পিপলির কুকুর ....✍রণজিৎ সরকার




গল্প

পিপলির কুকুর

রণজিৎ সরকার (বাংলাদেশ)


পিপলি স্কুলে যায়। কাঁটাবনের রাস্তা দিয়ে। যাওয়ার পথে দেখে খাঁচার ভেতর বন্দি পশুপাখি। পশুপাখিগুলো বিভিন্ন রকমের শব্দ করে ডাকে। পাখিগুলোর প্রতি পিপলির খুব মায়া হয়। খাঁচার ভেতর কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। পিপলি ভাবে, এই কুকুরগুলো তো সঠিক সময় খাবার পাচ্ছ। পাচ্ছে যত্ন। কিন্তু রাস্তায় যে কুকুরগুলো ঘুরে বেড়ায় তাদের কথা কেউ কী ভাবে। মনে হয় ভাবে না। রাস্তার কুকুরগুলো ক্ষুধার জন্য কত জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এক এলাকার কুকুর আরেক এলাকায় গেলে ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দেয়।
পিপলি মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে। রাস্তায় একটা শুয়ে থাকা কুকুর দেখে পিপলি বলল, ‘মা, আমার একটা ইচ্ছা আছে।’
‘কী ইচ্ছা তোমার?’
‘আমি কুকুর পুষব।’
‘কুকুর কেউ পোষে। ফ্যাটের মানুষজন কী বলবে।’
‘যে যা বলুক, আমি কুকুর পুষব।’
‘আচ্ছা, তোমাকে একটা কুকুর কিনে এনে দেব।’
‘না মা, আমি কেনা কুকুর পুষব না।’
‘তাহলে কোন কুকুর পুষবে।’
‘রাস্তায় যে কুকুরগুলো ঘোরাঘুরি করে, সে কুকুরগুলো ধরে এনে পুষব।’
‘তাই কোনো দিন হয়? পাগলি মেয়ে কোথাকার। রাস্তার কুকুর পোষা যায়?’
‘কেন পোষা যাবে না। তাদের ধরে নিয়ে এসে খাওয়াব। এই কুকুরগুলো দিয়ে খামার বানাব।’
‘তোমাকে কুকুর ধরে দেবে কে?’
‘দারোয়ান চাচাকে বলব। তিনি ধরে দেবেন।’
পিপলির কথা শুনে মা হাসলেন। তারপর বললেন, তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। তোমার বাবাকে বলে আমি একটা পোষা কুকুর কিনে নিয়ে আসব, আর সেটা তুমি পুষবে।’
‘তাহলে পথের কুকুরগুলোর কী হবে।’
‘এই শহরে প্রত্যেকটা পথের কুকুরের মালিক আছে। এই কুকুরগুলো নিয়ে তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না।’
‘আচ্ছা মা, কুকুর পুষতে কি কোনো নিয়মকানুন আছে।’
‘অবশ্যই আছে। যেমন ধরো, কুকুর পুষতে গেলে জানতে হবে কুকুরের খাদ্যতালিকা, কুকুরের গোসলের নিয়ম। কুকুরের বৈশিষ্ট্য। কুকুরের প্রশিক্ষণ, প্রজনন, ব্যারাম, রোগ প্রতিরোধ, কুকুরকে ওষুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদি।’



‘সব শিখে নেব। তবু আমি কুকুর পুষব।’
‘তোমাকে কুকুর এনে দেব। কিন্তু শর্ত আছে। তোমাকে পড়ালেখা ঠিকমতো করতে হবে।’
‘আমি পড়ালেখায় ফাঁকি দিই? দিই না। পড়ালেখা তো নিয়মিতই করি। কুকুর কিনে দিলে আরও ভালো করে করব।’
‘ঠিক আছে। কিনে দেব। পরীক্ষায় কিন্তু রেজান্ট ভালো করতেই হবে।’
‘মা, পড়ালেখা নিয়মিত করলে রেজাল্ট ভালো হবেই। অবশ্যই হবে।’
মায়ের সঙ্গে পিপলি স্কুলে পৌঁছে গেল। মা পিপলিকে রেখে চলে এলেন।
কয়েকদিন পর পিপলির বাবা পুতুল কুকুর নিয়ে এসেছে। কুকুর পেয়ে মহা খুশি পিপলি। কিন্তু কুকুরটা শুধু শুধু ঘেউ ঘেউ করে। খাবার নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। যত্ন হচ্ছে ঠিকমতো। কিন্তু কেন যে এমন করছে কুকুরটা। ওদের ফ্যাটসহ আশপাশের সবাই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে যায়।
পিপলি লিফট দিয়ে নামছে। লিফটের ভেতর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় একজন বলল ‘তোমার কুকুরটা ভালো না, পিপলি। খালি ঘেউ ঘেউ করে। কুকুরটাকে ছেড়ে দাও। আশপাশে আমরা যারা আছি, তাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও।’
পিপলি বলল, ‘ছেড়ে দেব কেন? ও ধীরে ধীরে পোষ মেনে যাবে।’
একজন মুচকি হেসে বলল, ‘ পিপলিদের তো এত দিন কেউ ভালো করে চিনত না। কুকুরে জন্য এখন অনেকেই চেনে।’
পিপলি এ কথা শুনে হেসে ফেলল। অন্য একজন বলল, ‘পশুপাখি পোষা ভালো।’
লিফট নিচে নেমে এল। সবাই নামল। পিপলি দৌড়ে দোকানে গেল। দোকান থেকে কুকুরের জন্য পাউরুটি নিয়ে এল। কুকুরকে দিল। কিন্তু কুকুর তা খেল না। কুকুর শুধু মাথা নাড়ে। পিপলি বলল, ‘রাগ করেছ? পাউরুটি খাবে না। কেন, বলো তো?’
কুকুর আবার মাথা নাড়ল। পিপলি এবার বলল, ‘ও বুঝেছি। রাস্তায় তোমার যত বন্ধু আছে, তাদের পাউরুটি খেতে দিতে হবে।’
কুকুর পিপলির কথা শুনে মাথা উপর-নিচ করল। পিপলি বুঝতে পারল কুকুরের মনের কথা। পিপলি মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘আগামীকাল থেকে আমার স্কুল ব্যাগে পাউরুটি রাখব। আর এই পাউরুটি রাস্তায় তোমার বন্ধুদের খাওয়াব।’
পিপলির কথা শুনে খুশিতে লাফাতে থাকল কুকুর।
তারপর কুকুরকে বাসায় নিয়ে এল পিপলি।

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।