স্টার হয়ে যেওনা ....✍অর্পিতা সরকার




গল্প

স্টার হয়ে যেওনা

অর্পিতা সরকার


কুর্তির ওপরের একটা বাটন খোলা ছিল এতক্ষন খেয়ালই করেনি মঞ্জুসা। বাসের মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বারবার এই দিকে তাকাচ্ছে দেখেই কাঁধের ব্যাগ সামলে, ডান হাতের ফাইলটা বাঁ হাতে নিয়ে কোনোমতে ভিড় বাসে বোতামটা আটকানোর চেষ্টা করলো মঞ্জুসা। বোতামটা আটকাতে চেষ্টা করছে দেখে মধ্যবয়স্ক লোকটি অন্য দিকে তাকালো।
বোতামটা লাগিয়ে নিয়ে চোখের ইশারায় লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো, হয়েছে কাকু?
আর কিছু দেখতে পাচ্ছেন না তো?
লোকটা কোনোমতে মঞ্জুসার থেকে সরে গেলো আরেকটু ভিড়ে। মুখ লুকানোর ব্যবস্থা করতে না অন্য কারোর কিছু দেখা যাচ্ছে কিনা খুঁজতে সেটা ও বুঝতে পারলো না। এর মধ্যে ব্যাগে ফোনটা ভাইব্রেট করছে।
কোনোমতে ব্যাগের চেন খুলে ফোনটা বের করে বললো, তোকে আজকেই ডিভোর্স দেব বুঝলি।
তোর কথা ছিলো আমাকে ফোন করে ডাকবি, তা নয়...তোর জন্য আমার নটার বাসটা মিস হলো।
আমি সোজা স্কুলে ঢুকে যাবো। তুই কি করবি, সোজা স্কুলে আসবি নাকি মার্কেট ঘুরে..
দেখ সৃজন, তোর এই ভুলভাল কথার জন্যই কিন্তু আমাদের মধ্যে অশান্তি হয়। আজ কোনোভাবেই সি এল নিবি না। তোর আঁকা বাকি আছে সেটা স্কুল থেকে ফিরে এসে করবি, এখন কিন্তু...
এই যে জ্যেঠু, দেখতে পাচ্ছেন না, বাসে লেখা আছে মাল নিজ দায়িত্বে রাখুন। তারপরেও আপনার শরীরের গোপন অঙ্গ আমাকে স্পর্শ করার জন্য উদগ্রীব কেন একটু বলবেন?
পাশের ভদ্রলোক মঞ্জুসার দিকে তাকিয়ে বলল, আজকালকার মেয়েগুলোর মুখে কিছুই আটকে থাকে না। মুখ তো নয়, যেন নর্দমা।
সৃজন ফোনের অন্যপ্রান্তে থেকে চেঁচিয়ে বললো, কি রে আবার বাসে তোর পাশে কোনো সাইকো ভাম দাঁড়িয়েছে নাকি?
আর বলিস না, নাতনির বিয়ে দিয়ে নিজেকে যুবক ভাবা পাবলিক ছিল রে। যাক বাদ দে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে এসব তো হবেই। তোর সাথে স্কুলে দেখা হচ্ছে। বাই... ল্যাদখোর... বলেই ফোনটা কেটে দিলো মঞ্জুসা।
সৃজন বোধহয় আজ বাইকে আসবে, তাই এখনো বাড়িতে আছে।
এদিকে মঞ্জুসাকে আজ স্কুলে একটু আগে ঢুকতে হবে। ক্লাস ফোরের রাতুলকে নিয়ে আলাদা ভাবে বসতেই হবে। চাইল্ড সাইকোলজিকাল কাউন্সিলর মঞ্জুসা চৌধুরী এই স্কুলে জয়েন করেছে মাত্র তিনমাস। এর মধ্যেই বাচ্চাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাচ্চাদের মান অভিমান দুঃখগুলো যেন ওর নিজের হয়ে উঠেছে। একটু দেরীই হয়ে গেল আজ। ওলা, উবের নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করতেই বেশি পছন্দ করে মঞ্জুসা। কারণ ওর ধারণা, লোকজনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল রোগের বীজ। মানুষদের খুব কাছ থেকে না দেখলে তাদের বোঝা যায় না।
এই ছেলেটাকে বেশ কয়েকদিন ধরেই খেয়াল করেছে মঞ্জুসা, ছেলেটা ক্লাসের ফার্স্ট বয় অথচ সবসময় যেন মারাত্মক অন্যমনস্ক হয়ে থাকে। এমনকি বন্ধুদের সাথেও কিছুতেই মিশতে চায় না ছেলেটা। ছেলেটার সাথে কথা বলতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে মঞ্জুসা। একটা শব্দও বের করতে পারেনি ও। শুধু এককোনে বসে নিজের নখ খুঁটে গেছে। তবে মন দিয়ে শুনেছিল ওর কথাগুলো সেটা বুঝতে পেরেছে মঞ্জুসা।
বাস থেকে নেমে অটোয় উঠতে গিয়ে আরেক বিপত্তি। পাশের ভদ্রমহিলা বসার জায়গায় তিনটে ব্যাগ রেখে দিয়েছেন। কিছুতেই সরাবেন না, এরা হচ্ছে, হাম অর হামারা দো বলা পাবলিক। অটো ড্রাইভার যত বলছেন ব্যাগগুলোকে কোলে তুলুন, সে বলছে আমার শাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। বিরক্ত হয়ে মঞ্জুসা বললো, বেশ বেশ আন্টি, ব্যাগ ওখানেই থাকুক, আমি বরং আপনার কোলে বসে পড়ছি।
মহিলা তড়াক করে লাফিয়ে বললো, নিজেকে কচি খুকি মনে করাটা বন্ধ করো, আমাকে দেখে আন্টি মনে হয়? আর তাছাড়া তোমার কি কোলে চাপার বয়েস? এসব প্রশ্ন ইগনোর করে মঞ্জুসা যেই মহিলার কোলের ওপরে বসার টার্গেট করেছে ওমনি মহিলা তাড়াহুড়ো করে জিনিসগুলো নিজের কোলে তুলে নিয়ে বললো, কি অসভ্য মেয়েরে বাবা! কোনোরকম শিক্ষা পর্যন্ত নেই। মঞ্জুসার মুখে হাসি।
ও এসব মানুষকে ভালো করে চেনে, তাই কার কি ওষুধ ভালোই বোঝে।
রোজদিন রাস্তাঘাটে এই মানুষগুলোকে হ্যান্ডেল করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ও, কিন্তু ওই বাচ্চাগুলো যারা পরিষ্কার করে নিজের মনের দুঃখটা বলতেই পারে না তাদের কি ভাবে বুঝবে সেটাই ওর বড় ভাবনা।
টিউলিপ স্কুলের এখন 1st টার্ম এক্সাম চলছে।



রাতুল নাকি গতকাল গোটা এক্সাম পিরিয়ডটা চুপচাপ বসে কেঁদেছে। আজ ওদের ড্রয়িং আছে। সৃজন বলছিল, ছেলেটা নাকি আঁকাতেও দারুন। কিন্তু ওর আঁকার রঙের মধ্যে শুধুই ধুসরতা, একটা বিষণ্ণতা কাজ করে ওর মনে। সৃজনের সাথে নাকি ছেলেটার বেশ ভাব আছে। ড্রয়িং টিচার হিসাবে সৃজন বেশ পপুলার স্কুলের বাচ্চাদের কাছে।
সৃজনের সাথে মঞ্জুসার একটা দুর্দান্ত দোস্তি তৈরি হয়েছে তিনমাসেই। সৃজনের অবশ্য স্কুলে একবছর পূর্ন হয়ে গেল। প্রথম দিন স্কুলে ঢুকেই সিনিয়র টিচারদের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিল মঞ্জুসা,
ইংলিশের নিবেদিতাদি বলেছিলেন, পারলে ড্রেসটা একটু মেইন্টেন করো। বাচ্চাদের স্কুল তো, ওরা তো আমাদের থেকেই শিখবে।
নিজের অফ হোয়াইট লং কুর্তি আর লেগিংসের দিকে তাকিয়ে অশালীনতার কোনো লক্ষণ খুঁজে পায়নি ও। তাই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, আমি তো কোনো উত্তেজক পোশাক পরিনি ম্যাম।
মাত্র ছাব্বিশের মুখে এধরণের উত্তর আশা করেননি সিনিয়র টিচার। তাই রাগী চোখে বলেছিলেন, ভদ্র ভাষায় কথা বলো।
এমন একটা গুরুগম্ভীর পরিবেশে এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস এনে ছিল ড্রয়িং টিচার সৃজন।
সে প্রায় কানের কাছে এসে বলছিল, আমার মাত্র ত্রিশ বছর বয়েস। তবুও আমি আপনাকে দেখে এক্সসাইটেড যখন হচ্ছি না, তখন ক্লাস থ্রি-ফোরের বাচ্চারাও হবে না, ডোন্ট ওরি।
আসলে কি বলুন তো, যৌনতা শব্দটা মানুষের মস্তিষ্কে থাকে, পোশাকে নয়। তাছাড়া আপনি একেবারে পারফেক্ট পোশাক পরে আছেন।
সপ্তাহ খানেক পরেই টিফিন পিরিয়ডে সৃজন এসে
মঞ্জুসার টিফিনবক্স থেকে একটা ব্রেড তুলে নিয়ে বলেছিল, চারিদিকে কত অভুক্ত মানুষ রয়েছে, তাদের দিয়ে খেতে হয় দিদিমণি।
মঞ্জুসা বলেছিলো, আপনাকে আপনি বলতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
সৃজন হাসতে হাসতে বলেছিলো, তুমিতে আবার আমার এলার্জি, তুইতে নেমে আয়।
বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি দুজনের।
হয়তো ওয়েভলেন্থ ম্যাচ করেছিল বলেই।
কিন্তু ওদের নিয়ে টিউলিপের অনেকেরই সমস্যা হচ্ছিল। আড়ালে আবডালে আলোচনা হচ্ছিলো, সাইকোলজিস্ট ম্যামের সাথে ড্রয়িং টিচারের কিছু একটা চলছে।
মঞ্জুসা মনমরা হয়ে বলেছিল, আমাদের বন্ধুত্বটাকে নিয়ে সবাই খারাপ বলছে। সৃজন বলেছিলো, খেয়াল করে দেখ, তুই যেদিন প্রথম টিচার রুমে ঢুকেছিলিস সেদিনই কিন্তু সবাই মিলে তোকে এট্যাক করেছিল। তখন তো তুই আমি অপরিচিত ছিলাম। তার মানে একটা জিনিস পরিষ্কার, এদের একটা বিষয় চাই আলোচনা করার, আজ সেটা তুই আমি, কাল অন্য কেউ।
আর শোন, আমি রীতিমত সিঙ্গেল আছি। ফার্স্ট লাভ কেটে ওঠার পরে পুরো ফ্রি। বাই এনি চান্স আমার প্রেমে যদি পড়েও যাস, তাহলেও নো টেনশন, তুই ইজিলি আমার ভাত আর ট্রাউজারের দায়িত্ব নিতেই পারিস। আমি কিছু মনে করবো না।
সৃজনের এই মিশুক স্বভাবের জন্যই ওকে বড্ড কাছের মনে হয় মঞ্জুসার।

রাতুল চুপ করে বসে আছে। হাতে একটা কালার পেন্সিল। মঞ্জুসা ঢুকেই বললো, বুঝলে রাতুল তোমার ড্রয়িং টিচার আজ আমাকে ভীষণ বকেছে, বলেছে আমি নাকি তোমাকে বিরক্ত করছি। তুমি নাকি দারুন স্টুডেন্ট। তোমার মনে কোনো কষ্ট নেই...নিজের কান দুটো ধরে মঞ্জুসা বললো, সরি রাতুল। বড় বড় কৌতূহলী চোখ দুটো এখন মঞ্জুসার দিকে স্থির। রাতুলের মনে অনেক প্রশ্ন, কিন্তু সেগুলো কি আন্টিকে বিশ্বাস করে বলা যায়! যদি আন্টিকে বললে, ....না থাক।
ছোট্ট মনটায় কান্নারা বাসা বাঁধলো। দু ফোঁটা জল চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
তবুও মুখ দিয়ে একটা শব্দও বেরোলো না রাতুলের।
মঞ্জুসা বললো, রাতুল তুমি নাকি কাল সব জানা প্রশ্নের আনসার করো নি?
কাবেরী ম্যাম নাকি খুব বকেছে তোমাকে!
রাতুলের চোখের মুক্তের মতো জলের বিন্দুগুলো গাল বেয়ে নামছে, হাতের চেটো দিয়ে মুছে নিচ্ছে রাতুল। অসহায় লাগছে মঞ্জুসার। কিছুতেই বাচ্চাটার কষ্টের জায়গাটা ছুঁতে পারছে না ও।
রাতুলের মাকেও বলেছিল কিছুদিন আগেই, রাতুল অন্যমনস্ক থাকে আজকাল। ভদ্রমহিলা বললেন, ক্লাসের ফার্স্ট বয় সম্পর্কে এমন অপবাদ দেবেন না ম্যাম। যবে ওর রেজাল্টের মার্কস ডাউন হবে তবে গার্জেন কল করবেন, তার আগে নয়।
ভদ্রমহিলাকে দেখেই অবাক হয়েছিল মঞ্জুসা। কি অদ্ভুত আচরণ মহিলার। মারাত্মক অহংকারী, যুক্তি তর্কের ধার ধারেন না। মঞ্জুসা দু একটা কথা বলতেই মহিলা বলেছিলেন, আমি কি আপনার বিষয়ে প্রিন্সিপ্যালের কাছে রিপোর্ট করবো! আমার তো মনে হচ্ছে, আপনি ইচ্ছে করে আমার ছেলে মানসিক অসুস্থ, এটা প্রমান করতে চাইছেন।
সৃজন সবটা শুনে বলেছিলো, বেশি কিছু বলিস না। শেষে হয়তো ম্যানেজিং বডির মিটিং বসে যাবে তোকে নিয়ে।
কিন্তু মঞ্জুসা হাল ছেড়ে দেবার মেয়ে নয়।
রাতুলের আই কার্ড থেকে টেলিফোন নম্বরটা লিখে নিয়ে রাতুলকে একটা চকলেট দিয়ে ছেড়ে দিলো ও।
প্রথম নম্বরে কলটা করতেই একজন ভদ্রলোক ফোনটা ধরলেন। মঞ্জুসা বললো, আপনি কি রাতুল ব্যানার্জীর বাবা?
ভদ্রলোকের গলায় ভয় স্পষ্ট!
রাতুলের কি হয়েছে ? ও ঠিক আছে তো?
খুব ধীরে গলায় মঞ্জুসা বললো, এতক্ষন রাতুলের সাথে কথা বলছিলাম। শুনলাম ও নাকি ওর বাবাইকে খুব ভালোবাসে। তাই একটু আলাপ করতে চাই আপনার সাথে। আপনার মিসেসকে প্লিজ জানাবেন না কথাটা।
ভদ্রলোক বললেন, রাতুলের বিষয়ে কথা বলবেন কি?
মঞ্জুসা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বললো, ঠিক তাই।

শৌর্যর একটু অস্বস্তিই লাগছিলো। স্কুলে না ডেকে ম্যাম কেন ওকে এই কফিশপে ডাকলো সেটা ভেবেই অস্বস্তিটা বাসা বাঁধছে। আজকাল স্কুলে অনেকরকম পলিটিক্স আছে, বলা তো যায়না, এই ভাবে শৌর্যর নামে কোনো দুর্নাম রটিয়ে শেষে রাতুলকে স্কুল ছাড়া করবে কিনা!
একটি অল্প বয়সী ছেলে আর মেয়ে ঢুকলো ক্যাফেতে। ছেলেটিকে শৌর্য চেনে। গার্জেন মিটে দেখেছে, টিউলিপের টিচার। শৌর্য হাত তুলে ইশারা করতেই সৃজন এসেই বললো, আপনাকে অনেকক্ষন বসিয়ে রেখেছি আমরা, সরি।
মঞ্জুসা আলাপ পর্ব তাড়াতাড়ি সেরেই বললো, গতকাল আপনার বাড়িতে যা যা ঘটেছে সবটা বলুন। গত তিনদিনের আপডেট দিন আমাকে প্লিজ।
শৌর্য একটু সময় নিয়ে শুরু করলো, গুছিয়ে নিচ্ছিলো হয়তো.. শৌর্য যেটা বললো, তার জিস্ট হলো...
সামনে বই খাতা ছড়ানো, ঈশানির চুল এলোমেলো, বিধ্বস্ত মুখ চোখ। চোখের নিচে কালি পড়েছে। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ এক্সাম চলছে। টুবলুর এক্সামের দিনগুলোতে ঈশানি এত টেনশন করে, যে নাওয়া খাওয়ার ঠিক থাকে না। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় ওর। নিজের স্কুল লাইফেও নাকি কোনোদিন এত চিন্তা করেনি ও, কিন্তু একমাত্র ছেলের বেলায় ওর নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে যায়। টুবলুর সবে ক্লাস ফোর। কিন্তু ঈশানিকে দেখে মনে হয়, 1st টার্ম নয়, টুবলুর বোধহয় আই সি এস সি চলছে। শৌর্য মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখে টুবলু ঘুমাচ্ছে, কিন্তু ঈশানি টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে টুবলুর বইপত্র ঘেঁটে চলছে। গত পাঁচ বছরের কোশ্চেন নিয়ে সাজেশন তৈরি করে চলেছে।
শৌর্য ঈশানির কানে কানে বলে, প্লিজ, পাগলামি কোরো না। মাঝরাতে জেগে থাকলে শরীর খারাপ করবে, ঘুমাবে চলো। ঈশানি উদ্ভ্রান্তের মত বললো, টুবলুকে এই কোশ্চেনটা তো করানো হয়নি শৌর্য, ও কি করে পারবে?
ঈশানিকে জোর করে বিছানায় নিয়ে এলো শৌর্য। জল খাইয়ে শুইয়ে দিল। কিন্তু পাশে শুয়ে বেশ বুঝতে পারছিল, ঈশানি উশখুশ করেই চলেছে।
শৌর্য কিছুতেই বুঝতে পারে না, টুবলুকে নিয়ে ঈশানি এমন পাগলামি কেন করে। কেন টুবলুকে সব সাবজেক্টে হাইয়েস্ট পেতেই হবে বলে জোর দেয়। ছেলেটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে, বাবাই, আমি যদি ফার্স্ট না হই তাহলে মা খুব কষ্ট পাবে। ছেলের চোখে ভয় দেখতে পায় শৌর্য। কিন্তু ঈশানিকে কিছুতেই বোঝাতে পারে না। ওর সেই এক জেদ, মিসেস গুপ্তার ছেলের থেকে গত সেমিস্টারে টুবলু মাত্র তিন নম্বর বেশি পেয়েছিলো, এবারে যদি রাকেশ বেশি খাটে তাহলেই টুবলুর পজিশন গেলো। চিন্তা ভাবনায় অস্থির হয়ে ওঠে ঈশানি। ইদানিং স্বভাবটাও বেশ খিটখিটে হয়ে উঠেছে। কিছু বললেই এমন ভাবে রিএক্ট করছে যে কিছুই বলার উপায় নেই। মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে করতে বেচারা হাঁপিয়ে উঠেছে। শৈশবের গন্ধ নাকে লাগার সুযোগটুকুও পেলো না ছেলেটা।
শৌর্য ভাবছিল নিজের ছেলেবেলাটা। দিনে একবার স্কুল, সন্ধ্যেবেলা বাবার ভয়ে দু চারটে ছড়া মুখস্ত করা ছাড়া পড়াশোনা বিশেষ করতো না। বাবা অফিসে বেরিয়ে গেলেই ডাংগুলি আর কাঁচের গুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়তো খেলতে। এছাড়া ব্যাটবল তো আছেই। সেই শৈশব কাটিয়েও কিন্তু শৌর্য জীবনে আজ ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত। ঈশানিকে বোঝাতে গেলেই চিৎকার করতে শুরু করে। ওর প্রশ্রয়েই নাকি ছেলেটা বিগড়ে যাবে। আজকালকার দিনে অমন ফেলে ছড়িয়ে পড়াশোনা করলে কিছুই হবে না। সিরিয়াসনেসটা এখন থেকেই দরকার।
শৌর্য ব্যর্থ হয়েছে ঈশানিকে বোঝাতে, তার এক কথা, টুবলুকে ফার্স্ট হতেই হবে।
রাতুলের ডাক নামই টুবলু। স্কুলের পরেও তার পিয়ানোর ক্লাস থাকে। ঈশানির নাকি খুব শখ ছিল পিয়ানো শেখার। নিজের শেখা হয়নি বলেই ছেলেকে শেখানো। যদিও টুবলুর একটুও ইন্টারেস্ট নেই পিয়ানোতে, ওর ইন্টারেস্ট ফুটবলে। টুবলু একদিন কানে কানে বলেছিলো, বাবাই, মা কেন আন্টির মত নয়। শৌর্য মুখে হাত দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছিলো, বলেছিল মা শুনতে পেলে কষ্ট পাবে।
বিয়ের পরে কিন্তু ঈশানি এমন ছিল না, প্রাণবন্ত উচ্ছল একটা মেয়ে ছিল। পরিবর্তনটা হয়েছিল, টুবলু হবার পরে।
শৌর্যরা দুই ভাই। শৌর্যর দাদা সুমনের একটা মেয়ে।
তাই রমলাদেবী বিয়ের পরের দিন থেকে ঈশানির কানের কাছে বলে চলেছিলেন, এই সংসারে পুত্র সন্তান আনার দায়িত্ব কিন্তু ঈশানির। শাশুড়ি মায়ের কথায় ঈশানি একটু ভয়ই পেতো। শৌর্য বলতো, আমি তো আছি। ছেলে মেয়ে যেই হবে সে আমাদের হবে। তাকে আমরা মনের মত করে মানুষ করবো। ঈশানি বলতো, তুমিও ভগবানের কাছে ছেলে চাও শৌর্য। মায়ের এত ইচ্ছে যখন।
ভগবানের কাছে কিছু না বলেও শৌর্যর একটা ছেলেই হলো। হসপিটালের বেডে প্রথম ঈশানির পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিল শৌর্য। শৌর্যর মা সদ্যোজাত সন্তানের গলায় সোনার হার পরিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ করেছিল। ঠিক তখনই ঈশানি বলেছিলো, মা আমি তোমার বংশধরকে মনের মত করে মানুষ করবো। সবার ওপরে ওর নাম থাকবে। পাশে বৌদি দাঁড়িয়ে ছিল। বৌদির দিকে তাকিয়ে ঈশানি বলেছিল, দিদিভাইএর তো মেয়ে, গ্রাজুয়েট করিয়ে বিয়ে দিলেই চলবে, কিন্তু আমার ছেলেকে....
কথা শেষ করতে না দিয়েই বৌদিকে কটাক্ষ করে মা বলেছিলো, বড় বউ তো বংশরক্ষা করতে পারেনি, যাক ছোট অন্তত পারলো। সেদিন থেকেই ঈশানি বদলাতে শুরু করলো। দিনরাত ছেলে ছেলে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে।
শৌর্য বোঝাতে গেলেই বলেছে, দিদিভাইকে দেখে শিখতে বোলো না, দিদিভাইএর তো মেয়ে, ওর ভবিষ্যতের কথা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু আমার টুবলুর মুখের দিকে তাকিয়ে তোমাদের গোটা পরিবার। তাই টুবলুকে মানুষ করতেই হবে। প্রতি পদে পদে ঈশানি বুঝিয়ে দিয়েছে সে পুত্র সন্তানের মা। শৌর্য বৌদির চোখে জল দেখেছে। বৌদি এমনিতে খুবই শান্ত প্রকৃতির। সেও ঈশানির ব্যবহারে রিয়াকে কোলে টেনে কেঁদে বলেছে, ভাইয়ের সাথে নিজের তুলনা করিস না। তুই তো মেয়ে। ভাইয়ের মাছের বড় পিস দেখে বায়না করতে নেই, ভাই তো ছেলে।
শৌর্য বলেছে, বৌদি এসব কি হচ্ছে। ওই টুকু মেয়েকে তুমি এসব কি শেখাচ্ছ!
বৌদি কান্না ভেজা গলায় বলেছে, কি করবো ভাই, ঈশানি আর মা যে দিনরাত তাই বলে। তাই বোঝাতে চাই। এমনকি তোমার দাদাও সেদিন আক্ষেপ করে বলছিল, রিয়াটা যদি ছেলে হতো...
টুবলুকে বৌদি খুবই ভালোবাসে, কিন্তু ঈশানি কোনোমতে ছেলেকে বৌদির ঘরে যেতে দিতে চায়না। গত পরশুই টুবলুকে নাকি গোটা বাড়িতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ঈশানি ছাদ, উঠোন সব খুঁজে অবশেষে বৌদির ঘর থেকে ওকে আবিষ্কার করেছিলো। বৌদি নাকি গল্পের বই পড়ে শোনাচ্ছিলো ওকে। সেটা দেখেই ঈশানির মাথায় আগুন জ্বলে যায়, ছেলের পরীক্ষার সময় ইচ্ছে করে বৌদি টুবলুর মন অন্যদিকে ঘোরানোর জন্যই ভুলভাল বাংলা বই পড়াচ্ছিলো।
টুবলুকে খুব মেরেছিলো ঈশানি, আর বৌদিকে চূড়ান্ত অপমানও করেছিল। তারপর থেকেই টুবলু কেমন চুপ করে আছে।

সৃজন বললো, তারমানে রাতুল একটু আপসেট হয়ে আছে বম্মার কাছে যেতে পারছে না বলে। বাচ্চা তো, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। মঞ্জুসা কিন্তু মেনে নিতে পারলো না সৃজনের কথাটা। কোথাও যেন আরেকটা ছোট্ট প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, যেটা শৌর্য বাবু জানেন না। সেটার উত্তর শুধু রাতুলের কাছেই আছে। শৌর্য বাবু চলে গেছেন।
সৃজন বললো, তুই একটু বেশি ভাবছিস বস। নাথিং সিরিয়াস!
তার থেকে বরং চল তোর বার্থডে তে আমাকে তুই কি গিফ্ট দিবি সেটা ঠিক করে ফেলি।
মঞ্জুসা বললো, আমার বার্থডে তে তোকে কেন গিফ্ট দেব রে?
সৃজনের যুক্তি পরিষ্কার। তোর মত বদ রাগী মেয়েকে তোর বাবা মা জন্ম দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তারপর রাস্তাঘাটে তুই যে ভাবে চলিস তাতে তো কবেই তোর শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রন পেতাম, লোকে তোকে চাঁদা তুলে পেটাতো, নেহাত আমি ছিলাম বলে তুই আজও অমর অক্ষয় ভাবে বেঁচে আছিস। তোকে এই দীর্ঘায়ু দেবার জন্যই আমাকে তোর গিফ্ট দেওয়া দরকার রে পাগলী। মঞ্জুসা বললো, তুই না টিচার, এসব কি মুখের ভাষা!
সৃজন হাসতে হাসতে বললো, কেন রে কোন সংবিধানে লেখা আছে যে টিচাররা বন্ধুদের সাথে আড্ডাও মারতে পারবে না। টিচাররা জিন্স পড়তে পারবে না, পুজোর ভাসানে বন্ধুদের সাথে নাচতে পারবে না এগুলো কেমন যুক্তি!
তবে এটা বলতে পারিস, কিছু শিক্ষক শিক্ষিকার জন্য পুরো প্রফেশনটা কলঙ্কিত হচ্ছে।
ছাত্রীকে রেপ করে যারা কাগজে নাম তুলছে, অথবা বাচ্চাদের মেরে যারা হাতের সুখ পাচ্ছে তাদের কথা বাদ দে। বাকি আমরা কি চেষ্টা করি না, প্রতিটা বাচ্চা ভালো পরিবেশ পাক।



সন্ধ্যাতারা অনেকক্ষন জানান দিয়েছে, তার উপস্থিতি। জমকালো অন্ধকারের আগাম আগমন বার্তা ঘোষিত হয়েছে ঘন্টা খানেক আগেই। ওরা রাস্তা দিয়ে এলোমেলো ভাবে হাঁটছিলো। সৃজন বকবক করছিল, মঞ্জুসা তখনো ভাবছিল রাতুলের কথা।
পারিবারিক অশান্তি আর মায়ের প্রত্যাশার শিকার হয়েছে ছেলেটা।
বাবার কাছে কোনো এক আন্টির কথা বলেছিল রাতুল। সেটা কি স্কুলের কেউ, নাকি অন্য কেউ...
সাধারণত স্কুলের সবাইকে বাচ্চারা ম্যাম ডাকে, একমাত্র মঞ্জুসাই নিজেকে আন্টি বলতে বলেছে বাচ্চাদের। বাচ্চারা যাতে ওর সাথে সহজ হতে পারে তাই।
সৃজন বাইক থামা, আমার ফোন বাজছে।
মঞ্জুসা ফোনটা ধরতেই ভয়ার্ত গলায় শৌর্য বললো, টুবলুকে পাওয়া যাচ্ছে না। এক্সাম শেষে বাড়ি এসে টিফিন খেয়েছিল। আজ এক্সাম শেষ বলে ঈশানি আর পড়তে বসায় নি। ঘরেই খেলছিল ভিডিও গেম নিয়ে। তারপরেই আর নেই।
মঞ্জুসা রাতুলের বাড়ির এড্রেস নিয়ে, সৃজনকে বললো, চল ওদের বাড়ি যেতে হবে। সৃজন বললো, প্রিন্সিপ্যালকে জানালে হতো না?
মঞ্জুসা দৃঢ় স্বরে বললো, তুই আগে চল।
রাতুলদের বাড়িতে ঢুকতেই প্রথম এট্যাকটা এলো মঞ্জুসার ওপরে।
ঈশানি চিৎকার করে বললো, আপনার জন্যই আজ আমার ছেলেটা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। আমি স্কুলে গিয়েও শুনলাম, আপনি নাকি ওকে আলাদা ঘরে বসিয়ে কি সব যুক্তি দিয়েছেন। ছেলে আমাকে কিছুই বললো না। কিন্তু ওদের সাইন্সএর ম্যাম বললেন, আপনার সাথে ও ছিল বেশ কিছুক্ষণ।
লজ্জা করে না, স্কুলের আরেকজন শিক্ষকের সাথে ফস্টিনস্টি করে বেড়াচ্ছেন, আর বাচ্চাগুলোকে খারাপ শিক্ষা দিচ্ছেন। আমি আজই প্রিন্সিপ্যালকে কমপ্লেন দিচ্ছি, আপনাদের দুজনকেই যেন স্কুল ছাড়া করা হয়।
শৌর্য বাবু ধীরে ধীরে বললেন, ম্যাম আমি আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম, তখন বুঝিনি আপনি এরকম কোন ষড়যন্ত্র করছেন। প্লিজ, আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন। দিশেহারা লাগছিলো মঞ্জুসার। রাতুল কোথায় তার বিন্দু বিসর্গও জানে না ও।
ঈশানি বললো, প্রায় বলতো, আন্টি বলেছে, পড়াশোনাটাই শেষ কথা নয়, ভালোবেসে পড়তে হবে, নিজেকে ভালোবাসতে হবে। তবে না নিজের চারপাশের সব কিছুকে ভালোবাসতে পারবে। এসব কথা কি ওই ছোট্ট মাথাটা ঢোকে?
তাই আমার ছেলেটা আজ কোথায় চলে গেলো আমি বুঝতেও পারছিনা। ক্লাসের ফার্স্ট বয়কে এত জ্ঞান দেবার কি আছে বলবেন?
আমি আপনার বিরুদ্ধে স্টেপ নেবো। ড্রয়িং টিচারের সাথে নোংরামি করে বেড়াচ্ছেন, আপনি শেখাবেন সহবত। ঈশানির চোখ দুটো জ্বলছে।
মঞ্জুসা অসহায় ভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ চোখে পড়লো, ড্রয়িংরুমের কর্নারে এক ভদ্রমহিলা সন্ত্রস্ত ভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলেন। বাড়ি শুদ্ধু সবাই কাঁদছিলো কিন্তু মহিলার চোখে জল নেই, বরং একরাশ আতংক।
মঞ্জুসা আস্তে আস্তে সকলের চোখ এড়িয়ে ভদ্রমহিলার সামনে গিয়ে বলল, রাতুল কোথায়?
আপনি জানেন রাতুল কোথায়?
ভদ্রমহিলা বললো, আমি ওর জেঠিমা, আমাকে ও বম্মা বলে ডাকে। আমি ওকে নিজের ছেলের মতোই দেখি। আপনার কি মনে হয়, আমি ওর ক্ষতি করতে পারি! কিন্তু ঈশানি কিছুতেই বুঝছে না, ছেলেটা ভুল করতে যাচ্ছিলো। আর সেটা ওর জন্যই। মঞ্জুসা বললো, এখন রাতুল কোথায়?
ভদ্রমহিলা বললেন, আমি জানিনা।
জানি না শব্দটার মধ্যে তেমন জোর নেই, দেখেই মঞ্জুসা বললো, আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
মহিলার নাম রচনা, এর কথাই সেদিন রাতুলের বাবা বলছিলেন। মঞ্জুসা নিজের ফোন নম্বরটা একটা কাগজে লিখে ভদ্রমহিলার হাতে দিয়ে দিল।
সৃজন বললো , মঞ্জুসা চল পালাই, মনে হচ্ছে পুলিশ কেস হবে। তুই যেহেতু সকালে ওর সাথে ছিলিস, তাই এরেস্ট হওয়ার সম্ভবনা আছে। মঞ্জুসা বললো, পালিয়ে যাবো কোথায়? রাতুলের মা এই মানসিক অবস্থাতেও ম্যানেজিং কমিটি থেকে পুলিশ সবাইকে ফোন করেছে রে। কিন্তু আমাকে যদি এখন এরেস্ট করে তাহলে আমি রাতুলকে খুঁজে বের করবো কি করে?
সৃজনের বাইকটা ছুটছে....অন্ধকারের বুক চিরে ওরা দুজন পালাচ্ছে। একটা পাঁচ তলা ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে সৃজন বললো, চল আজ রাতটা বড় মামার কাছে থাকি। কাল ভোরে ভাবা যাবে।
সৃজনের বড় মামার বয়েস হয়েছে, বই পাগল মানুষ। সবটা শুনে বললো, তোরা যে এখানে এসেছিস কেউ জানে না তো?
তাহলে ফোনের সিম দুটো খুলে রাখ।
মঞ্জুসা ফোনটা অফ করতে যাবে ঠিক সেই সময় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোনটা এলো।
ধরা গলায় বললো, বাড়িতে পুলিশ এসেছে। আমি রচনা, রাতুলের বম্মা। আমার খুব প্রয়োজন আপনার সাথে। কি ভাবে যোগাযোগ করবো!
রাতুল খুব কাঁদছে, আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।
মঞ্জুসা সৃজনের মামার এড্রেসটা দিলো খুব সাবধানে।
টিভির নিউজ চালাতেই টিউলিপের খবর।
স্কুলের সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলরের পরামর্শে ক্লাস ফোরের ছেলে রাতুল ব্যানার্জী বাড়ি থেকে ফেরার। ক্লাস ফোরের ফার্স্ট বয় রাতুল নাকি তার মাকে বলেছিল, তুমি কেন আন্টির মত নয়।
পাওয়া যাচ্ছে না টিউলিপের শিক্ষিকা মঞ্জুসা চৌধুরীকেও।
সৃজন বললো, তোর বাড়িতে একটা কল করে দিচ্ছি আমি। তুই ফোন করিস না এখন।
চ্যানেল ঘোরাতেই শুনতে পেল মঞ্জুসার মত মেয়েরা শিক্ষকতা পেশার কলঙ্ক। এদের জন্যই ছাত্র ছাত্রীরা ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নামি স্কুলে চাইল্ড কাউনসেলিং এর নামে ভুলভাল মানুষকে নিয়োগ করা হচ্ছে। তারা বাচ্চাদের দুর্বুদ্ধি দিচ্ছে। বাবা-মাকে অসম্মান করতে শেখাচ্ছে। এদের ইমিডিয়েট শাস্তি চাই।
সৃজন বললো, মঞ্জুসা কি করবি এখন। পুলিশের কাছে স্যারেন্ডার করবি, নাকি অন্য কিছু ভাবছিস!
মঞ্জুসা ঢকঢক করে জলটা খেয়ে বললো, রাতুল আসছে আমার কাছে। সে নাকি আমার কাছে আসবে বলে বায়না করেছে।
সৃজন চমকে বললো, এখানে? কিন্তু আমরা ফেঁসে যাবো। পুলিশ বলবে, আমরাই ওকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমরা শিশু পাচারকারী, তখন কি করবো? এখানে কেন আসতে বললি, কাল স্কুলে যেতে কেন বললি না !
মঞ্জুসা ধীর গলায় বললো, এই মুহূর্তে যদি ঐ ছোট ছেলেটার পাশে না দাঁড়াই তাহলে নিজেকে শিক্ষক বলা দূরে থাক, মানুষ ভাবতেই ঘেন্না করবে রে। তোর সমস্যা থাকলে তুই চলে যা, আমি একাই লড়বো। সৃজন বললো, বোঝো কান্ড! বললাম না আমি সিঙ্গেল, তোর যেদিন এই ব্যাচেলর যুবকের প্রতি দয়া হবে, সেদিন তুই চোখ তুলে তাকাতেই পারিস, আমি দুয়ার খুলে দাঁড়িয়ে আছি...আর মিলছে না রে লাইনটা। টেনশনে টয়লেট পেয়ে যাচ্ছে।
মঞ্জুসা বললো, আমি আপাতত রাতুলকে নিয়ে চিন্তা করছি রে। ছেলেটা কেন হঠাৎ বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইলো সেটাই জানতে চাইছি। নিজেকে নিয়ে পরে ভাববো। সৃজন হাসি মুখে বললো, তোকে দেখে এই মুহূর্তে আমার খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। ভালোবাসাও মানুষের মস্তিষ্কে থাকে রূপে নয়।
কলিংবেলটা বাজতেই সচকিত হলো ওরা। বড় মামা আইহোল দিয়ে দেখে বললেন, একজন মহিলা সাথে একটি বাচ্চা।
দরজাটা খুলতেই রাতুল একছুটে চলে এলো মঞ্জুসা কোলে। এসেই কোলের মধ্যে মুখ লুকিয়ে বসে রইল। পাশে রচনা দেবী আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বললেন, কাল এক্সাম দিয়ে আসার পরই ঈশানি ওকে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

রোজই এক্সামের পর এটা করছিলো। আমরা ভাবি হয়তো কোশ্চেনপেপার দেখছিলো, বা ছেলে সব ঠিক লিখেছিল কিনা দেখছিলো। ঘন্টাখানেক পরে দরজা খুলে যায়। ঈশানি রান্না ঘরে এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাতুল কি পাস্তা খাবে? বানিয়ে দেব! বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার দিকে হিংস্র ভাবে তাকিয়ে বলে, নিজের ছেলে নেই বলে আমারটার দিকে চোখ....তোমার দৃষ্টিতেই আজ ছেলেটার এক্সাম খারাপ হলো। আমাকে এই ধরণের কথা এর আগেও বলেছে, আমি কিছু বলি না।
মঞ্জুসা বললো, রাতুলকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলেন?
আমার ঘরের ডিভানের পিছনের খাঁজটা ওদের লুকোচুরির জায়গা। টুবলু আর আমার মেয়ে রিয়া যখন খেলে তখন দেখেছি টুবলু ওখানে লুকায়। আজও ঘন্টা খানেক পরে ঈশানি হাউমাউ করে এসে বললো, টুবলুকে কোথায় পাচ্ছি না। সারা বাড়ি, প্রতিবেশীদের বাড়ি খুঁজে আসার পরেও ছেলেকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না। আমি ঘরে ঢুকেছিলাম কিছুটা নেব বলে, হঠাৎ একটা ফোঁপানির আওয়াজ পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজছিলাম, কোথাও কিছু নেই, অথচ আওয়াজটা আসছে। তখন মাথায় এলো ওদের লুকিয়ে থাকার জায়গাটা। গিয়ে দেখি ছেলে কাঁদছে। আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলছে, আন্টির কাছে যাবো। আন্টি বলেছিলো, সবাইকে ভালোবাসতে, আন্টি বলেছিলো, এক্সামে এক নম্বর কম পেলেও জীবনের কোন পরিবর্তন হয়না। এদিকে তখন ঈশানি আমার দিকে আঙুল তুলেছে, আমি ভয়ে টুবলুকে বের করতে পারছিলাম না। তার কিছুক্ষনের মধ্যেই আপনি এলেন বাড়িতে। তখন আমি টুবলুর জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলাম ঘরে।
এখন আমি ওকে নিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি। তবে ঈশানি জানতে পারলে কিডন্যাপিংয়ের জন্য আমাকে জেলে ভরবে। অথচ ছেলেটা কিছুতেই মায়ের কাছে যেতে চাইছে না। শুধু বলছে আমি আন্টির কাছে যাবো। আন্টি সব জানে।
মঞ্জুসা বললো, আপনারা প্লিজ পাশের ঘরে যান।
আমি রাতুলের সাথে চকলেট খাবো এখন।
রাতুলের চোখ দুটো কেঁদে কেঁদে লাল হয়ে গেছে।
মঞ্জুসা বললো, রাতুল তুমি তো দারুন সাহসী ছেলে। হাইড এন্ড সিক খেলে তুমি জিতে গেছো, জানো। পুলিশ অঙ্কেলরাও তোমাকে খুঁজে পায়নি। আমাকে একদিন তোমাদের বাড়ির ওই লুকানোর জায়গায় লুকিয়ে রাখবে? রাতুল বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে বললো, পুলিশ অঙ্কেলরাও খুঁজে পাবে না?
ওটা তো আমাকে দিদিভাই দেখিয়েছিল।
রাতুল, জানো আমি একবার ছোট বেলায় ক্লাসের পরীক্ষায় ফোর্থ হয়েছিলাম, সেবার আমার পাপা আমাকে একটা ইনডোর গেম কিনে দিয়েছিল।
রাতুল বললো, ফোর্থ হলেও গিফ্ট! তোমার মা স্টার হয়ে যায়নি? তোমার গলাতেও কাপড় বেঁধে দেয় নি।
চমকে উঠলো মঞ্জুসা। মোবাইলের রেকর্ডারটা অন করে বললো, কাপড় তো আমি পরতাম, সরস্বতী পুজোয়। কিন্তু তুমি তো ছেলে, তুমি কেন কাপড় পরবে!
রাতুল কোল থেকে মুখটা তুলে বললো, তুমি এত বোকা কেন গো আন্টি।
গলায় কাপড় বাঁধলে তো মানুষ মরে যায়, তুমি জানো না। মা তো আজ আমি দুটো কোশ্চেন পারিনি বলে, নিজের আর আমার গলায় কাপড় বেঁধে ছিল। আমি ছুটে পালিয়ে এসেছিলাম। নাহলে আমিও স্টার হয়ে যেতাম।
মা তো প্রতিটা এক্সামের পর দরজা বন্ধ করে সব কোশ্চেন মেলায়, আমি ভুল করেছি বুঝতে পারলেই, গলায় কাপড় বেঁধে বলে, স্টার হয়ে যাবো।
ফুঁপিয়ে কাঁদছে ছেলেটা। আমি তো সব সময় পড়ি আন্টি। বম্মা আমাকে বাংলা পড়ায়। মা সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ পড়তেই দেয় না। বলে বাংলা শিখে কি হবে! মা বম্মাকে বাজে কথা বলে।
মা জানে না, সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজে কম পেলে আমি ফার্স্ট হবো না। আর ফার্স্ট না হলে মা স্টার হয়ে যাবে। মা বলেছে, বন্ধ ঘরের কথা কাউকে বললেও কিন্তু মা মরে যায়। আমি কাউকে বলিনি আন্টি। তোমাকে বললেও কি মা স্টার হয়ে যাবে। রাতুল কাঁদছে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। পিঠটা ফুলে উঠছে।
মঞ্জুসা বললো, বিলিভ মি রাতুল, আমি এত ছিঁচ কাঁদুনে ছেলে আর দেখিনি। ইস, ডোরেমন, নোবিতা এরা কত সাহসী, আর রাতুল বাবু শুধু কাঁদে। রাতুল বললো, আন্টি তুমি ডোরেমনের গেজেটগুলো আমাকে এনে দেবে। এমন একটা গেজেট এনে দাও যাতে, মা আর স্টার হবার কথা না বলে।
রাতুলের মুখে চকলেটটা ঢুকিয়ে দিয়ে মঞ্জুসা বললো, ডোরেমনের সব গেজেট তো আমার কাছেই। তুমি একটা কাজ করলেই সব গেজেট তোমার।
রাতুল অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলল, কি কাজ!
আমার কাছে যে কথাগুলো বললে, সেটা সবার সামনে বলতে হবে।
রাতুল প্রবল বেগে মাথা নেড়ে বললো, কিছুতেই না। তাহলেই আমার মা স্টার হয়ে যাবে।
মঞ্জুসা কানে কানে বললো, আরে আমাদের কাছে তো ডোরেমনের গেজেট আছে, মা স্টার হতে গেলেই গেজেট দিয়ে চেপে ধরবে।
রাতুল কান্না কান্না মুখে সরল হেসে বললো, খুব মজা হবে।



রাত বেশ হয়েছে। সৃজন বললো, এখন আর কোনো স্টেপ নেওয়া ঠিক হবে না। কাল সকালে যা কিছু করার করতে হবে।
ভোরেই মঞ্জুসার ফোন পেয়ে , রাতুলের বাবা মা,স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল,মিডিয়া ,পুলিশ সব হাজির টিউলিপ স্কুলের সামনে। ঈশানির ভয়ে রচনা দেবী আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন।
ঈশানি এসেই চিৎকার করে বললেন, বলেছিলাম না, আমার ছেলেকে ওরাই লুকিয়ে রেখেছে। এটা ওই ম্যাডামের কারসাজি। ম্যাডামের প্রিয় কোনো স্টুডেন্টকে এবারে স্ট্যান্ড করানোর ধান্দায় আমার ছেলেটাকে লুকিয়ে রেখেছে। সব স্কুল সমান। নিজেদের পছন্দমত ছেলেকে পজিশন দেবার জন্য এসব করছে। ঈশানি হাত বাড়িয়ে ডাকলো রাতুলকে। পুলিশ রেডি মঞ্জুসাকে এরেস্ট করবে বলে। মিডিয়াতে ছবি উঠছে..
প্রিন্সিপ্যাল বললেন, একজন টিচারের জন্য আমাদের স্কুলের বদনাম করবেন না প্লিজ। আমরাও চাই এই ক্রিমিনালের কঠিন শাস্তি হোক।
ঈশানি বললো, সারারাত আমার ছেলেটার ওপরে নিশ্চয়ই খুব অত্যাচার করেছে।
টুবলু আয় চলে আয় বাবা।
রাতুল যদি সত্যিটা না বলে তাহলে, হয়তো মঞ্জুসা এরেস্ট হবে। পরিস্থিতি খুবই জটিল হয়ে গেছে। অন্যান্য গার্জেনরাও ক্ষেপে আছে , ঈশানির কথা বিশ্বাস করে। রাতুল নিশ্চুপ হয়ে দেখছে, কিছুটা বোধহয় ঘাবড়ে গেছে। মঞ্জুসা বললো, রাতুল আমাদের কাছে কিন্তু ডোরেমনের গেজেট আছে।
মহিলা পুলিশ এগোচ্ছে মঞ্জুসার দিকে।
রাতুল কান্না ভেজা গলায় চিৎকার করে বললো, আমি বম্মার কাছে থাকবো, আন্টির কাছে থাকবো, মার কাছে নয়। শৌর্য বাবু ধীরে ধীরে বললেন, অফিসার দাঁড়ান, ম্যামকে এরেস্ট করার আগে টুবলুর কাছ থেকে গোটা ঘটনাটা আগে শুনি।
টুবলু কোনো ভয় নেই, তুই সবটা বল। সৃজন বললো, রাতুল আগামী কাল ভাবছি ড্রয়িং ক্লাসটা অফ করে ফুটবল খেলবো আমরা। এক্সাম শেষ, তাই আমাদের যা খুশি করবো।
আমি জানি রাতুল ব্রেভ বয়, দারুন ফুটবল খেলে তাই না!
রাতুল ঘাড় নেড়ে বললো, মা খেলতে দেয় না। জোর করে পিয়ানো শেখায় আমায়। মা গলায় ফাঁস দিয়ে বলে, যদি ফার্স্ট না হোস তাহলে তুইও মর , আমিও মরি। ঈশানি হাসতে হাসতে বললো, ধুর পাগল, আমি কি ওটা সত্যি সত্যি বলি নাকি!
তুই যাতে ভয় পেয়ে পড়ে নিস, তাই বলি।
মঞ্জুসা বললো, জাস্ট সাট আপ। আপনার মত মেন্টাল পেশেন্টদের জন্য আজ ছেলেগুলো সঠিক ভাবে বাড়তে পারছে না। দোষ হচ্ছে স্কুলের।
মঞ্জুসা প্রিন্সিপ্যালের দিকে তাকিয়ে বললো, এক একটা ছেলেকে এত এত কোর্স কমপ্লিট করতে হচ্ছে, এরা শিখছে না কিছুই। ভয়ে ভয়ে সব বুড়ি ছুঁয়ে যাচ্ছে। মার্কসের পিছনে ছুটতে গিয়ে বেসিক নলেজটাও পাচ্ছে না। কোন স্কুল কত বেশি স্ট্যান্ডার্ড বোঝাতে গিয়ে গাদা গাদা সাবজেক্ট এড করছেন সিলেবাসে। একবার ভেবে দেখবেন তো একটা আট-নয় বছরের ছেলে কী করে এগুলো মাথায় রাখবে। ছেলে মেয়েকে ফার্স্ট করতে গিয়ে আপনারা বাচ্চাগুলোর ব্রেনে প্রেসার দিচ্ছেন। এরাই বড় হয়ে সাইকো পেশেন্ট তৈরি হচ্ছে।
এরা খেলতে পারছে না, রূপকথার রাজ্যে বিচরণ করতে পারছে না। এরা স্বপ্ন দেখতে জানে না।
ছেলে কেন মনমরা হয়ে আছে সেটা না খুঁজে ছেলে কিসে এক নম্বর কম পেলো, মিসেস গুপ্তার বাচ্চার থেকে পিছিয়ে গেল কিনা নিয়ে ব্যস্ত আপনারা! অথচ ছেলেটার মনে এক নাগারে রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে। অন্যের বাচ্চার সাথে তুলনা করে করে, নিজের সন্তানের কনফিডেন্স লেভেল তো তলানিতে নিয়ে যাচ্ছেন। রাতুল আস্তে আস্তে বললো, পুরো ঘটনাটা। শৌর্য তাকিয়ে আছে ঈশানির দিকে, ওর চোখে ঘৃণা। রাতুল তখনো জড়িয়ে ধরে আছে মঞ্জুসাকে।
ঈশানির মাথা নিচু। চোখে জল...
মঞ্জুসা বললো, ছেলেটাকে আর হয়তো খুঁজেই পেতেন না, তখন কাকে নিয়ে শুরু করতেন র‍্যাট রেস!
ঈশানি বললো, টুবলু আমার কাছে আয় প্লিজ। আমি আর কখনো স্টার হবার কথা বলবো না।
রাতুল মঞ্জুসার কানে কানে বললো, ডোরেমনের গেজেট কাজ করেছে আন্টি।
এখন সবাই আছে, তুমি গেজেট টা ব্যাগেই রাখো বের করো না। শোনো আন্টি, এবারের টিচার্সডে তে আমি তোমাকে একটা দারুন কার্ড দেবো, বেস্ট টিচার লিখে। এখন কি আমি মায়ের কাছে যেতে পারি?
মঞ্জুসা বললো, এক ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলো, তুমি মাকে সব থেকে বেশি ভালোবাসো।
রাতুল ছুটে গিয়ে ঈশানিকে জড়িয়ে ধরলো। ঈশানি এদিক ওদিক তাকিয়ে রচনাকে ডেকে বললো, সরি দিদিভাই।
রাতুল মঞ্জুসার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো, আন্টি ডোরেমনের গেজেট দারুন কাজ করেছে। মা আর বম্মার ভাব হয়ে গেছে।
সৃজন কানে কানে বললো, আমার জন্য ডোরেমন কোনো গেজেট রেখেছে কি ম্যাম! আমি হতভাগা ড্রয়িং টিচার....সিঙ্গেলদের কষ্টটা কি ডোরেমন বুঝবে...
রাতুল গাড়িতে ওঠার আগে আবার ছুটে এসে মঞ্জুসাকে চুমু খেয়ে গেল। বলে গেলো, লাভ ইউ আন্টি। ইউ আর মাই বেস্ট টিচার।

সমাপ্ত
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।