মিসড কল ....✍প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
ছোটগল্প
মিসড কল
প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
মধুপর্ণা ও সুপ্রিয়র মধ্যে বেশ কদিন ছাড়ো ছাড়ো ভাব। এতে মধু ভীষন মানসিক কষ্ট পাচ্ছে। দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা থাকলেও সন্দেহের বসে মধুই সুপ্রিয়র সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করেছে। মাত্র দুবছর বিয়ে হয়েছে ওদের। এখনও কোন বেবি নেয়নি।
সুপ্রিয় জেদের বসে কথাও বলছে না। বেশিরভাগ দিন এমন হলে ওই ,গায়ে পরে ভাব করে। অথচ এবার প্রায় ৫ দিন হয়ে গেল কোন কথা নেই দুজনের। মধুর রাতে ঘুম ও ঠিকমত হচ্ছে না। হাল্কা শীত পড়লেও লেপের ভিতর কেমন যেন ঘেমে যাচ্ছে।
এইভাবে বেশ কদিন চলার পর মধুপর্ণা ভাবল সম্পর্ক টাকে স্বাভাবিক করতে হবে।
সেদিন সন্ধ্যায় সুপ্রিয় অফিস থেকে ফেরার পর মধু সুপ্রিয়কে চা বিস্কুট দিয়ে পাশে বসল।
এ কথা সে কথা বলেই যায়, সুপ্রিয় কোন উত্তর দেয়না । মধু ওকে জড়িয়ে ধরে। সুপ্রিয় উঠে দাঁড়ায়।
মধু সুপ্রিয়কে বলে রাগ করেছ? এমন করছ কেন?
অন্যায় হয়েছে আমার। আসলে সেদিন ওই মিসড কলটা বারবার আসায় আমি তোমার ফোনটা থেকে একবার রিং করেছিলাম। কিন্তু উল্টোদিকে যিনি ফোন ধরলেন তিনি কোন উত্তর না দিয়েই কেটে দিলেন ফোন।
আমার তখনই ভয় হয়। কে উনি। বারবার মিসড কল করছেন? অথচ আমি ফোন করে হ্যালো বলে জানতে চাইলেও উনি কোন উত্তর দিলেন না।
এদিকে নম্বরটিও তোমার ফোনে সেভও করা নেই।
সুপ্রিয় রেগে যায়। মধুকে বলে শোন মধু কে কখন মিসড কল করছে তা আমি কি করে জানব বলো। অবিশ্বাস তোমার নেচার, এর আগেও কয়েকবার অশান্তি করেছ। অবিশ্বাস নিয়ে সংসার করা যায় না। এটা তুমি ঠিক করছ না। আর আমায় যে চিনবে সে আমায় ফোন করেই কথা বলবে। অযথা মিসড কল কেন করবে?
মধুর মনে তবুও চিন্তা যায় না। সুপ্রিয়কে বলে, আচ্ছা সুপ্রিয় আমি তোমার কে? অর্ধাঙ্গিনী তো?
স্ত্রীকে কোন কিছুই লুকাতে নেই। এতে সংসারে অশান্তি বাড়ে বৈ কমে না।
সুপ্রিয় শান্ত হয়ে বলে তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী ঠিকই, কিন্তু তোমার মনের অবিশ্বাস তোমায় দিন দিন আমার থেকে দূরে সরিয়েছে। এই ভাবে সংসার করা যায় না। সারা দিন অফিসে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। একটা লোককে চারটি লোকের কাজ করতে হয়। জুতা সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ। নতুন নিয়োগ নেই। তারপরে বাড়ি এসে যদি তুমি মুখ গোমড়া করে থাক, অশান্তি করো তাহলে কোন পুরুষ মানুষটির ভালো লাগে বলো তো? আর আমি যদি খারাপ কিছু করিও তুমি কি তা বুঝতে পারবে? কথা গুলি এক নিঃশ্বাসে বলে চলল সুপ্রিয়।
শান্ত ঘর।
কিছুক্ষন পরে সুপ্রিয় বাইরে বেরিয়ে যায় আড্ডায়। মন ভারাক্রান্ত। বন্ধুদের সাথেও কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এক কাপ চায়ের চুমুক দিয়ে মনে হলো জানতে কে বারবার মিসড কল করছে। কেনই বা কথা বলছে না। একবার দেখতে হবে।
অন্য নম্বর থেকে ফোন করল সুপ্রিয়।
হ্যালো। বিমল বাবু আছেন?
(আসলে বিমল নামটি যাস্ট সুপ্রিয়র ভাবনা। কারন শুধু হ্যালো বললে অন্য দিকে নীরব থেকেছে মধু যখন ফোন করেছিল। তাই একজন পুরুষের খোঁজ নেওয়া)
(এবার ফোনের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এল)
আপনি কে বলছেন?
এবার মহিলা কন্ঠ। একটু ঘাবড়ে গেল সুপ্রিয়। অনভিপ্রেত প্রশ্ন। সুপ্রিয় উত্তর দেয় -আমি ,আমি বলছি।
বিমল নামে তো কেউ নেই। রং নম্বর।
সুপ্রিয় শুনুন কাটবেন না। আপনি আমার অন্য একটি নম্বরে বারে বারে রিং করছেন । আমার নাম সুপ্রিয় । আপনি কে?
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ভদ্রমহিলা বললেন সুপ্রিয় আমি। আমি রেবা।
চিনতে পেরেও না চিনতে পারার ভান করছে সুপ্রিয়। রেবা ফোন কেটে দেয়।
বাড়ি ফেরে সুপ্রিয়। ওর চিন্তা বেড়ে যায়। এত দিন পরে রেবা কেন ফোন করছে। নম্বর কোথায় পেল। আবার যদি ফোন করে এই সময় তাহলে তো বাড়িতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ঘেমে যায় সুপ্রিয়।
মধু এসে জিজ্ঞাসা করে, কি হলো অসময়ে শুয়ে আছো। শরীর ঠিক তো?তুমি ঘামছ কেন? স্যরি আমি আর তোমায় সন্দেহ করব না। সোনা ,আমি বুঝেছি তুমি এই কদিন খুব দুঃখ পেয়েছ। এসো ডিনার করে নাও।
একটা কথা বলব তোমায়?
সুপ্রিয় বলে বলো। কি বলবে?
এমাসে জানো এখনও আমার পিরিয়ড হয়নি। এদিকে দেখ মাস শেষ হতে চলল। প্রায় ১০ দিন আগেই হওয়ার কথা। ভগবান বোধহয় মুখ তুলে চেয়েছে।
সেই রাত্রেও ফোনটি কয়েকবার বেজে উঠেছিল। মধু গভীর ঘুমে সেই আওয়াজ শুনতে না পেলেও সুপ্রিয় শুনেছিল। সারা রাত সুপ্রিয় সেদিন ঘুমাতে পারেনি। চোখ বুজলেই বারেবারে ভেসে উঠছিল রেবার মুখ।
পরের দিন অফিস যাবার সময় বাড়ির বাইরে বেরিয়েই সুপ্রিয় রেবার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী শেফালীকে ফোন করে । সব কথা খুলে বলার আগেই শেফালী খবর দেয় গত সপ্তাহে রেবা সুসাইড করেছে। ওর স্বামীর সাথে কোন অশান্তির কারণেই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নেয়। আসলে ওর উপর শ্বশুরবাড়িতে খুব মানসিক অত্যাচার ছিল। সে সব কথা শেফালিকেও মৃত্যুর আগের দিন সব বলে। তখন বুঝতে পারে নি শেফালী, রেবা এত বড় সিদ্ধান্ত নেবে।
সুপ্রিয়র ফোন নম্বর বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র শেফালীর জানা ছিল। রেবা চেয়েছিল সুপ্রিয়কেও সব কথা জানাতে। কারন সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ওরাই ছিল একাত্মার বন্ধু।
সুপ্রিয় র চোখে জল এলো। রেবার মৃত্যু কষ্টের একথা ভেবে । ভয় হলো এইভেবে মৃত্যুর পরও রেবা কি বলতে চায়। আজও প্রতি রাতে -ই আসে রেবার মিসড কল। রেবা কিছু বলতে চায়।
মধুও সব জেনে আর সন্দেহ করে না সুপ্রিয়কে।
বেশ কদিন আর মিসড কল নেই। এদিকে সুপ্রিয়- র মন ভালো নেই। শৈশব থেকে কৈশোর অনেক কটি বছর আড্ডা ইয়ার্কি করে কাটিয়েছে ওরা । তেমনই এক বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও হঠাৎ মৃত্যুর খবর কার ভালো লাগে?
মন ভারাক্রান্ত। শেফালীর কাছে শুনেছে সংসারে অশান্তির কারণেই রেবাকে সুসাইডে- র সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অফিসে বসে এসব চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ আসে সেই অজানা নম্বরের কল।
হ্যালো…
আমি রেবা বলছি।
কাঁপা গলায় সুপ্রিয় ফোন ধরে ।
এক নাগাড়ে রেবা বলে চলে, আমি শান্তি পাচ্ছি না। তাই তোকে বারেবারে ডিস্টার্ব করছি। আমার একমাত্র মেয়ে ওদের কাছে। ওর জন্মের পর থেকেই আমার শ্বশুর বাড়িতে ওরা আমাকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু কি করব বল?
কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ার জন্য আমার কি দোষ বল?
ওরা ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা হতে দিইনি। হয়ত ওরা ওকে মেরে দেবে।
জানিস সবাই ভেবেছে যে আমি সুসাইড করেছি। কিন্তু না রে আমি সুসাইড করি নি। ওরাই আমায় খুন করেছে। গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম।
আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী ,কন্যাকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে। কিন্তু দেখ ওরা আমায় বাঁচতে দিল না।
তুই আমার ভালো বন্ধু। আমি বিশ্বাস করতাম তোকে, ভরসা করি। তুই যেমন করে হোক আমার কন্যা শ্রী-কে বাঁচা।
তোর কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি। প্লিজ ওকে বাঁচা। তবেই আমার আত্মা শান্তি পাবে। আমি বেঁচে থাকতে চাই শ্রী-এর মধ্যে। প্লিজ।
ফোন কেটে যায়।
এর পর সুপ্রিয় এক মুহূর্ত দেরি করে নি। নিজে বিডিও। তাই থানায় ফোন করে বড় বাবুকে নির্দেশ দেন সঠিক তদন্তের।
পুলিশ সেদিনই রেবার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে সকলকে গ্রেপ্তার করে ও নতুন করে জি. ডি লেখে। উদ্ধার করে শ্রীকে।
শ্রী এখন সুপ্রিয়র তত্বাবধানে। শ্রী মা পেয়েছে। মধুপর্ণার ভালোবাসা আজ শ্রীকে মায়ের কোল দিয়েছে।
সুপ্রিয় জেদের বসে কথাও বলছে না। বেশিরভাগ দিন এমন হলে ওই ,গায়ে পরে ভাব করে। অথচ এবার প্রায় ৫ দিন হয়ে গেল কোন কথা নেই দুজনের। মধুর রাতে ঘুম ও ঠিকমত হচ্ছে না। হাল্কা শীত পড়লেও লেপের ভিতর কেমন যেন ঘেমে যাচ্ছে।
এইভাবে বেশ কদিন চলার পর মধুপর্ণা ভাবল সম্পর্ক টাকে স্বাভাবিক করতে হবে।
সেদিন সন্ধ্যায় সুপ্রিয় অফিস থেকে ফেরার পর মধু সুপ্রিয়কে চা বিস্কুট দিয়ে পাশে বসল।
এ কথা সে কথা বলেই যায়, সুপ্রিয় কোন উত্তর দেয়না । মধু ওকে জড়িয়ে ধরে। সুপ্রিয় উঠে দাঁড়ায়।
মধু সুপ্রিয়কে বলে রাগ করেছ? এমন করছ কেন?
অন্যায় হয়েছে আমার। আসলে সেদিন ওই মিসড কলটা বারবার আসায় আমি তোমার ফোনটা থেকে একবার রিং করেছিলাম। কিন্তু উল্টোদিকে যিনি ফোন ধরলেন তিনি কোন উত্তর না দিয়েই কেটে দিলেন ফোন।
আমার তখনই ভয় হয়। কে উনি। বারবার মিসড কল করছেন? অথচ আমি ফোন করে হ্যালো বলে জানতে চাইলেও উনি কোন উত্তর দিলেন না।
এদিকে নম্বরটিও তোমার ফোনে সেভও করা নেই।
সুপ্রিয় রেগে যায়। মধুকে বলে শোন মধু কে কখন মিসড কল করছে তা আমি কি করে জানব বলো। অবিশ্বাস তোমার নেচার, এর আগেও কয়েকবার অশান্তি করেছ। অবিশ্বাস নিয়ে সংসার করা যায় না। এটা তুমি ঠিক করছ না। আর আমায় যে চিনবে সে আমায় ফোন করেই কথা বলবে। অযথা মিসড কল কেন করবে?
মধুর মনে তবুও চিন্তা যায় না। সুপ্রিয়কে বলে, আচ্ছা সুপ্রিয় আমি তোমার কে? অর্ধাঙ্গিনী তো?
স্ত্রীকে কোন কিছুই লুকাতে নেই। এতে সংসারে অশান্তি বাড়ে বৈ কমে না।
সুপ্রিয় শান্ত হয়ে বলে তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী ঠিকই, কিন্তু তোমার মনের অবিশ্বাস তোমায় দিন দিন আমার থেকে দূরে সরিয়েছে। এই ভাবে সংসার করা যায় না। সারা দিন অফিসে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। একটা লোককে চারটি লোকের কাজ করতে হয়। জুতা সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ। নতুন নিয়োগ নেই। তারপরে বাড়ি এসে যদি তুমি মুখ গোমড়া করে থাক, অশান্তি করো তাহলে কোন পুরুষ মানুষটির ভালো লাগে বলো তো? আর আমি যদি খারাপ কিছু করিও তুমি কি তা বুঝতে পারবে? কথা গুলি এক নিঃশ্বাসে বলে চলল সুপ্রিয়।
শান্ত ঘর।
কিছুক্ষন পরে সুপ্রিয় বাইরে বেরিয়ে যায় আড্ডায়। মন ভারাক্রান্ত। বন্ধুদের সাথেও কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এক কাপ চায়ের চুমুক দিয়ে মনে হলো জানতে কে বারবার মিসড কল করছে। কেনই বা কথা বলছে না। একবার দেখতে হবে।
অন্য নম্বর থেকে ফোন করল সুপ্রিয়।
হ্যালো। বিমল বাবু আছেন?
(আসলে বিমল নামটি যাস্ট সুপ্রিয়র ভাবনা। কারন শুধু হ্যালো বললে অন্য দিকে নীরব থেকেছে মধু যখন ফোন করেছিল। তাই একজন পুরুষের খোঁজ নেওয়া)
(এবার ফোনের অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এল)
আপনি কে বলছেন?
এবার মহিলা কন্ঠ। একটু ঘাবড়ে গেল সুপ্রিয়। অনভিপ্রেত প্রশ্ন। সুপ্রিয় উত্তর দেয় -আমি ,আমি বলছি।
বিমল নামে তো কেউ নেই। রং নম্বর।
সুপ্রিয় শুনুন কাটবেন না। আপনি আমার অন্য একটি নম্বরে বারে বারে রিং করছেন । আমার নাম সুপ্রিয় । আপনি কে?
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর ভদ্রমহিলা বললেন সুপ্রিয় আমি। আমি রেবা।
চিনতে পেরেও না চিনতে পারার ভান করছে সুপ্রিয়। রেবা ফোন কেটে দেয়।
বাড়ি ফেরে সুপ্রিয়। ওর চিন্তা বেড়ে যায়। এত দিন পরে রেবা কেন ফোন করছে। নম্বর কোথায় পেল। আবার যদি ফোন করে এই সময় তাহলে তো বাড়িতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ঘেমে যায় সুপ্রিয়।
মধু এসে জিজ্ঞাসা করে, কি হলো অসময়ে শুয়ে আছো। শরীর ঠিক তো?তুমি ঘামছ কেন? স্যরি আমি আর তোমায় সন্দেহ করব না। সোনা ,আমি বুঝেছি তুমি এই কদিন খুব দুঃখ পেয়েছ। এসো ডিনার করে নাও।
একটা কথা বলব তোমায়?
সুপ্রিয় বলে বলো। কি বলবে?
এমাসে জানো এখনও আমার পিরিয়ড হয়নি। এদিকে দেখ মাস শেষ হতে চলল। প্রায় ১০ দিন আগেই হওয়ার কথা। ভগবান বোধহয় মুখ তুলে চেয়েছে।
সেই রাত্রেও ফোনটি কয়েকবার বেজে উঠেছিল। মধু গভীর ঘুমে সেই আওয়াজ শুনতে না পেলেও সুপ্রিয় শুনেছিল। সারা রাত সুপ্রিয় সেদিন ঘুমাতে পারেনি। চোখ বুজলেই বারেবারে ভেসে উঠছিল রেবার মুখ।
পরের দিন অফিস যাবার সময় বাড়ির বাইরে বেরিয়েই সুপ্রিয় রেবার সব থেকে প্রিয় বান্ধবী শেফালীকে ফোন করে । সব কথা খুলে বলার আগেই শেফালী খবর দেয় গত সপ্তাহে রেবা সুসাইড করেছে। ওর স্বামীর সাথে কোন অশান্তির কারণেই হয়ত এমন সিদ্ধান্ত নেয়। আসলে ওর উপর শ্বশুরবাড়িতে খুব মানসিক অত্যাচার ছিল। সে সব কথা শেফালিকেও মৃত্যুর আগের দিন সব বলে। তখন বুঝতে পারে নি শেফালী, রেবা এত বড় সিদ্ধান্ত নেবে।
সুপ্রিয়র ফোন নম্বর বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র শেফালীর জানা ছিল। রেবা চেয়েছিল সুপ্রিয়কেও সব কথা জানাতে। কারন সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ওরাই ছিল একাত্মার বন্ধু।
সুপ্রিয় র চোখে জল এলো। রেবার মৃত্যু কষ্টের একথা ভেবে । ভয় হলো এইভেবে মৃত্যুর পরও রেবা কি বলতে চায়। আজও প্রতি রাতে -ই আসে রেবার মিসড কল। রেবা কিছু বলতে চায়।
মধুও সব জেনে আর সন্দেহ করে না সুপ্রিয়কে।
দ্বিতীয় অধ্যায়
বেশ কদিন আর মিসড কল নেই। এদিকে সুপ্রিয়- র মন ভালো নেই। শৈশব থেকে কৈশোর অনেক কটি বছর আড্ডা ইয়ার্কি করে কাটিয়েছে ওরা । তেমনই এক বান্ধবীর সাথে যোগাযোগ না থাকলেও হঠাৎ মৃত্যুর খবর কার ভালো লাগে?
মন ভারাক্রান্ত। শেফালীর কাছে শুনেছে সংসারে অশান্তির কারণেই রেবাকে সুসাইডে- র সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অফিসে বসে এসব চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ আসে সেই অজানা নম্বরের কল।
হ্যালো…
আমি রেবা বলছি।
কাঁপা গলায় সুপ্রিয় ফোন ধরে ।
এক নাগাড়ে রেবা বলে চলে, আমি শান্তি পাচ্ছি না। তাই তোকে বারেবারে ডিস্টার্ব করছি। আমার একমাত্র মেয়ে ওদের কাছে। ওর জন্মের পর থেকেই আমার শ্বশুর বাড়িতে ওরা আমাকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার শুরু করে। কিন্তু কি করব বল?
কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ার জন্য আমার কি দোষ বল?
ওরা ওকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি তা হতে দিইনি। হয়ত ওরা ওকে মেরে দেবে।
জানিস সবাই ভেবেছে যে আমি সুসাইড করেছি। কিন্তু না রে আমি সুসাইড করি নি। ওরাই আমায় খুন করেছে। গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম।
আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী ,কন্যাকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে। কিন্তু দেখ ওরা আমায় বাঁচতে দিল না।
তুই আমার ভালো বন্ধু। আমি বিশ্বাস করতাম তোকে, ভরসা করি। তুই যেমন করে হোক আমার কন্যা শ্রী-কে বাঁচা।
তোর কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি। প্লিজ ওকে বাঁচা। তবেই আমার আত্মা শান্তি পাবে। আমি বেঁচে থাকতে চাই শ্রী-এর মধ্যে। প্লিজ।
ফোন কেটে যায়।
এর পর সুপ্রিয় এক মুহূর্ত দেরি করে নি। নিজে বিডিও। তাই থানায় ফোন করে বড় বাবুকে নির্দেশ দেন সঠিক তদন্তের।
পুলিশ সেদিনই রেবার শ্বশুর বাড়ি গিয়ে সকলকে গ্রেপ্তার করে ও নতুন করে জি. ডি লেখে। উদ্ধার করে শ্রীকে।
শ্রী এখন সুপ্রিয়র তত্বাবধানে। শ্রী মা পেয়েছে। মধুপর্ণার ভালোবাসা আজ শ্রীকে মায়ের কোল দিয়েছে।
সমাপ্ত
--------------------