প্রথম মহিলা ওলা বাইক চালক ....✍মৌসুমী চৌধুরী দাশগুপ্ত
অন্যরকম
গতির ছন্দে কলকাতা শাসন করছেন এ শহরের প্রথম মহিলা ওলা বাইক চালক রূপা চৌধুরী
মৌসুমী চৌধুরী দাশগুপ্ত
সোশাল মিডিয়ায় এক সহনাগরিকের করা পোস্ট থেকে তাঁর কথা জানা। তারপর শুরু খোঁজ। বেশি সময় লাগেনি অবশ্য খুঁজে পেতে। মেসেজ করে জিজ্ঞেস করলাম কখন ফোন করলে সুবিধে?
উত্তর এল, ‘সকাল ন’টার পরে।’ তার আগে ফুরসত হয় না তাঁর। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অধিকাংশ দিনই রাত বারোটা-একটা পেরিয়ে যায়। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটা-ন’টার মধ্যেই ফের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়া। কারণ বাইকের গতির সঙ্গেই বাঁধা হয়ে গেছে তাঁর জীবন। তিনি রূপা চৌধুরী, এ শহরের প্রথম মহিলা ওলা বাইক চালক।
একে মহিলা বাইকচালক, তার উপরে ওলা ড্রাইভার? চমক লাগা খুব স্বাভাবিক। ‘‘স্কুটি বুক করার পর কেউ যখন ফোন করে আমার গলা শোনেন, একটু থমকে যান। বলেন, ‘ওহ, আপনিই চালাবেন...’’, ফোনে বলছিলেন রূপা।
ওলার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে? ‘‘
আমি প্রথমে সুইগি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের হয়ে কাজ করতাম। কিন্তু সুইগিতে কাজ করার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তার পরে নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়। তাই ভাবছিলাম পরের সময়টুকু যদি কোনওভাবে কাজে লাগানো যায়,’’ বলছিলেন রূপা। সেই ভাবনা থেকেই যোগ দেন ওলায়। ‘‘আমি জানতাম মহিলাদের নেয় না ওলা, তবু মনে হল একবার চেষ্টা করি। দেখলাম, সেদিনই হয়ে গেল!’’ প্রসঙ্গত, সুইগিতেও প্রথম মহিলা ডেলিভারি গার্ল হয়ে যোগ দিয়েছিলেন রূপা। পরে তাঁর দেখাদেখি আরও অনেক মেয়ে যোগ দিয়েছেন সুইগিতে। এ দিক থেকে রূপাকে পথপ্রদর্শক বলা যায় বই কী!
বাইক চালানোর কাজ করেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, কিন্তু আলাদা করে সেজন্য কোথাও প্রশিক্ষণ নেননি রূপা। ‘‘আমি ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে খুব ভালোবাসতাম। তারপর একদিন স্কুটি কিনলাম। স্কুটি কেনার পরের দিনই রাস্তায় চালিয়েছিলাম, কোথাও শিখতে হয়নি।’’
স্কুটির সঙ্গে সেই প্রথম বন্ধুত্বের রেশ আজও জড়িয়ে রয়েছে রূপাকে।
সম্প্রতি কাজ নিয়েছেন র্যাপিডো নামে আর একটি বাইক অ্যাপে। ওলা বা র্যাপিডো, কোথাও ই কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। পাশাপাশি সুইগির কাজটাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনটে কাজ করতে গিয়ে একটা বাস্তব অসুবিধে অবশ্য হচ্ছে। ওলা বা র্যাপিডোর সওয়ারিকে যদি দূরে কোথাও ছাড়তে যেতে হয়, তা হলে সুইগির কাজটা আর করতে পারছেন না রূপা। তাই এই মুহূর্তে তাঁর চেষ্টা সুইগিকে বলে কাজটা যদি মর্নিং শিফটে করানো যায়।
সকালে বাড়ির ছোটখাটো কাজ শেষ করে বাইক নিয়ে সকাল আটটা-সাড়ে আটটার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন রূপা, গাড়ি চালান সেই রাত পর্যন্ত। ‘‘তবে যেদিন খুব গরম লাগে, এনার্জি থাকে না, সেদিন বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে বাড়ি ফিরি, তারপর আবার সন্ধের পর বেরোই।’’ এভাবেই কেটে যায় এক একটা দিন, মাস। এখনও পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি রূপাকে। তবে সেরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতাও রয়েছে তাঁর। ‘‘আত্মরক্ষার কিছু কিছু পদ্ধতি আমার নিজেরই জানা রয়েছে। সেলফ ডিফেন্সের একটা ট্রেনিংও নেব শিগগিরই।’’
সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বাইক চালাতে ভালো লাগে?
প্রশ্নটা শুনে এক মুহূর্তও ভাবলেন না রূপা। ‘‘আমি ড্রাইভিং করতে খুব ভালোবাসি। কখনও কাজ না থাকলে বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভেও বেরিয়ে পড়ি। তাই ভাবলাম আমার এই গাড়ি চালানোর ভালোবাসাটাকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় সীমাবদ্ধ না রেখে যদি কোনও কাজে লাগাতে পারি।’’
বাইক নিয়ে শহর চষে বেড়ানোর সুবাদে নিত্যনতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে যায় রূপার। ‘‘একবার এক যাত্রী যাদবপুর থেকে সাঁতরাগাছি গিয়েছিলেন। আমাকে বাইক চালাতে দেখে উনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। এমনকী, বাড়িতে পৌঁছোনোর পর পরিবারের সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন, আদরযত্ন করেছিলেন অনেক।’’ এই পারিবারিক ভালোবাসাটা অনেকের কাছ থেকেই পেয়েছেন রূপা যা তাঁকে প্রতিদিন আরও পথ চলার শক্তি জোগায়।
এই মুহূর্তে বাঘা যতীনের কাছে বিদ্যাসাগর এলাকায় এক বান্ধবীর সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন রূপা। ব্যক্তিগত জীবনে একের পর এক ঝড়ের মোকাবিলা করেছেন তিনি, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে হারিয়েছেন মা এবং দিদিকে। মা আর দিদির চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দিতে হয়েছে সন্তোষপুরের পৈত্রিক বাড়ি। এ বছরের গোড়ায় চলে গিয়েছেন বাবাও। টালমাটাল হয়ে গেছে নিজের বিবাহিত জীবনও। কিন্তু ব্যক্তিগত শোক দমিয়ে দিতে পারেনি অসমসাহসী এই মেয়েকে। নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করার চ্যালেঞ্জ চোখে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রূপা। ছোটবেলা থেকে জীবনে একের পর এক লড়াই লড়তে লড়তে হারিয়ে দিয়েছেন ভয় নামের অনুভূতিটাকে। ‘‘একা থাকার অভ্যেস আমার অনেকদিনের। অনেক কিছু ফেস করেছি জীবনে। ফলে আলাদা করে আর ভয় বলে কিছু নেই আমার। যা আসবে ভবিষ্যতে, বুঝে নেব,’’ সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন সাহসী মেয়ে।
এই মুহূর্তে রূপার চাওয়া একটাই, নিজের দশ বছরের ছেলেকে একটু কাছে পাওয়া। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে তাঁর, ছেলে তাঁর কাছে থাকে না। ‘‘এই যে আমাকে নিয়ে প্রচার হচ্ছে, সোশাল মিডিয়ায় আমি যে সাপোর্টটা পাচ্ছি, এ সব দেখে যদি ওরা ছেলেকে মাঝেমাঝে আসতে দেয় আমার কাছে,’’ মুহূর্তে সাহসিনী মেয়ের গলার স্বরে উঁকি দিয়ে যায় মায়ের আবেগ।
এ ছাড়া আর কোনও পরিকল্পনা?
‘‘সারাজীবন তো বাইক চালাতে পারব না। যখন আর ছুটতে পারব না, সেই সময়ের জন্য কিছু একটা ভাবতে হবে।’’

উত্তর এল, ‘সকাল ন’টার পরে।’ তার আগে ফুরসত হয় না তাঁর। বাড়ি ফিরতে ফিরতে অধিকাংশ দিনই রাত বারোটা-একটা পেরিয়ে যায়। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটা-ন’টার মধ্যেই ফের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়া। কারণ বাইকের গতির সঙ্গেই বাঁধা হয়ে গেছে তাঁর জীবন। তিনি রূপা চৌধুরী, এ শহরের প্রথম মহিলা ওলা বাইক চালক।
একে মহিলা বাইকচালক, তার উপরে ওলা ড্রাইভার? চমক লাগা খুব স্বাভাবিক। ‘‘স্কুটি বুক করার পর কেউ যখন ফোন করে আমার গলা শোনেন, একটু থমকে যান। বলেন, ‘ওহ, আপনিই চালাবেন...’’, ফোনে বলছিলেন রূপা।
ওলার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে? ‘‘
আমি প্রথমে সুইগি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের হয়ে কাজ করতাম। কিন্তু সুইগিতে কাজ করার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তার পরে নিজে থেকেই লগ আউট হয়ে যায়। তাই ভাবছিলাম পরের সময়টুকু যদি কোনওভাবে কাজে লাগানো যায়,’’ বলছিলেন রূপা। সেই ভাবনা থেকেই যোগ দেন ওলায়। ‘‘আমি জানতাম মহিলাদের নেয় না ওলা, তবু মনে হল একবার চেষ্টা করি। দেখলাম, সেদিনই হয়ে গেল!’’ প্রসঙ্গত, সুইগিতেও প্রথম মহিলা ডেলিভারি গার্ল হয়ে যোগ দিয়েছিলেন রূপা। পরে তাঁর দেখাদেখি আরও অনেক মেয়ে যোগ দিয়েছেন সুইগিতে। এ দিক থেকে রূপাকে পথপ্রদর্শক বলা যায় বই কী!
বাইক চালানোর কাজ করেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত, কিন্তু আলাদা করে সেজন্য কোথাও প্রশিক্ষণ নেননি রূপা। ‘‘আমি ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে খুব ভালোবাসতাম। তারপর একদিন স্কুটি কিনলাম। স্কুটি কেনার পরের দিনই রাস্তায় চালিয়েছিলাম, কোথাও শিখতে হয়নি।’’
স্কুটির সঙ্গে সেই প্রথম বন্ধুত্বের রেশ আজও জড়িয়ে রয়েছে রূপাকে।
সম্প্রতি কাজ নিয়েছেন র্যাপিডো নামে আর একটি বাইক অ্যাপে। ওলা বা র্যাপিডো, কোথাও ই কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। পাশাপাশি সুইগির কাজটাও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনটে কাজ করতে গিয়ে একটা বাস্তব অসুবিধে অবশ্য হচ্ছে। ওলা বা র্যাপিডোর সওয়ারিকে যদি দূরে কোথাও ছাড়তে যেতে হয়, তা হলে সুইগির কাজটা আর করতে পারছেন না রূপা। তাই এই মুহূর্তে তাঁর চেষ্টা সুইগিকে বলে কাজটা যদি মর্নিং শিফটে করানো যায়।
সকালে বাড়ির ছোটখাটো কাজ শেষ করে বাইক নিয়ে সকাল আটটা-সাড়ে আটটার মধ্যে বেরিয়ে পড়েন রূপা, গাড়ি চালান সেই রাত পর্যন্ত। ‘‘তবে যেদিন খুব গরম লাগে, এনার্জি থাকে না, সেদিন বিকেলে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে বাড়ি ফিরি, তারপর আবার সন্ধের পর বেরোই।’’ এভাবেই কেটে যায় এক একটা দিন, মাস। এখনও পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি রূপাকে। তবে সেরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতাও রয়েছে তাঁর। ‘‘আত্মরক্ষার কিছু কিছু পদ্ধতি আমার নিজেরই জানা রয়েছে। সেলফ ডিফেন্সের একটা ট্রেনিংও নেব শিগগিরই।’’
সারাদিন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বাইক চালাতে ভালো লাগে?
প্রশ্নটা শুনে এক মুহূর্তও ভাবলেন না রূপা। ‘‘আমি ড্রাইভিং করতে খুব ভালোবাসি। কখনও কাজ না থাকলে বন্ধুদের নিয়ে লং ড্রাইভেও বেরিয়ে পড়ি। তাই ভাবলাম আমার এই গাড়ি চালানোর ভালোবাসাটাকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় সীমাবদ্ধ না রেখে যদি কোনও কাজে লাগাতে পারি।’’
বাইক নিয়ে শহর চষে বেড়ানোর সুবাদে নিত্যনতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে যায় রূপার। ‘‘একবার এক যাত্রী যাদবপুর থেকে সাঁতরাগাছি গিয়েছিলেন। আমাকে বাইক চালাতে দেখে উনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। এমনকী, বাড়িতে পৌঁছোনোর পর পরিবারের সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন, আদরযত্ন করেছিলেন অনেক।’’ এই পারিবারিক ভালোবাসাটা অনেকের কাছ থেকেই পেয়েছেন রূপা যা তাঁকে প্রতিদিন আরও পথ চলার শক্তি জোগায়।
এই মুহূর্তে বাঘা যতীনের কাছে বিদ্যাসাগর এলাকায় এক বান্ধবীর সঙ্গে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন রূপা। ব্যক্তিগত জীবনে একের পর এক ঝড়ের মোকাবিলা করেছেন তিনি, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে হারিয়েছেন মা এবং দিদিকে। মা আর দিদির চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দিতে হয়েছে সন্তোষপুরের পৈত্রিক বাড়ি। এ বছরের গোড়ায় চলে গিয়েছেন বাবাও। টালমাটাল হয়ে গেছে নিজের বিবাহিত জীবনও। কিন্তু ব্যক্তিগত শোক দমিয়ে দিতে পারেনি অসমসাহসী এই মেয়েকে। নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করার চ্যালেঞ্জ চোখে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন রূপা। ছোটবেলা থেকে জীবনে একের পর এক লড়াই লড়তে লড়তে হারিয়ে দিয়েছেন ভয় নামের অনুভূতিটাকে। ‘‘একা থাকার অভ্যেস আমার অনেকদিনের। অনেক কিছু ফেস করেছি জীবনে। ফলে আলাদা করে আর ভয় বলে কিছু নেই আমার। যা আসবে ভবিষ্যতে, বুঝে নেব,’’ সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন সাহসী মেয়ে।
এই মুহূর্তে রূপার চাওয়া একটাই, নিজের দশ বছরের ছেলেকে একটু কাছে পাওয়া। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে তাঁর, ছেলে তাঁর কাছে থাকে না। ‘‘এই যে আমাকে নিয়ে প্রচার হচ্ছে, সোশাল মিডিয়ায় আমি যে সাপোর্টটা পাচ্ছি, এ সব দেখে যদি ওরা ছেলেকে মাঝেমাঝে আসতে দেয় আমার কাছে,’’ মুহূর্তে সাহসিনী মেয়ের গলার স্বরে উঁকি দিয়ে যায় মায়ের আবেগ।
এ ছাড়া আর কোনও পরিকল্পনা?
‘‘সারাজীবন তো বাইক চালাতে পারব না। যখন আর ছুটতে পারব না, সেই সময়ের জন্য কিছু একটা ভাবতে হবে।’’
সমাপ্ত
--------------------