লাস্ট হিট ....✍সোমনাথ ব্যানার্জী




গল্প

লাস্ট হিট

সোমনাথ ব্যানার্জী


কলকাতা ময়দানের এক প্রান্তে রোজ বিকালে এসে বসে রমেন। চুপচাপ বসে থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে। ময়দানে রোজ প্রচুর ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে কিন্তু রমেন কখনোই সেইদিকে তাকায় না। আকাশের দিকে তাকায় আর মাঝেমাঝে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আজও তেমনি বসে আছে। আচমকা তার বিহ্বল হয়ে থাকা অবস্থায় ব্যাঘাত ঘটলো। সে দেখলো কোথা থেকে এক টেনিস বল এসে ঠেকেছে তার পায়ের কাছে। কাঁপা কাঁপা হাতে সে বলটা তুললো। বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বলটার দিকে।



একটা ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল, একটা মাঠ, তাতে ক্রিকেট খেলা চলছে। রাজুর সাথে সে ব্যাট করছে। ওদের দুজনের শুধু ছয়-চার এর বন্যা চলছে।একদিকে রাজুর পুল সর্ট, হুক সর্ট অন্যদিকে রমেনের কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ। দর্শকরা সেদিন কত নেচেছিল, প্যালা দা আমগাছের একটা ডালে বসে কমেন্ট্রি করছিল, প্রত্যেক ছয়-চারে এত লাফাচ্ছিল যে শেষমেষ গাছের ডাল ভেঙে একেবারে ওদের দলের কিছু সমর্থকের ঘাড়ের উপর পড়ল। একে ওরা মাঠে রান খাচ্ছে তার রাগটা পুরো পড়ল প্যালা দার উপর। মারধোর করেনি কিন্তু সব জামাকাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল। কালু দা তার ষন্ডা মার্কা চেহারা নিয়ে গিয়ে একখানা বাজখাঁই হাঁক দিতেই সব প্যালা দা কে ছেড়ে দিলো। প্যালা দা তারপর ঐ অবস্থাতেই আবার কমেন্ট্রি শুরু করে দিল। সুদীপের শেষ ওভারটায় তো পাঁচ টা ছয় মারলো দুজনে মিলে। প্রথম দুটো রাজু তারপর সিঙ্গেল নিয়ে বাকি তিনটে রমেন। শ্রীরামপুরের টিমটাকে সেদিন ফাইনালে এই দুজনে মিলে গোহারান হারালো। ওদের বিখ্যাত টিকলুদা কলকাতা থেকে হায়ার করে এনেছিল। প্রচন্ড গতিতে বল করতো। কেউ খালি পায়ে ব্যাট করলে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে এমন টিপ করে বল করতো যে আঙুলের নখ টাকে উফরে দিতো আর জুতো পড়ে খেললে তার জন্য বাউন্স দিয়ে মুখে আঘাত করত। সম্পূর্ণ পারদর্শী ব্যাটসম্যান না হলে খেলা মুসকিল হতো। অমন বোলার সে বার ৪ টি ওভারে রান খাওয়ায় লেটার মার্কস পেয়েছিল। কিছুতেই কিছু করা যায়নি। দুবারের চ্যাম্পিয়ন কে হারিয়ে তারাতলা ক্লাব কাপ জিতে নেয়। কাপ নিয়ে যে যার বাইকে ফিরবে। ফেরার পথে বাইকে ওঠার সময় রমেন বলল, "লাস্ট হিটের বল টা আমায় এনে দে তো, নিয়ে যাবো।" রাজু বলল," অটোগ্রাফ নিবি নাকি দাদা, টিকলুদার থেকে?" রমেন বলল, "ধুর, তোর আর আমার সর্ট নাম লিখে রাখবো।



রাজুর বাইকে ফেরার সময় রমেন বলটা হাতেই রেখেছিল। ওরা খেলার কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ বাচ্চা একটা ছেলে বাইকের সামনে এসে পরায় তাকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য দিকে একটা ট্রাকের সামনে এসে গেল ওদের বাইকটা। রাজু কে আবছা ভাবে দেখল রমেন শেষবারের মতো........। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে ডাকতে রমেন সম্বিত ফিরে পেল, "ও কাকু, কাকু, বলটা দাও।" চমকে তাকালো কিন্তু চোখ ভিজে ঝাপসা হওয়ায় প্রথমে দেখতে পেল না । চোখটা মুছে দেখলো, কাঁধে ব্যাট নিয়ে একটা ১০-১২ বছর বয়সের একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু হেসে রমেন মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলটা দিয়ে দিল। চারিদিকে দিনের আলো কমে এসেছে। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলো তাই প্রতিদিনের মতো খুব কষ্টে ক্র্যাচের ওপর ভর দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। আকাশের দিকে একবার তাকিয়ে সে চলে যাওয়া মেয়েটার দিকে ফিরে তাকালো। ফিসফিসিয়ে বলল, " লাস্ট হিট।"

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।