বাঘা যতীন ....✍ধরিত্রী গোস্বামী
অন্যরকম
বাঘা যতীন
ধরিত্রী গোস্বামী
খড়্গপুরে থাকি। পাশেই উড়িষ্যা। হামেশাই আসাযাওয়া বালেশ্বর পেরিয়ে। এই সেদিন যেমন পুরী গেলাম। প্রিতবার ব্রিজ পেরুবার সময় চেয়ে চেয়ে দেখি বুড়িবালাম নদীর বালুচরে। মন বলে, ওইখানে ওইখানে কোথাও হারিয়ে গেছে আমার প্রকৃত স্বাধীনতার সম্ভাবনারা। রক্ত ঝরানো ইতিহাসের গৌরবগাঁথা মুখ লুকিয়েছে কৌশলী রাজনীতির বোঝাপড়ায়। সে পাপের বোঝা আমি বয়ে চলেছি, বয়ে চলেছে আমার সন্তান, হয়ত তার সন্তানও। ভেড়ার পালের মত বোকা ইভিএম মেশিনের সামনে দাঁড়াব বছর বছর, আর আমার আঙ্ুলের জোরেই সিংহাসনে চড়ে যে বসবে সেই আমাকে চেনাবে আমার পাশের বাড়ির চাচা আমার শত্রু।
বাঘা যতিন। আমরা বাঙালি পড়তে গিয়ে সেই ক্লাস ফোরে যে নামটি গাঁথা হয়ে গিয়েছিল মনে। আজও তাঁর কাহিনী গায়ে কাঁটা দেয়। যে মানুষটি সম্বন্ধে তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার কুখ্যাত চার্লস ট্রেগার্ট বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, "যদিও আমি আমার কর্তব্যটুকু পালন করেছি, আমি তাঁকে গভীর প্রশংসা করি। সম্মুখ সমরে শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তিনি লড়াই করেছিলেন।" ট্রেগার্ট ঘনিষ্ঠ মহলে এও বলেছিলেন যে যতিন যদি ব্রিটেনে জন্মাতেন তাহলে ট্রাফাল্গার স্কোয়ারে তাঁর মূর্তি গড়ে রাখা থাকত। কিন্তু বাঙালি তাকে কতটুকু মনে রেখেছে? ভিক্এটোরিয়ার সামনে একটি মূর্তি কিংবা একটি মেট্রো স্টেশনের নামেই তার স্মৃতি অবলুপ্ত? এই বালেশ্বরেরই চাষাখন্ডে সরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এই বীর পুরুষ, সেটি এখন মেয়েদের স্কুল। অদূরে তাঁর নামে একটি পার্ক। সবই যত্নের অভাবে দুর্দশা গ্রস্থ।
আজ গাড়ি থামিয়ে নেমে ব্রিজের ওপর থেকে বর্ষার ঘোলা জলে ভরভরন্ত নদীর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে রইলাম। কাল স্রোতে কত কি ভেসে গেছে। কত স্বপ্ন, কত আত্মবলিদান। কত দুঃসাহসী পদযাত্রা। যে বিপ্লবীর পরিকল্পনা পূরণ হলে, স্বদেশী সেনা বাহিনী আর সশস্ত্র বিপ্লব যদি ঘটানো যেত, এ দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসটা অন্য ভাষায় লেখা হত তাহলে।
হয়নি। তাই আজ ভায়ে ভায়ে লড়াই করি। প্রতিবেশীকে সন্দেহ করি। গরু মোষ হনুমানকে নিয়ে রাজনীতি করি। সেদিন যে রক্ত ঝরাতে পারিনি, আজ প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও রক্ত ঝরিয়ে শোধ দিচ্ছি নিজেদের অসমর্থতা।
বুড়িবালাম নদীর কাছে নিজের পাপের, আমার পিতার পাপের, আমার সন্তানের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ছায়াছন্ন সন্ধ্যার আঙিনায় দাঁড়িয়ে।
বাঘা যতিন। আমরা বাঙালি পড়তে গিয়ে সেই ক্লাস ফোরে যে নামটি গাঁথা হয়ে গিয়েছিল মনে। আজও তাঁর কাহিনী গায়ে কাঁটা দেয়। যে মানুষটি সম্বন্ধে তৎকালীন কলকাতার পুলিশ কমিশনার কুখ্যাত চার্লস ট্রেগার্ট বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, "যদিও আমি আমার কর্তব্যটুকু পালন করেছি, আমি তাঁকে গভীর প্রশংসা করি। সম্মুখ সমরে শেষ নিঃশ্বাস অব্দি তিনি লড়াই করেছিলেন।" ট্রেগার্ট ঘনিষ্ঠ মহলে এও বলেছিলেন যে যতিন যদি ব্রিটেনে জন্মাতেন তাহলে ট্রাফাল্গার স্কোয়ারে তাঁর মূর্তি গড়ে রাখা থাকত। কিন্তু বাঙালি তাকে কতটুকু মনে রেখেছে? ভিক্এটোরিয়ার সামনে একটি মূর্তি কিংবা একটি মেট্রো স্টেশনের নামেই তার স্মৃতি অবলুপ্ত? এই বালেশ্বরেরই চাষাখন্ডে সরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এই বীর পুরুষ, সেটি এখন মেয়েদের স্কুল। অদূরে তাঁর নামে একটি পার্ক। সবই যত্নের অভাবে দুর্দশা গ্রস্থ।
হয়নি। তাই আজ ভায়ে ভায়ে লড়াই করি। প্রতিবেশীকে সন্দেহ করি। গরু মোষ হনুমানকে নিয়ে রাজনীতি করি। সেদিন যে রক্ত ঝরাতে পারিনি, আজ প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও রক্ত ঝরিয়ে শোধ দিচ্ছি নিজেদের অসমর্থতা।
বুড়িবালাম নদীর কাছে নিজের পাপের, আমার পিতার পাপের, আমার সন্তানের পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ছায়াছন্ন সন্ধ্যার আঙিনায় দাঁড়িয়ে।
সমাপ্ত
--------------------