়ে জনবহুল স্থানটির নাম নেতাজী স্কোয়ার।সেখানে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন নেতাজী।মূর্তিটি আমাদের শ্যামবাজারের মূর্তিটির থেকেও ঢের বড়।
সেই নেতাজী স্কোয়ারেই রয়েছে এই ঐতিহাসিক ও অভিশপ্ত জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যান।বিশাল এই উদ্যানটি ফুলে ফুলে ঢাকা।কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ কারন তারা এখানে ইতিহাস কে বাঁচিয়ে রেখেছেন।ভিতরের সেই ইঁটের দেওয়ালে এখনও গুলির দাগ।সেই দাগ গুলিকে মার্কিং করে রেখে দেওয়া হয়েছে।মনে হচ্ছে যেন গতকাল বা পরশু এখানে গুলি চলেছে।গুলির দাগ গুলি এত আশ্চর্যরকমের টাটকা।সেই অভিশপ্ত বিকেলে বহু মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য ঝাঁপ দিয়েছিলেন কুয়োতে।সেই কুয়ো গুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে অসহায় ভাবে,ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।কুয়োগুলির শরীরেও অজস্র গুলির দাগ।উদ্যানের ভিতরে একটি ঘর রয়েছে।সেই ঘরের মধ্যে অসহায় ভাবে লুকিয়ে ছিলেন মানুষেরা।সেই ঘরটির দেওয়াল গুলির দাগে একেবারে ঝাঁঝরা।মজার ব্যাপার হল প্রায় একশো বছর আগের তৈরি ঘরটিই কিন্তু এখনও রয়েছে।অতি জরাজীর্ন অবস্থায়।সেই কারনেই এখানে ইতিহাসের গন্ধ এত তীব্র।উদ্যানের এক জায়গায় প্রজ্জ্বলিত রয়েছে অগ্নিশিখা।শহীদদের উদ্দেশে।রয়েছে একটি শহীদ মিনার।সেই নিস্তব্ধ সকালে পবিত্র আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা স্মরণ করলাম শহীদ দের।তাঁদের মৃত্যুর মূল্যে আমরা আজ ভোগ করছি স্বাধীনতা।
এরপর গেলাম মিউজিয়ামে।সেখানে সমস্ত ইতিহাসকে ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।রয়েছে বিশ্বকবি র ছবি ও তৎসংলগ্ন ইতিহাস।রয়েছে লাইট এন্ড সাউন্ড এর মাধ্যমে ইতিহাস কে ফুটিয়ে তোলা।

রয়েছে আরো এক মহান বিপ্লবী উধম সিং এর ছবি।শ্রদ্ধেয় উধম সিং ১৯৪০সালের ১৩ই মার্চ ইংল্যান্ডের বুকে হত্যা করেছিলেন জালিয়ানওয়ালাবাগের নরহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া -১৯১৯ সালের পাঞ্জাবের প্রশাসনিক প্রধান মাইকেল ও ডোয়ার কে।জালিয়ানওয়ালাবাগের নরহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাইকেল ও ড্যয়ার কে বৃটিশ সরকার কুড়িহাজার পাউন্ড পুরস্কৃত করে এবং তাকে নাইট উপাধি সহ member of parliament নির্বাচিত করে।অপরদিকে সেই অভিশপ্ত বিকেলে ঐ উদ্যানে নিজের পরিবারবর্গকে চিরদিনের জন্য হারান কিশোর উধম সিং।নিজেও আহত হন।তাঁর মনে ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে প্রতিশোধের আগুন।
উধম সিং ইংলন্ডে যান উচ্চশিক্ষার্থে।সেদিন ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ।খোশমেজাজে মাইকেল ডয়ার বাড়ির থেকে বেরোনোর সময় বলল-পাঁচটায় ফিরে এসে চা খাব।কিন্তু সে জানতেও পারেনি একটি লোক তাকে ছায়ার মত অনুসরন করছে।ক্যাক্সটন হলে মিটিং শেষ হওয়ার পর স্যার ড্যয়ার যখন করমর্দনে ব্যস্ত সেই সময় এক বলশালী ভারতীয় যুবক সবার সামনে ছ ছটি গুলি ফুঁড়ে দিল ডয়ারের বুকে।উধমের কাছে পাওয়া গেছিল পঁচিশ বছরের পুরোনো একটি রিভলবার ও কার্তুজ।ফাঁসি হয়ে গেল শ্রদ্ধেয় উধম সিং এর।



মিউজিয়াম দেখে বেরিয়ে এলাম।এক নিস্তব্ধ সকালে আকাশে আচমকা হানা দিয়েছে কালো মেঘ।রহস্যময় এক শিরশিরে হাওয়া বইছে জালিয়ানওয়ালাবাগ জুড়ে।আমি কান পেতে অপেক্ষা করতে লাগলাম।ঐ তো..ঐতো শুনতে পাচ্ছি গুলির শব্দ...ঐতো শুনতে পাচ্ছি নারী ও শিশু কন্ঠের সুতীব্র আর্তনাদ...ঐতো শুনতে পাচ্ছি জেনারেল ডায়ারের অশ্লীল অট্টহাস্য।আমি চুপ করে বহুক্ষন স্থানুবৎ দাঁড়িয়ে রইলাম সেই প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার সামনে।
এইবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো এক মহান বিপ্লবীর মুখ।আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ১৯৪০ সালের এক আদালতের কাঠগড়া।সেখানে এক ইংরেজ রাজপুরুষ কে হত্যা করার অপরাধে এক ফাঁসির আসামি দৃপ্ত কন্ঠে বলে উঠছেন-"I DID IT BECAUSE I HAD A GRUDGE AGAINST HIM.HE DESERVED IT.HE WAS THE REAL CULPRIT.HE WANTED TO CRUSH THE SPIRIT OF MY PEOPLE.FOR FULL 21YEARS I HAVE BEEN TRYING TO WREAK VENGEANCE.I AM HAPPY THAT I HAVE DONE THE JOB.I AM NOT SCARED OF DEATH.I AM DYING FOR MY COUNTRY.I HAVE SEEN MY PEOPLE STARVING IN INDIA UNDER THE BRITISH RULE.I HAVE PROTESTED AGAINST THIS.IT WAS MY DUTY.WHAT A GREAT HONOUR COULD BE BESTOWED ON ME THAN DEATH FOR THE SHAKE OF MY MOTHER LAND".


(সমাপ্ত)

--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।