২৬/১১, মুম্বাই ....✍সোমনাথ ব্যানার্জী
অন্যরকম
২৬/১১, মুম্বাই
সোমনাথ ব্যানার্জী

তখন ২০০৮, নভেম্বর ২৬, আমার তখন উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। ফলাফল বেরিয়েছিল বা হয়তো বেরোয়নি। আসলে তখন ঠান্ডা লেগে একটু শরীর খারাপ, তাই বাড়িতেই ছিলাম। টিভির চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে ( সম্ভবত ২৭ এর সকাল এ) হটাৎ খবরের চ্যানেলে দেখলাম মুম্বাই এ হামলা হয়েছে জঙ্গি সংগঠন এর। তখন জঙ্গি সংগঠন বলতে শুধু লাদেন ই জানতাম। তাই ভাবছিলাম আমেরিকা ছেড়ে এখানে হামলা করছে কেন? তখন থেকে আর টিভিটা ঘোরাইনি যতক্ষণ না পর্যন্ত এর নিস্পত্তি ঘটেছিল। বাড়ির সবাইকে সেদিন খুব উদ্বিগ্ন দেখেছিলাম এই ঘটনা নিয়ে। প্রথমে মুম্বাই স্টেশন এ ঐ জঙ্গিগুলো কত সাধারণ মানুষ কে গুলি করে। কর্মরত ক'জন পুলিশ আটকাবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু কেউ আহত হল আবার কেউ শহীদ হল। তারপর রাস্তায় নেমে একটা চলমান গাড়ি কে থামিয়ে তাদের গুলি করে শেষ করে দেয় ও সেই গাড়ি করে তজ-ওবেরয় হোটেলের দিকে এগোয়। তারা যেতে যেতে রাস্তায় থাকা সাধারনের উপর গুলি চালাতে থাকে। এর পর তাজ হোটেলে কিছু ও বাকি ওবেরয় হোটেলে ঢুকে শুধু গুলির বর্ষন করতে থাকে। আমার পাড়ায় গ্রামেও একটা থমথমে ভাব ছিল। লোকেদের মুখে মুখে এই নিয়ে আলোচনা চলেছিল। যে যত আপডেট খবর আনছিল তার কথা সবাই মন দিয়ে ততটাই শুনছিল। শুধু আমার গ্রাম ই নয় সারা দেশের লোকেদের এমন ই অবস্থা ছিল তখন। খবরের কোনো কোনো রিপোর্টার মিলিটারি-পুলিশ এর জয়েন্ট টিমের মধ্যে ঢুকে ঐ তাজ-ওবেরয় হোটেলের মধ্যে গেছিলো ও সবসময় নতুন-নতুন খবর, চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের দিচ্ছিল। আমি একবার এক চ্যানেল আবার কিছুক্ষণ পরে অন্য এক চ্যানেল দেখছিলাম কারেন্ট খবরের জন্য।
তাজ হোটেলের একএকটা অংশে মাঝেমাঝে বড় বড় ব্লাস্ট হচ্ছিল। অনেকে হোটেল থেকে ছুটে বেড়িয়ে আসছিল, সেখানে দেশি-বিদেশি সবাই ছিল। তাদের আতঙ্কিত মুখ গুলো ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। ওবেরয় হোটেলে কত আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল আর ফায়ারিং এর আওয়াজ। আমাদের পুলিশ-মিলিটারি টিম একটা একটা করে অংশ দখল করতে শুরু করল ও অবশেষে হামলা হওয়ার তিনদিন পর মানে চতুর্থ দিন জঙ্গি দের শেষ করল। একজন তাজ হোটেল থেকে ধরা পড়লো। নাম 'কাসাব' যে ঐ জঙ্গি দের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট। আরো অনেক কিছু জানা গেল যে তারা এক একজন ৪-৫ টা গুলি খাওয়ায় পরও পেন কিলার ইনজেকশন নিয়ে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এই ঘটনায় অনেক সাধারন মানুষের সাথে বীর জওয়ান ও পুলিশ শহীদ হয়েছিল। জয়েন্ট কমিশনার হেমন্ত করকরে, বিজয় সালাশকার, অশোক কামতে, সন্দিপ উন্নিকৃষনন ও আরো অনেক।
এই ২৬/১১ থেকে ঐ জঙ্গি রা কি পেল? জঙ্গি দের যে দেশ, সেই দেশ ই তাদের কে অস্বীকার করল। কি পেল তাদের পরিবার। কাসাবের বাবা-মা কি পেল? এই ধ্বংস লীলা হাজার হাজার মানুষ এর মৃত্যু ও তার পরিবারের চোখের জল এবং সারা দেশবাসীর মনে থেকে যাওয়া আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। যে ধর্ম মানুষ কে বাঁচার পথ দেখায় সেই প্রকৃত ধর্ম। তা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্ম হতে পারে কিন্তু বিচার করতে হবে যার বা যাদের থেকে এই ধর্মজ্ঞান পাচ্ছি তারা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বলছে কিনা। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে এই জ্ঞান থেকে সকল মানুষের কোনো উপকার হবে কিনা। নিজেকে বিচার করতে হবে। যারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়ায় তাদেরকে বর্জন করতে হবে।
২৬/১১ র ঘটনায় শহীদ ও মৃত নিরীহ মানুষের জন্য শোক জ্ঞাপন ও শান্তি কামনা করি।
তাজ হোটেলের একএকটা অংশে মাঝেমাঝে বড় বড় ব্লাস্ট হচ্ছিল। অনেকে হোটেল থেকে ছুটে বেড়িয়ে আসছিল, সেখানে দেশি-বিদেশি সবাই ছিল। তাদের আতঙ্কিত মুখ গুলো ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। ওবেরয় হোটেলে কত আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছিল আর ফায়ারিং এর আওয়াজ। আমাদের পুলিশ-মিলিটারি টিম একটা একটা করে অংশ দখল করতে শুরু করল ও অবশেষে হামলা হওয়ার তিনদিন পর মানে চতুর্থ দিন জঙ্গি দের শেষ করল। একজন তাজ হোটেল থেকে ধরা পড়লো। নাম 'কাসাব' যে ঐ জঙ্গি দের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট। আরো অনেক কিছু জানা গেল যে তারা এক একজন ৪-৫ টা গুলি খাওয়ায় পরও পেন কিলার ইনজেকশন নিয়ে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল। এই ঘটনায় অনেক সাধারন মানুষের সাথে বীর জওয়ান ও পুলিশ শহীদ হয়েছিল। জয়েন্ট কমিশনার হেমন্ত করকরে, বিজয় সালাশকার, অশোক কামতে, সন্দিপ উন্নিকৃষনন ও আরো অনেক।
এই ২৬/১১ থেকে ঐ জঙ্গি রা কি পেল? জঙ্গি দের যে দেশ, সেই দেশ ই তাদের কে অস্বীকার করল। কি পেল তাদের পরিবার। কাসাবের বাবা-মা কি পেল? এই ধ্বংস লীলা হাজার হাজার মানুষ এর মৃত্যু ও তার পরিবারের চোখের জল এবং সারা দেশবাসীর মনে থেকে যাওয়া আতঙ্ক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। যে ধর্ম মানুষ কে বাঁচার পথ দেখায় সেই প্রকৃত ধর্ম। তা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্ম হতে পারে কিন্তু বিচার করতে হবে যার বা যাদের থেকে এই ধর্মজ্ঞান পাচ্ছি তারা সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার কথা বলছে কিনা। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে এই জ্ঞান থেকে সকল মানুষের কোনো উপকার হবে কিনা। নিজেকে বিচার করতে হবে। যারা ধর্মের নামে হিংসা ছড়ায় তাদেরকে বর্জন করতে হবে।
২৬/১১ র ঘটনায় শহীদ ও মৃত নিরীহ মানুষের জন্য শোক জ্ঞাপন ও শান্তি কামনা করি।
সমাপ্ত
--------------------