আইনস্টাইন সম্পর্কে কিছু মজার ঘটনা




হাস্যরস

আইনস্টাইন সম্পর্কে কিছু মজার ঘটনা

সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন-


তার মাঝখানে মাঝে মাঝে হঠাৎ দেখতে পেতুম বুড়ো আইনস্টাইন, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলেছেন ক্লাস নিতে। আলুথালু কেশ, লজঝড় বেশ। কোন খেয়ালে মগ্ন ছিলেন খোদায় মালুম। শেষ মুহূর্তে টনক নড়েছে সেদিন তাঁর ক্লাস আছে- রুম নম্বর গিয়েছেন ভুলে, কী পড়াতে হবে খেয়াল নাই। ছেলেরা সমীহভরে পথ করে দিত আর বুড়ো আইনস্টাইন ঘণ্টায় ত্রিশ মাইল বেগে তাবৎ ইউনিভার্সিটি-বিল্ডিং চষে বেড়াতেন আপন রুমের সন্ধানে। মুখে শুধু ‘পারদোঁ, পারদোঁ’ (মাফ করুন, মাফ করুন), কারণ জানেন, কলিসন লাগলে দোষ তাঁরই।
(‘বাংলার গুণ না জার্মান গুণী’)

এমনই ছিলেন আইনস্টাইন। তাঁর বিজ্ঞানী খ্যাতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে, তাঁর সম্বন্ধে প্রচলিত কিংবদন্তিতুল্য ‘গপ্পো’ গুলি। তার দু’একটি নমুনা পেশ করা হল-



১) আইনস্টাইন যতই প্রতিভাধর হন সৈয়দ মুজতবা আলী যেমন বলেছেন তেমনই, ভুলে যাবার ‘রোগ’ ছিল তাঁর। তখন তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। আইনস্টাইন ট্রেনে সওয়ার। টিকিট-চেকার এলেন তাঁর কাছে। আইনস্টাইন পকেট দেখলেন, ব্রিফকেস দেখলেন, ফাইলপত্তর উল্টে-পাল্টে দেখলেন। কোথাও তাঁর ট্রেনের টিকিটটি খুঁজে পেলেন না। ভাগ্য ভালো, চেকার তাঁকে চিনতে পেরেছিলেন। তিনি বললে, ‘আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি চিন্তা করবেন না না।’ কিন্তু আইনস্টাইনকে নিরস্ত করা গেল না। তিনি টিকিটটি খুঁজেই চললেন। তখন চেকার আবার বললেন, ‘প্রোফেসর, আপনার টিকিট লাগবে না।’ তখন অপ্রস্তুত আইনস্টাইন চিন্তিত স্বরে বললেন, ‘আপনার লাগবে না জানি। কিন্তু আমার তো লাগবে। নাহলে বুঝতেই পারছি না, কোথাও যাব বলে ট্রেনে উঠেছি।’



২) এও প্রিন্সটনের সময়কার ঘটনা। একদিন ট্যাক্সি ধরে বাড়ি ফেরার পথে আচমকাই নিজের বাড়ির ঠিকানা ভুলে যান। বাধ্য হয়ে ড্রাইভারকে বলেন, ‘আপনি আইনস্টাইনের বাড়ি চেনেন? নিয়ে যেতে পারবেন?’ ড্রাইভার উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ। তাঁর বাড়ি কে না চেনে? আপনি কি ওঁর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন?’ আইনস্টাইন তখন অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে বলেন, ‘আমিই আইনস্টাইন।’

৩) আইনস্টাইন ও তাঁর ড্রাইভার- এটিই সম্ভবত আইনস্টাইনকে নিয়ে সবথেকে বিখ্যাত গল্প। আপেক্ষিকতাবাদ আবিষ্কারের পর, আইনস্টাইনকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে বক্তৃতা দিতে হত। সবক্ষেত্রেই তাঁর সঙ্গে থাকত, তাঁর ড্রাইভার। তিনিও দর্শকাসনে বসে আইনস্টাইনের বক্তৃতাগুলি মন দিয়ে শুনতেন। সেই ড্রাইভার একদিন বলে বসেন, ‘স্যর, আপনি সব জায়গায় গিয়ে একই কথা বলেন। শুনে শুনে আমারও সব মুখস্ত হয়ে গেছে।’ এটা শুনে আইনস্টাইন মাথায় একটি দুষ্টু বুদ্ধি আসে। পরের সেমিনারে, তিনি নিজে মঞ্চে না উঠে, ড্রাইভারকে নিজের মতো সাজিয়ে বক্তৃতা দিতে পাঠিয়ে দেন। সেসময় অবশ্যই এখনকার মতো ফটোগ্রাফি বা সোশ্যাল মিডিয়ার চল ছিল না, বলাই বাহুল্য। ফলে বুদ্ধিটি কাজে লাগে।



আইনস্টাইন ড্রাইভার সেজে দর্শকাসনে বসে থাকেন এবং তাঁর ড্রাইভার আইনস্টাইন সেজে বক্তৃতা দিতে থাকেন। মহান বিজ্ঞানী সবিস্ময়ে দেখেন, তাঁর ড্রাইভার একেবারে তাঁর ভাব-ভঙ্গি নকল করে, যথাযথ বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, সমস্যার উৎপত্তি হয় শেষে। বক্তৃতা শেষে এক ভদ্রলোক নকল আইনস্টাইনকে একটি প্রশ্ন করে বসেন। এটা শুনেই প্রকৃত আইনস্টাইন বুঝে যান, এবার তাঁদের সবাই ধরে ফেলবে কারণ ড্রাইভারের পক্ষে তাঁকে নকল করা সম্ভব হলেও, কোনও জটিল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু, মঞ্চের নকল আইনস্টাইন এতে আদৌ ঘাবড়ে যাননি। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘আপনি এই ছোট্ট বিষয়টা বুঝতে পারেননি? দাঁড়ান, আমার ড্রাইভারকে ডাকি। সেও এটা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে।’ আইনস্টাইন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ড্রাইভারের উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা করেন। নাহ, এমন বুদ্ধি তাঁর মাথাতেও আসেনি।

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।