পরলোকের ঘর ....✍তাপসকিরণ রায়
ভুতের গল্প
পরলোকের ঘর
তাপসকিরণ রায়
উঠে বসলেন রমাকান্ত। বাইরের অন্ধকার ছেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ল আবছায়ায় জানলার বাইরে কেউ যেন দাঁড়িয়ে আছে ! চমকে উঠলেন তিনি, আরে জানলার বাইরেও তো তিনিই দাঁড়িয়ে ! এ কি হল ? ছুটে জানলার কাছে পৌঁছেই দেখলেন নেই, কেউ তো নেই ? ঘরে সবাই ঘুমে বিভোর। স্ত্রীকে দেখলেই মনে হয় সে রাত্রি জাগরণ করেছে। আলুথালু তার চুল, অবিন্যস্ত তার বেশবাস।
রমাকান্ত প্রতিদিনের মত প্রাতঃভ্রমণে বেরলেন। ময়দানে কয়েক চক্কর তিনি হাঁটলেন। নির্মল বাবু আসতেই তিনি হাত উঠিয়ে, হায়, করলেন। কিন্তু নির্মল না দেখার ভান করে চলে গেলেন কেন ? হরিষ বাবুকে দেখে প্রশ্ন করলেন, কেমন আছেন ? হরিষ হেঁটে চলেছেন। রমাকান্ত এবার গলা ছেড়ে ডাক দিলেন। হরিষ তবু নিরুত্তর। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন রমাকান্ত, প্রেশারটা খুব বেড়েছে। মাথা ঘোরানোর পরিবর্তে সামনের দৃশ্যগুলি কেমন যেন পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। সামনের দৃশ্যগুলি কিছুটা এগিয়ে যেতে না যেতেই মিলিয়ে যাচ্ছে !
রমাকান্ত ঘরে ফিরে আসছেন। ভোর বুঝি এখনো চলছে। ছায়া ছায়া ভাব চারদিকে। একি, তুমি ? রমাকান্ত দেখলেন তার স্ত্রী ইলা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
--তুমি এখানে ?
ইলা বলে উঠল--তোমার শরীরটা ভাল নেই তাই--
ব্যাস পলক পড়তে না পড়তেই দৃশ্যান্তর ঘটে গেল। ইলা ভ্যানিস হয়ে গেল।
বাড়ির সামনে ভিড় লেগেছে। ভিড় কাটিয়ে রমাকান্ত নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। একি ? তাঁর পালঙ্কের বিছানাপত্র সরানো কেন ? রমাকান্তর মাথা ঘুরে গেল। তিনি জোরে, ইলা, বলে ডাক দিয়ে উঠলেন।
ইলা বাইরে বসে কাঁদছিল। হঠাৎ তাঁর স্বামীর আওয়াজ পেয়ে আনমনা জবাব দিল, আসছি ! ইলা স্থানকাল ভুলে ছুটে গেল ঘরে। সে ভয়ঙ্কর চমকে উঠল, একি তার স্বামী পালঙ্কে শুয়ে আছেন? দিগভ্রান্তের মত ইলা ছুটে গেল পালঙ্কের কাছে। এসে দেখলেন, শূন্য পালঙ্ক পড়ে আছে ! ইলার কানে এলো তাঁর স্বামীর কণ্ঠ, মনে হয় আমার প্রেশারটা বেড়েছে গো...
চীৎকার করে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইলা। রমাকান্তর ভাই, রমেন ছুটে এলেন, দেখলেন, বৌদি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।
--কি হল--কি হল বৌদি ?
আতঙ্কিত ইলা বলল--ঠাকুরপো তোমার দাদা, খাটে শুয়ে আছে !
ঠাকুরপো চুপ করে গেলেন, বললেন, তোমার মানসিক অবস্থায় ভাল নেই--। এমন সময় বাইরে থেকে কেউ ডেকে উঠল রমেন, তাড়াতাড়ি আয় !
বাইরে ধ্বনিত হল--বল হরি, হরি বল।
রমাকান্তর শেষ যাত্রা শুরু। রমাকান্ত ঘরের জালনায় দাঁড়ালেন, এক মৃতদেহ শ্মশান যাত্রায় চলেছে। হঠাৎ মনে হল কাপড়ে মোড়া মৃতদেহ যেন তিনি স্বয়ং ! কিন্তু তাঁর নিজের জানলার ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অস্তিত্বও যে তিনি টের পাচ্ছেন ! আবার মাথাটা গুলিয়ে গেল। পরক্ষণেই রমাকান্ত দেখলেন তিনি পালংকেই শুয়ে আছেন।
রাতের আলো জ্বলে উঠলো। ছেলে-মেয়ে-বউ সবার সঙ্গে তিনি কথা বললেন কিন্তু কারও উত্তরই পেলেন না। মাঝরাতে রমাকান্ত বাইরে বেরিয়ে এলেন। চাঁদ নেই আকাশে কিন্তু অন্ধকারও নেই। কিছু আলোক পুঞ্জ আকাশে জ্বলছে। রমাকান্ত দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
তিনি দেখলেন, তাঁর সামনে তাঁর ঘর-সংসার সব কিছু আগের মতই আছে। ঠিক আগের মতই তিনি নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর কথাবার্তা প্রেমালাপ চলছে, রাতের বিছানার সম্পর্কগুলি ঠিক তেমনি ঘটে চলছে। রমাকান্ত কিছুই বুঝতে পারলেন না--তাঁর ঠিকানা ইহলোকের না পরলোকের ?
আসলে ইহলোক-পরলোকের সম্পর্ক বড় নিবিড়। ভৌতিক আত্মাদের ভোগ বিলাস তাদের মনের মাঝেই তৈরি হতে পারে। সে জগৎ মনের সঙ্গে রূপান্তরিত হতে পারে--চাইলে আত্মারা বুঝি পরলোকে ইহলোকের আস্ত একটা সংসার তৈরি করে নিয়ে বসবাস করতে পারে।
রমাকান্ত প্রতিদিনের মত প্রাতঃভ্রমণে বেরলেন। ময়দানে কয়েক চক্কর তিনি হাঁটলেন। নির্মল বাবু আসতেই তিনি হাত উঠিয়ে, হায়, করলেন। কিন্তু নির্মল না দেখার ভান করে চলে গেলেন কেন ? হরিষ বাবুকে দেখে প্রশ্ন করলেন, কেমন আছেন ? হরিষ হেঁটে চলেছেন। রমাকান্ত এবার গলা ছেড়ে ডাক দিলেন। হরিষ তবু নিরুত্তর। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিলেন রমাকান্ত, প্রেশারটা খুব বেড়েছে। মাথা ঘোরানোর পরিবর্তে সামনের দৃশ্যগুলি কেমন যেন পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে। সামনের দৃশ্যগুলি কিছুটা এগিয়ে যেতে না যেতেই মিলিয়ে যাচ্ছে !
রমাকান্ত ঘরে ফিরে আসছেন। ভোর বুঝি এখনো চলছে। ছায়া ছায়া ভাব চারদিকে। একি, তুমি ? রমাকান্ত দেখলেন তার স্ত্রী ইলা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে।
--তুমি এখানে ?
ইলা বলে উঠল--তোমার শরীরটা ভাল নেই তাই--
ব্যাস পলক পড়তে না পড়তেই দৃশ্যান্তর ঘটে গেল। ইলা ভ্যানিস হয়ে গেল।
বাড়ির সামনে ভিড় লেগেছে। ভিড় কাটিয়ে রমাকান্ত নিজের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন। একি ? তাঁর পালঙ্কের বিছানাপত্র সরানো কেন ? রমাকান্তর মাথা ঘুরে গেল। তিনি জোরে, ইলা, বলে ডাক দিয়ে উঠলেন।
ইলা বাইরে বসে কাঁদছিল। হঠাৎ তাঁর স্বামীর আওয়াজ পেয়ে আনমনা জবাব দিল, আসছি ! ইলা স্থানকাল ভুলে ছুটে গেল ঘরে। সে ভয়ঙ্কর চমকে উঠল, একি তার স্বামী পালঙ্কে শুয়ে আছেন? দিগভ্রান্তের মত ইলা ছুটে গেল পালঙ্কের কাছে। এসে দেখলেন, শূন্য পালঙ্ক পড়ে আছে ! ইলার কানে এলো তাঁর স্বামীর কণ্ঠ, মনে হয় আমার প্রেশারটা বেড়েছে গো...
চীৎকার করে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইলা। রমাকান্তর ভাই, রমেন ছুটে এলেন, দেখলেন, বৌদি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।
--কি হল--কি হল বৌদি ?
আতঙ্কিত ইলা বলল--ঠাকুরপো তোমার দাদা, খাটে শুয়ে আছে !
ঠাকুরপো চুপ করে গেলেন, বললেন, তোমার মানসিক অবস্থায় ভাল নেই--। এমন সময় বাইরে থেকে কেউ ডেকে উঠল রমেন, তাড়াতাড়ি আয় !
বাইরে ধ্বনিত হল--বল হরি, হরি বল।
রমাকান্তর শেষ যাত্রা শুরু। রমাকান্ত ঘরের জালনায় দাঁড়ালেন, এক মৃতদেহ শ্মশান যাত্রায় চলেছে। হঠাৎ মনে হল কাপড়ে মোড়া মৃতদেহ যেন তিনি স্বয়ং ! কিন্তু তাঁর নিজের জানলার ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অস্তিত্বও যে তিনি টের পাচ্ছেন ! আবার মাথাটা গুলিয়ে গেল। পরক্ষণেই রমাকান্ত দেখলেন তিনি পালংকেই শুয়ে আছেন।
রাতের আলো জ্বলে উঠলো। ছেলে-মেয়ে-বউ সবার সঙ্গে তিনি কথা বললেন কিন্তু কারও উত্তরই পেলেন না। মাঝরাতে রমাকান্ত বাইরে বেরিয়ে এলেন। চাঁদ নেই আকাশে কিন্তু অন্ধকারও নেই। কিছু আলোক পুঞ্জ আকাশে জ্বলছে। রমাকান্ত দূর দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
তিনি দেখলেন, তাঁর সামনে তাঁর ঘর-সংসার সব কিছু আগের মতই আছে। ঠিক আগের মতই তিনি নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর কথাবার্তা প্রেমালাপ চলছে, রাতের বিছানার সম্পর্কগুলি ঠিক তেমনি ঘটে চলছে। রমাকান্ত কিছুই বুঝতে পারলেন না--তাঁর ঠিকানা ইহলোকের না পরলোকের ?
আসলে ইহলোক-পরলোকের সম্পর্ক বড় নিবিড়। ভৌতিক আত্মাদের ভোগ বিলাস তাদের মনের মাঝেই তৈরি হতে পারে। সে জগৎ মনের সঙ্গে রূপান্তরিত হতে পারে--চাইলে আত্মারা বুঝি পরলোকে ইহলোকের আস্ত একটা সংসার তৈরি করে নিয়ে বসবাস করতে পারে।
সমাপ্ত
--------------------