ওরাছেলেধরা সন্দেহে মারল ....✍প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র




ছোটগল্প

ওরাছেলেধরা সন্দেহে মারল

প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র

শীতটা কিছুটা কমেছে। চল শুভ দুই বন্ধু মিলে একটু এদিক ওদিক পাক মেরে আসি। সারা দিন মজা করব খুব। সংসার আর অফিসের কাজে ব্যতিব্যস্ত। কিচ্ছু ভালো লাগে না। বাইকটা কোন এক জায়গায় রেখে আলপথ ধরে দুজনে খোশ মেজাজে হারিয়ে যাব নদীর ধারে। চল যাবি? এক নাগাড়ে ফোন ধরে কৌশিক কথাগুলি বলে গেল।

কৌশিক একটু বেরসিক, সব সময় কি সব যেন চিন্তা করে । অথচ কাউকে ওর চিন্তার ভাগ দেয় না। মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতেই শুভ রাজি হয়ে গেল। কৌশিক তো এমন আবদার কখনো করে না।

সকালে উঠে দুই বন্ধু বাইকে জ্বালানি ভরে বেরিয়ে পড়ল উদ্দেশ্যহীন পথে। শহর ,গ্রাম ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূরে গ্রাম্য পথে একঘেয়েমির বাইরে।



মাঝে দুপুরের সময় একটি ধাবায় দুপুরের আহার সেরে স্থানীয় একজনের কাছে শুনল কিছুটা দূরেই লাল মোরামের রাস্তা ধরে এগুলে একটি নদী পড়বে। ওখানে ভালো লাগবে। তাই লোভ সামলাতে না পেরে কৌশিক শুভকে বলল বাইক ঘুরিয়ে ওই রাস্তায় যেতে। শুভর মন না চাইলেও কৌশিকের আবেদন নাকচ করতে পারে নি। কারন অনেক বছর পরে এমন সুযোগ। এদিকে মেঘলা আকাশ। সূর্য ডুবতেও বেশি দেরি নেই।

নদীর ধারে ওরা যখন পৌঁছালো তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে। কিছুক্ষন ঘোরাঘুরির পর শুভ বলল “চল কৌশিক এবার ফেরা যাক”।কিছুক্ষনের মধ্যেই সন্ধ্যা নামবে।
দূরের গ্রাম গুলি থেকে শাঁখের আওয়াজ ভেসে আসছে একটি দুটি। সামনের গ্রামটি পেরুতেই পথের চৌমাতার মোড়ে কয়েকজন পথ আটকালো । কৌশিক একটু ঘাবড়ে গেল। কি ব্যাপার? এরা কেন রাস্তা আটকাচ্ছে। শুভ বাইক ধীরে করে দাঁড়িয়ে গেল।
এরপর একে একে প্রশ্ন-
কি ব্যাপার? কোথায় বাড়ি তোদের? এদিকে কোথায় গিয়েছিলিস?



একজন বলল আগে তো কখনো এদিকে দেখিনি। অন্য একজন বলল, দেখছিস না মুখে দাড়ি। ছেলেধরা হবে হয়ত ।
এই সব চলতে চলতে শুভ উত্তর দেওয়ার আগেই একজন কৌশিককে বাইক থেকে নামিয়ে পেটাতে শুরু করল।
একজন পিছন থেকে শুভর মাথায় একটা বাঁশ দিয়ে আঘাত করলে শুভ কৌশিকের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই জ্ঞান হারালো।
এদিকে পাশেই পুলিশ চৌকি থাকায় পুলিশ এসে যায়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে শুভ ও কৌশিককে ৫কিমি দূরে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথেই মৃত্যু হয় শুভর। কৌশিকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। রাতেই মহকুমা হাসপাতালে রেফার করে কৌশিককে। আজ কৌশিক কথা বলছে। তবে একটু সুস্থ হতেই জিজ্ঞাসা করে শুভ কোথায়? কেমন আছে?
উত্তর দিই শুভ ভালো আছে। এখন শুভ ঘুমাচ্ছে। তাই কথা বলতে পারবে না।

মৃত্যুর সময় শুভ বলেছিল “ওরা ছেলেধরা সন্দেহে আমাদের মারছিল। আমাদের কথা একটুও শুনল না ”।

(সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে কাল্পনিক গল্প)

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।