ব্যাগের ইতিকথা ....✍অনুভা নাথ




অন্যরকম

ব্যাগের ইতিকথা

অনুভা নাথ


আজ লিখবো ব্যাগের ইতিকথা।ব্যাগ ছাড়া আমাদের জীবন অচল।মনে আছে,খুব ছোটোবেলায় প্রথম স্কুলে যাওয়ার সময় আমাকে স্কুলব্যাগ কিনে দেওয়া হয়েছিল,সেটাই ছিল আমার প্রথম নিজের ব্যাগ,আমার রাজত্ব,যেটা আমি গোছাতাম,ব্যাগের মধ্যে তখন কত অপ্রয়োজনীয় জিনিস রাখতাম,হয়তো কোনো গাছের ফুল ভালো লেগে গেলো,সাথে সাথে সেটা ব্যাগস্থ করলাম।তারপর যখন আরও বড়ো হলাম তখন উঁচু ক্লাসের প্রয়োজনে আগের ব্যাগ বাতিল হলো। তারপর অনেকদিন পর সেই আগের ব্যাগ হাতের কাছে পেলাম।ব্যাগ খুলে দেখলাম,স্কুলে শিশুশ্রেণীর আমার এক বন্ধু আমার ওপর অভিমান করে চিরকুটে শিশু হাতে লিখেছিল "তোর সাথে আড়ি"।সেই মলিন হয়ে যাওয়া কাগজে ,নড়বড়ে হাতের লেখায়,প্রায় ছিন্ন চিরকুটটা ব্যাগের মধ্যেই থেকে গিয়েছিল।লেখাটা অনেক দিন পর এমন অবিশ্বাস্য ভাবে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগায় মনটা ভরে উঠেছিল।



আর একবার,আমরা দার্জিলিং গিয়েছিলাম,ওখানে যে হোটেলে ছিলাম সেখানকার আমাদের থেকে বয়সে অল্প বড়ো একজন দাজু ছিলো,দার্জিলিং এর স্থানীয় ভাষায় দাদাকে
"দাজু" বলা হয়।তো সেই দাজু আমাদের ভালোবেসে কিছু লজেন্স দিয়েছিলো,আমি ওই লজেন্সগুলো খাইনি,ওগুলো দাজুর স্মৃতিস্বরূপ আমার স্কুল ব্যাগে রেখে দিয়েছিলাম।বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর ব্যাগের পকেটের ওই জিপ্ খুলে দেখলাম,লজেন্সগুলো গলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে,খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।

প্রথম যখন চাকরী পেলাম তখন নিউ মার্কেটের ফুটপাত থেকে ব্যাগ কিনেছিলাম,আমার মতো shopaholic মাত্রই জানবে নিউমার্কেটের ফুটপাতে কত স্টাইলিশ ব্যাগ,সস্তায় পাওয়া যায়,তার ওপর অভাবনীয় দরদাম করা যায়, ৮০০/- টাকার ব্যাগ দরদাম করে ২০০/- টাকায় কেনার মজাই আলাদা।আমার এখনও মনে আছে নিউমার্কেট থেকে কেনা একটা অলিভ রংএর দারুন ব্যাগ নিয়ে অফিস যেতাম,একদিন অফিসে আমার সহকর্মী পেন হাতে অসাবধানবশতঃ ব্যাগের ওপর দাগ কেটে দিয়েছিলো,আমার মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো,পরবর্তীতে ওই ব্যাগটা আমাকে বাতিল করতে হয়েছিলো,আজও অলিভ রঙের কোনোও ব্যাগ দেখলে আমার ওই ব্যাগটার জন্য মনকেমন করে।



আমার এক আত্মীয়ার মুখে শুনেছিলাম, তাদের গার্লস স্কুলে এক একদিন হঠাৎ হঠাৎই ব্যাগ পরীক্ষা করা হতো, তখন বেচারীদের পেরেম পত্র টত্র সমেত খেয়ে ফেলতে হতো,ধরা পড়লে গার্জেন কল অনিবার্য ছিলো।
তো একদিন এরকম ব্যাগ পরীক্ষা হবে,আমার আত্মীয়ার বান্ধবী যথারীতি নব্য প্রাপ্ত প্রেম পত্রটি পেটস্থ করলো,স্কুলে তো সে ক্লিনচিট পেলো,কিন্তু প্রেমের প্রস্তাব না হয়ে যাওয়ায় তার প্রেমিকপ্রবর প্রেমপত্রটি ফেরত চাইলো,তখন মেয়েটিকে বলতে হলো সমস্ত ঘটনা,প্রেমিকটি হতাশ গলায় বললো, "ওই চিঠিটা আমি অনেক দামী কাগজে,দামী কলম দিয়ে লিখেছিলাম,চিঠিটা তাই সবাইকেই প্রেমের প্রস্তাব স্বরূপ পাঠাতাম,"না" হয়ে গেলে ফেরৎ নিয়ে নিতাম,তোমার জন্য সব নষ্ট হয়ে গেলো,আবার আমাকে একগাদা খরচ করতে হবে।" এইকথা শোনার পর মেয়েটি সেই ছেলেটির কি হাল করেছিলো তা অবশ্য আমি আর জানি না।
ব্যাগ বদলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিত্তানন্দ দত্তের মজার সিনেমা হলো "বাক্সবদল"। অপর্ণা সেন ও সৌমিত্র অভিনীত সিনেমাটি আমার বিশেষ ভাবে পছন্দের । তবে সব ব্যাগ গোছানো আনন্দের হয় না,জীবনের শেষের দিকে রবি ঘোষকে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলে বলতে শোনা যেতো " এই ব্যাগপত্তর গুছিয়ে বসে আছি,ট্রেন এলেই চলে যাবো"।ওঁনার আকস্মিক মৃত্যুর পর সবাই অবাক হয়েছিলেন,কিংবদন্তী অভিনেতা কি তবে বুঝতে পেরেছিলেন যে ওঁনাকে খুব তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে?



ব্যাগ নিয়ে আরও অনেক কথা বলা হলো না, আমাদের সকলের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে ব্যাগ,মানুষ হিসাবে তার প্রকারভেদ হয়,কখনও ভিক্ষার ঝোলা আবার কখনও স্টাইলের জন্য স্লিং ব্যাগ,তবে যেটাই হোক,ব্যাগ বাড়ির বাইরে আমাদের বাড়িরই একটি ক্ষুদ্র অংশ হিসাবে কাজ করে।

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।