স্কুল হোস্টেল ....✍সোমনাথ ব‍্যানার্জী




ভুতের গল্প

স্কুল হোস্টেল

সোমনাথ ব‍্যানার্জী


আমি যে ঘটনা টা বলছি তা আমার ছাত্রজীবনের ঘটনা। তখন আমি কলেজে পড়ি। আমি যে স্কুল থেকে HS পাস করেছিলাম সেই স্কুল আমার গ্রাম ও আর এক গ্রামের মাঝে অবস্থিত। তাই কলেজে গরমের ছুটিতে আমি ও আমার বন্ধুরা ঐ স্কুলের পিছনের বড় মাঠে ফুটবল খেলতে যেতাম। খেলা শেষ হলে ঐ মাঠে বসে আড্ডা দিতাম প্রায় ৮টা-৮:৩০ পর্যন্ত।
এবার সেদিনের কথায় আসা যাক। খেলা শেষে আমরা সবাই গলদঘর্ম, তার ওপর প্রচন্ড গরম। গাছের পাতা একটুও নড়ছে না। সবাই একটা-একটা ছোট দল হয়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় বসে পড়লাম। আমরা যে কজন ছিলাম তারা হলাম, জোজো, বান্টি, বাবলু, রুপম, রাহুল ও আমি। আমরা বসলাম আমাদের স্কুলের আদিবাসী হোস্টেলের এর বাইরের খোলা বারান্দায়। কোলাপসেবল গেট দিয়ে ঘেরা আছে হোস্টেলের ভিতরটা। আগে অনেকে এখানে থেকে পড়াশোনা করত। এখন কেউ থাকে না। ঘড়গুলোরও ভগ্নদশা। রনিকে দেখলাম ঐ সন্ধ্যায় কানে মোবাইল দিয়ে কার হাতে কথা বলতে বলতে পুরো মাঠ হেঁটে যাচ্ছে। সব কটা দল থেকেই টিকাটিপ্পনি চলছে। এখান থেকে বাবলু বলে উঠল, "ওরে এবার তো ভিকট্রি ল‍্যাপ হয়ে যাবে।" রুপম বলল,"অন্ধকারে ঝোপের মধ্যে পড়বি এবার। ভূতে ধরেছে যেন।" রাহুল বলল, "নারে কানে মোবাইল ধরলে ভূত ও সাহস পায় না ধরার।" এই শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। কিন্তু জোজো ভূত এর নাম শুনে ভূত নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিল। আড্ডার সময় যদি ভূতের প্রসঙ্গ একবার আসে দেখা যায়, অলৌকিক ভাবে সবাই প্রচন্ড আগ্রহী হয়ে যায় ও সবাই এক-একটা ভূতের ঘটনা শোনাতে থাকে। আমাদের ও তাই হলো। এদিকে মাঠে ফুরফুরে হাওয়ায় পরিবেশ আরো আরামদায়ক হয়ে গেল।
        

জোজো বলল, " একদিন রাতে সাইকেল করে ফিরছিলাম............"গল্প চলতে থাকলো। আমরা সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম ও একজনের গল্প শেষ হলে আর এক জন শুরু করছিল। আমিও সবার মতো বিভোর হয়ে শুনছিলাম, হটাৎ ছাত্রাবাসের ঘর গুলির মধ‍্যে একটা ঘরের দরজা খুব জোরে বন্ধ হয়ে আবার খুলে গেল। সবাই চমকে গেলাম। প্রথমে জোজো ও তারপর আমরা সবাই বলে উঠলাম, "কে রে, কে রে?" এখানে বলেদিই, সেই সময় মাঠে হাওয়া চলাচল বন্ধ হয়ে গেছিল। আমরা পিছন ফিরে কোলাপসিবল গেটের ওপারে ঘর গুলোর দিকে চেয়ে ছিলাম। ঘরে টুকটাক কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। সাহস বারাবার জন‍্য যখন মাঠের অন‍্য সব ছেলেগুলোকে ডাকতে গেলাম তখন চমকে উঠলাম। চাঁদের আলোয় আলোকিত পুরো মাঠ টা, কিন্তু একটা ছেলেও নেই। সবাই কখন চলে গেছে। এবার মোবাইলে সময় টা দেখে আরো চমকালাম। ঘড়িতে তখন রাত ৯:৩০। গল্পে এত বিভোর যে আমরা বুঝতেও পারিনি কখন রাত হয়ে গেছে। গল্প করতে করতে আমাদের দল থেকেও ক'জন চলে গেছিল সেটাকেও আমরা তখন বুঝিনি। আমি জোজো ও বান্টি ছিলাম। এবার আবার চমকে উঠলাম একটা জানালার আওয়াজে। কিন্তু বাইরে হাওয়া বইছে না আগেই বলেছি। বান্টি উঁকি দিতে এগোচ্ছিল তখন জোজো আটকালো, বললো, " যাস না। চুপচাপ দাঁড়া, দেখি কি হয়।" আমি বললাম,"না, কি হচ্ছে একবার টর্চ মেরে দেখি।" বলতেই স্পষ্ট বুঝলাম কে একজন জোরে ছুটে চলে গেল। তৎক্ষণাৎ টর্চের আলো ফেললাম কিন্তু কিছু দেখতে পেলাম না। জোজো বললো, " কি ব‍্যাপার যে ঘটছে তা জানাও যাবে না। দুদিকের দরজাতেই তালা দেওয়া। ভিতরে না ঢুকলে আর কি করে জানবো।" এবার ভিতরের কোনো এক চৌকি বেশজোরে নড়ে উঠলো। আমি বললাম, "কেয়ারটেকার কে ঢেকে এনে দরজা খোলার ব‍্যবস্থা করি। কি বলিস?" এই কথাটা বলার পরই স্কুল মাঠের অন‍্য দিক দিয়ে ভারি গলায় কে বান্টিকে ডাকলো। বান্টি বললো, "ওই বাবা ডাকছে, চলো যাই, আজকের রহস‍্য এতটাই ।" আমাদের আচ্ছন্ন ভাবটা যেন কেটে গেল। তখন বান্টি "যাচ্ছি" বলে আমরা তিনজনেই একসাথে আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছিলাম। পিছনে হোস্টেলের দিক থেকে একটা হাসির শব্দ শুনলাম। আমি ঘুরে তাকাতে যাচ্ছিলাম হয়তো কিন্তু জোজো আটকে দিলো। বললো, "কেউ পিছন ফিরে তাকাস না। সোজা এখান থেকে যে যার বাড়ি।"এর পর আমরা চলে গেলাম। সেখানে কি ছিল তা আজো আমার কাছে এক রহস‍্য।
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।