পুরোধা ব্যক্তিত্ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ....✍পিঙ্কি চক্রবর্তী
অন্যরকম
এক নতুন দিগন্তের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পিঙ্কি চক্রবর্তী
বিংশ শতকের শেষার্ধে আবির্ভূত একজন প্রথিতযশা উত্তর-আধুনিক বাঙালি সাহিত্যিক হলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । মৃত্যুপূর্ববর্তী চার দশক তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিগণিত হন । ১৯৩৪ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মাদারিপুর সাবডিভিশনের ‘মাইঝপাড়া’ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । কিশোর বয়েসেই তিনি কোলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানেই পড়াশোনা করেন । কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকোনমিক্স নিয়ে তিনি এম. এ. করেন । কর্মজীবনের প্রথমে তিনি টিউশানি পড়ানো শুরু করেন তারপর নানান রকম অভিজ্ঞতার পর আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন ।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে তিনি স্মরণীয় । তাঁর কবিতার ভাষা ছিল উত্তর-আধুনিক এবং কথ্য ভাষার ব্যবহারে বিন্যস্ত । সাহিত্য সমালোচকরা তাঁকে জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি রূপে আখ্যায়িত করেন । একদিকে সুতীব্র রোম্যান্টিক ভাবাবেগে তিনি যেমন তৈরি করেছেন প্রণয়ী নীরা চরিত্র তেমনই একাধিক কবিতায় তুলে ধরেছেন সমকালীন নাগরিক জীবনের ক্ষয়িষ্ণু জীবনযাত্রার চালচিত্র । জনপ্রিয়তম এক কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি’ তে তিনি আবরণহীন সত্যসন্ধানে ব্রতী হয়ে লিখেছেন –
“কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো !
কেউ কথা রাখে না !”
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে । সুনীল গাঙ্গুলির অন্যান্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘বন্দী জেগে আছো’ (১৯৬৮), ‘আমার স্বপ্ন’ (১৯৭২), ‘ ‘এসেছি দৈব পিকনিকে’ (১৯৭৭), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’(১৯৭৮) ‘সোনার মুকুট থেকে’ (১৯৮১),‘স্মৃতির শহর’ (১৯৮৩), ‘রাত্রির রঁদেভু’ (১৯৯৫), ‘সেই মুহূর্তে নীরা’ (১৯৯৭), ‘ভালোবাসার খণ্ডকাব্য’ (২০০০) প্রভৃতি ।
কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস রচনাতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । পূর্ববাংলার স্মৃতিবিধুর অভিজ্ঞতা এবং কোলকাতার নাগরিক জীবনচর্চার সমন্বয়ে তিনি একাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস লেখেন । তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ ১৯৬৬ সালে শারদীয়া ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় । তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের মধ্যে ‘অর্জুন’ (১৯৭০), ‘জীবন যেরকম’ (১৯৭১), ‘আমিই সে’ (১৯৭৪), ‘পূর্ব পশ্চিম- ১ম ও ২য় খণ্ড’ (১৯৭৮), ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ (১৯৭৮), ‘সেই সময়- ১ম ও ২য় খণ্ড (১৯৮১-৮২) প্রভৃতি উপন্যাস বিশেষ জনপ্রিয়তার দাবী রাখে । তাঁর লেখনীর ঘরোয়া কথনভঙ্গী, প্রাত্যহিক জীবনের রূপায়ন, এবং যৌবনের উৎসাহ ও আবগের প্রকাশ তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা দেয় । ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে তিনি একাধিক কাহিনি রচনা করেন যেখানে স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি তরুনের স্বপ্নভঙ্গ, আশা ও আশাহীনতার নিগূড় সত্যিটা ভাস্বর হয়ে উঠেছে ।
কাকাবাবু ও সন্তুকে নিয়ে তাঁর লেখা একাধিক অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিশোরকাহিনি বাঙালি পাঠককে বিস্মিত মুগ্ধতা দান করে । ‘মিশর রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও কয়েকজন’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘কাকাবাবু এবং একজন আততায়ী’ প্রভৃতি কাকাবাবু সিরিজের উল্লেখযোগ্য কাহিনি । এছাড়াও ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ , ‘সত্যি রাজপুত্র’ (১৯৭৮), ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ (১৯৭৮) প্রভৃতি তাঁর কালজয়ী কিশোর উপন্যাস । সামাজিক নানান বিষয় এবং প্রেম সম্পর্কিত একাধিক ছোটগল্প রচনাও তাঁর গদ্যসাহিত্যের স্মরণীয় কৃতিত্ব । ‘প্রানের প্রহরী’, ‘মালঞ্চমালা’, ‘রাজা রাণী ও রাজসভায় মাধবী’ প্রভৃতি তাঁর রচিত নাটকসমূহ । স্বচ্ছ চিন্তা এবং সত্য ভাষণের আলখ্যে রচিত তাঁর প্রবন্ধগুলিও বিশেষ সাহিত্যগুনের দাবিদার । ‘ছবির দেশ কবিতার দেশ’, ‘আমার জীবনানন্দ আবিস্কার ও অন্যান্য’, ‘তাকাতে হয় পিছন ফিরে’, ‘ইতিহাসে স্বপ্নভঙ্গ’ প্রভৃতি তাঁর রচিত প্রবন্ধসমূহ ।
সাহিত্যরচনার পাশাপাশি পত্রিকা সম্পাদক হিসেবেও তিনি বাংলা সাহিত্যে অন্যতম হয়ে আছেন । ১৯৩৪ সালে তিনি দীপক মজুমদার ও আনন্দ বাগচির সাথে তরুন কবিদের মুখপত্র ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাটির সম্পাদনা শুরু করেন ।
এই সুবিশাল সাহিত্যসৃষ্টি এবং সাহিত্য সম্পাদনার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হন । ১৯৭২ এবং ১৯৮৯ সালে ‘আনন্দ পুরস্কার’, ১৯৮০ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘স্বর্ণকমল পুরস্কার’, ১৯৮৩ সালে ‘বঙ্কিম সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে ‘সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার’ লাভ করেন ।
উত্তর আধুনিক কবিতা, মর্মভেদী গদ্যসাহিত্য, সৃজনশীল প্রবন্ধ, বিস্ময়কর শিশুসাহিত্য রচনা এবং মননশীল পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তিনি আধুনিক সাহিত্যজগতের এক নতুন দিগন্তের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হয়ে চির উজ্জ্বল হয়ে আছেন । ২০১২ সালের ২২শে অক্টোবর এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পরলোক গমন করেন ।
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে তিনি স্মরণীয় । তাঁর কবিতার ভাষা ছিল উত্তর-আধুনিক এবং কথ্য ভাষার ব্যবহারে বিন্যস্ত । সাহিত্য সমালোচকরা তাঁকে জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি রূপে আখ্যায়িত করেন । একদিকে সুতীব্র রোম্যান্টিক ভাবাবেগে তিনি যেমন তৈরি করেছেন প্রণয়ী নীরা চরিত্র তেমনই একাধিক কবিতায় তুলে ধরেছেন সমকালীন নাগরিক জীবনের ক্ষয়িষ্ণু জীবনযাত্রার চালচিত্র । জনপ্রিয়তম এক কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি’ তে তিনি আবরণহীন সত্যসন্ধানে ব্রতী হয়ে লিখেছেন –
“কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো !
কেউ কথা রাখে না !”
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে । সুনীল গাঙ্গুলির অন্যান্য বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘বন্দী জেগে আছো’ (১৯৬৮), ‘আমার স্বপ্ন’ (১৯৭২), ‘ ‘এসেছি দৈব পিকনিকে’ (১৯৭৭), ‘হঠাৎ নীরার জন্য’(১৯৭৮) ‘সোনার মুকুট থেকে’ (১৯৮১),‘স্মৃতির শহর’ (১৯৮৩), ‘রাত্রির রঁদেভু’ (১৯৯৫), ‘সেই মুহূর্তে নীরা’ (১৯৯৭), ‘ভালোবাসার খণ্ডকাব্য’ (২০০০) প্রভৃতি ।
কবিতার পাশাপাশি উপন্যাস রচনাতেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । পূর্ববাংলার স্মৃতিবিধুর অভিজ্ঞতা এবং কোলকাতার নাগরিক জীবনচর্চার সমন্বয়ে তিনি একাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস লেখেন । তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ ১৯৬৬ সালে শারদীয়া ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় । তাঁর বিশাল রচনা সম্ভারের মধ্যে ‘অর্জুন’ (১৯৭০), ‘জীবন যেরকম’ (১৯৭১), ‘আমিই সে’ (১৯৭৪), ‘পূর্ব পশ্চিম- ১ম ও ২য় খণ্ড’ (১৯৭৮), ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ (১৯৭৮), ‘সেই সময়- ১ম ও ২য় খণ্ড (১৯৮১-৮২) প্রভৃতি উপন্যাস বিশেষ জনপ্রিয়তার দাবী রাখে । তাঁর লেখনীর ঘরোয়া কথনভঙ্গী, প্রাত্যহিক জীবনের রূপায়ন, এবং যৌবনের উৎসাহ ও আবগের প্রকাশ তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা দেয় । ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে তিনি একাধিক কাহিনি রচনা করেন যেখানে স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালি তরুনের স্বপ্নভঙ্গ, আশা ও আশাহীনতার নিগূড় সত্যিটা ভাস্বর হয়ে উঠেছে ।
কাকাবাবু ও সন্তুকে নিয়ে তাঁর লেখা একাধিক অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কিশোরকাহিনি বাঙালি পাঠককে বিস্মিত মুগ্ধতা দান করে । ‘মিশর রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও কয়েকজন’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘কাকাবাবু এবং একজন আততায়ী’ প্রভৃতি কাকাবাবু সিরিজের উল্লেখযোগ্য কাহিনি । এছাড়াও ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ , ‘সত্যি রাজপুত্র’ (১৯৭৮), ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ (১৯৭৮) প্রভৃতি তাঁর কালজয়ী কিশোর উপন্যাস । সামাজিক নানান বিষয় এবং প্রেম সম্পর্কিত একাধিক ছোটগল্প রচনাও তাঁর গদ্যসাহিত্যের স্মরণীয় কৃতিত্ব । ‘প্রানের প্রহরী’, ‘মালঞ্চমালা’, ‘রাজা রাণী ও রাজসভায় মাধবী’ প্রভৃতি তাঁর রচিত নাটকসমূহ । স্বচ্ছ চিন্তা এবং সত্য ভাষণের আলখ্যে রচিত তাঁর প্রবন্ধগুলিও বিশেষ সাহিত্যগুনের দাবিদার । ‘ছবির দেশ কবিতার দেশ’, ‘আমার জীবনানন্দ আবিস্কার ও অন্যান্য’, ‘তাকাতে হয় পিছন ফিরে’, ‘ইতিহাসে স্বপ্নভঙ্গ’ প্রভৃতি তাঁর রচিত প্রবন্ধসমূহ ।
সাহিত্যরচনার পাশাপাশি পত্রিকা সম্পাদক হিসেবেও তিনি বাংলা সাহিত্যে অন্যতম হয়ে আছেন । ১৯৩৪ সালে তিনি দীপক মজুমদার ও আনন্দ বাগচির সাথে তরুন কবিদের মুখপত্র ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকাটির সম্পাদনা শুরু করেন ।
এই সুবিশাল সাহিত্যসৃষ্টি এবং সাহিত্য সম্পাদনার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হন । ১৯৭২ এবং ১৯৮৯ সালে ‘আনন্দ পুরস্কার’, ১৯৮০ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘স্বর্ণকমল পুরস্কার’, ১৯৮৩ সালে ‘বঙ্কিম সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৫ সালে ‘সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার’ লাভ করেন ।
উত্তর আধুনিক কবিতা, মর্মভেদী গদ্যসাহিত্য, সৃজনশীল প্রবন্ধ, বিস্ময়কর শিশুসাহিত্য রচনা এবং মননশীল পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে তিনি আধুনিক সাহিত্যজগতের এক নতুন দিগন্তের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হয়ে চির উজ্জ্বল হয়ে আছেন । ২০১২ সালের ২২শে অক্টোবর এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পরলোক গমন করেন ।
সমাপ্ত
--------------------