রক্ত ....✍মোঃ আরিফুল ইসলাম




গল্প

রক্ত

মোঃ আরিফুল ইসলাম (বাংলাদেশ)


আজ সপ্তমী মৌমিতা অঞ্জলি দিয়ে আসার সাথে সাথে তার শাশুড়ি মা তাকে বললেন চা কর তো তাড়াতাড়ি রূপুটা একদম উপোস করে থাকতে পারেনা। লুচি গুলোও ভাজতে আরম্ভ করতে হবে। মৌমিতারও খুব খিদে পেয়েছিল, কিন্তু কি করবে এটা শ্বশুরবাড়ি মা বলে দিয়েছিলেন, সব মানিয়ে নিতে হয়। সে চায়ের জল একদিকে বসিয়ে, অন্যদিকে লুচির কড়াই বসিয়ে দিল। গোলাপী মাসী বলল, আমি লুচি বেলে দিচ্ছি ভাগ্যিস তাপস এখন বাড়ি নেই, সে থাকলে ঠিক প্রতিবাদ করত মায়ের এই ব্যাবহারের। তাপসের ভালোবাসার জন্যেই হয়তো সে সব মানিয়ে নেয়। পুজোর দিনে অশান্তি হত একটা, শান্তিপ্রিয় মৌমিতা তা চায়না। সবাইকে চা আর লুচি ভেজে দিয়ে প্লেটে সাজিয়ে দিল খাবার টেবিলে। ওর শ্বশুরমশাই বললেন- তুমি এবার নাও মা, তোমার টা না আনলে আমি খেতে পাচ্ছিনা।
শাশুড়ি মা বললেন- এ আবার কি আদিখ্যেতা?
শ্বশুরমশাই বললেন- আদিখ্যেতা নয় এটা মানবিকতা, তোমার মেয়ে যেমন না খেয়ে থাকতে পারেনা, তেমন এই মেয়েটাও? কিন্তু না খেয়েই কাজ করে যাচ্ছে।
মৌমিতা তাড়াতাড়ি বলল- বাবা আমি ঠিক আছি আপনি খান আমি বসছি এখুনি।
ওদের খাওয়া শেষ হতে না হতেই মৌমিতার স্কুলের জীবনের বন্ধু রিয়া এলো, বিয়ের সময় আসতে পারেনি তাই হাতে মিষ্টির বাক্স নিয়ে।
মৌমিতা পরিচয় করিয়ে দিতেই রিয়া প্রণাম করতে গেল। শাশুড়ি দু পা পিছিয়ে গিয়ে বললেন- থাক থাক (আগে মিষ্টির বাক্সটা হাতে নিয়েছিলেন পরে সেটা অচ্ছুতের মতো ফেলে দিলেন টেবিলের ওপর)।
রিয়া কে ঘরে এনে বসানোর পর রিয়া বলল- আমি আজ যাইরে, বুঝতে পারছি তোর অবস্থা! পরে একদিন বাইরে কোথাও দেখা করব। মৌমিতা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে বলল-আজকের দিনে কিছু না মুখে দিয়েই চলে যাবি?
রিয়া বললেন- না রে আর এখানে কিছু খাবোনা, যখন বাপেরবাড়ি যাবি আমায় খবর দিস, মাসীমার হাতে নারকেল নাড়ু খেয়ে আসবো। জল ভরা চোখে সে প্রাণের বন্ধুকে বিদায় জানালো।
সেদিনই বেড়াতে বেড়িয়ে রূপু পরে গিয়ে মাথায় খুব আঘাত পায়, অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে বলল- এখুনি ব্লাডের দরকার। কিন্তু ও পজিটিভ ব্লাড এখানে নেই। পুজোর সময় কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।



তাপস হতাশ হয়ে পড়ল, কি করা যাবে এবার?
মৌমিতার হঠাৎ রিয়ার কথা মনে পড়ল, রিয়া কয়েকটা সেবামূলক রক্ত সাপ্লাই সংস্থার সাথে যুক্ত। মৌমিতার ফোন পেয়ে রিয়া ছুটতে ছুটতে এলো এবং ডাক্তারকে গিয়ে বলল- আমার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ ডাক্তার।
ডাক্তার বললেন- আপনি ইমিডিয়েট রক্ত দেওয়ার জন্য! বেডে শুয়ে পড়ুন।
রিয়ার দেওয়া রক্তে অবশেষে রূপুর প্রাণ রক্ষা পায়।
রক্ত দিয়ে রিয়া যখন বেড়িয়ে আসছে তখন তাপস তাড়াতাড়ি এসে বললেন- আপনি চলুন আগে কিছু খাইয়ে আনি, আপনি তো টলছেন! রিয়া বলল- এখানে অবশ্য খাওয়ালে ছোঁয়া ঠেকার ব্যাপার টা থাকেনা।
তাপস হাতজোড় করে বললেন- দেখুন আমার মায়ের হয়ে আমি আপনার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি, আমি বাড়িতে থাকলে আপনাকে এত অপমানিত হতে হত না।
রিয়া বললেন- আচ্ছা ঠিক আছে চলুন খাওয়াবেন বললেন যে?
তাপস বললেন- হ্যাঁ হ্যাঁ চলুন, এই মৌমিতা...।
মৌমিতা ইতস্তত করে বললেন- বাবা-মা? আরে তোমাকে আসতে বললাম এসো না? সবসময় সবার কথা ভাবলে হয়না? কখনও কখনও নিজের কথাও ভাবতে হয় ওঁরা খেয়ে নেবেন। কিন্তু ইনি সবে রক্ত দিয়ে এসেছেন, এঁর খাওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।
খাওয়ার পর বেড়িয়ে আসার সময় তাপস বাবা মায়ের জন্যে কিছু কিনে নিল।
ওদের আসতে দেখে মৌমিতার শাশুড়ি এগিয়ে এসে রিয়ার হাত দুটো ধরে বললেন- তোমার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবনা!
রিয়া বললেন- কিছু শোধ পাওয়ার জন্য আমি কিছু করিনি মাসীমা, একজন মানুষকে বাঁচানো আমার কর্তব্য বলে মনে করি তাই করেছি।
মৌমিতার শ্বশুর মশাই এগিয়ে এসে বললেন- আজ কিন্তু ওর রক্ত আর রূপুর রক্ত মিলেমিশে গেল, আসলে কি বলো তো? মানুষের রক্তের রঙ একটাই হয়, আর সে রঙটা লাল।

~: প্রেরক :~
মোঃ আরিফুল ইসলাম
বাংলা বিভাগ
শিবগঞ্জ সরকারি এম এইচ কলেজ
শিবগঞ্জ, বগুড়া।
মোবা : ০১৭৭১-৩৭৭৩৫৯

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।