কৃষ্ণনগর ....✍কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
ইতিহাস
কৃষ্ণনগর
কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত মিষ্টি সরপুরিয়ার নাম সকলেরই জানা। যেটা জানা নেই, সেটা হল এই অঞ্চলের প্রাচীন নাম। কয়েকশো বছর আগে জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত এই অঞ্চল তখনও একটি গ্রাম, নাম ছিল ‘রেউই’। ইংরেজ আমলে নদিয়ার রাজধানী এখানে স্তানান্তরিত হলে এই অঞ্চল গ্রাম থেকে শহরে উন্নিত হয়। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে এখানে যে বারদোল উৎসব হয় তা প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন। এই উৎসবের সময় নদিয়া জেলার বারোটি অঞ্চল থেকে বারোটি কৃষ্ণমূর্তি এখানকার রাজবাড়ির প্রাঙ্গনে আনা হয়। জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসঙ্গ উঠলে আমাদের সর্বাগ্রে মনে পড়ে চন্দননগরের কথা। অনেকের হয়ত জানা নেই, এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা চন্দননগরের চেয়ে বেশি। মজার কথা হল, জগদ্ধাত্রীর বাহন এখানে বিভিন্ন পাড়ায় বিভিন্ন। কোথাও সিংহ, কোথাও বাঘ, কোথাও হাতি আবার কোথাও বা ঘোড়া।
নদিয়ার আন্দুলিয়া (আনুলিয়া?)-রাজ কাশীনাথ রায় মোঘলসম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করতে না চাওয়ায় যুদ্ধ বাঁধে। সেই যুদ্ধে আন্দুলিয়া-রাজ পরাজিত ও নিহত হন। সেই সময় তাঁর পত্নী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি পালিয়ে বাগোয়ানে (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত) চলে আসেন। সেখানে তিনি জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্দারের আশ্রিতা হন। সেখানেই তাঁর এক পুত্রসন্তান জন্মায়। হরেকৃষ্ণ ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি কাশীনাথ রায় এর সন্তানকে আপন করে নিলেন এবং নাম রাখলেন রামচন্দ্র সমাদ্দার। পরবর্তীকালে তিনি রামচন্দ্রকে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারি করে যান। রামচন্দ্রের চার ছেলে— দুর্গাদাস, জগদীশ, হরিবল্লভ এবং সুবুদ্ধি। রামচন্দ্রের প্রথম পুত্র দুর্গাদাস মানসিংহের সহযোগী হন। দিল্লির মসনদে তখন জাহাঙ্গীর। পুরস্কার স্বরূপ ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ১৪ পরগনার যে সনদ প্রদান করেন সেই সূত্রে দুর্গাদাস নদিয়ারাজ হন এবং নদিয়া রাজবংশের সূচনা করেন। নদিয়ারাজ পদে আসীনকালে তাঁর নাম হয় ভবানন্দ মজুমদার। যদিও পরবর্তী নদিয়ারাজেরা রায় উপাধি গ্রহণ করেন।
ভবানন্দ মজুমদার তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাটিয়ারিতে। এখানে তাঁরা তিন পুরুষ ছিলেন। ভবানন্দের পর তাঁর পুত্র গোপাল নদিয়ারাজ হন ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর রাজত্বকাল মাত্র চার বৎসর। তৎপুত্র রাঘব রায় ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নদিয়ারাজ পদে আসীন হন। তাঁর দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজত্বকাল শেষে পুত্র রুদ্র রায় নদিয়ারাজ হয়ে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। নবদ্বীপ-শান্তিপুরের নিকটবর্তী জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত রেউই গ্রামে তিনি তাঁর রাজধানী স্তানান্তরিত করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের নামানুসারে রেউইয়ের নতুন নামকরণ করেন কৃষ্ণনগর।
রুদ্র রায়ের পর নদিয়ারাজ হন তাঁর দ্বিতীয়া রানীর পুত্র রঘুরাম রায়। তাঁরই পুত্র সুবিখ্যাত কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর সুদীর্ঘ রাজত্বকাল (১৭২৮-৮২ খ্রিঃ) নানা ঘটনার ঘনঘটায় পূর্ণ। তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও সংস্কৃতিপোষক। কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, সাধককবি রামপ্রসাদ সেন সহ জ্ঞানীগুণীরা তাঁর রাজসভায় সভাসদপদ অলঙ্কৃত করতেন। তিনি নবদ্বীপ-অগ্রদ্বীপ-চক্রদ্বীপ-কুশদ্বীপের সমাজের অধিপতি সহ তৎকালীন রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতির ধারক-বাহক তথা হিন্দুসমাজপতি ছিলেন। তাঁর সময়েই বঙ্গ সংস্কৃতির অভিকেন্দ্র ছিল কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া। কৃষ্ণচন্দ্রকে ‘বাংলার বিক্রমাদিত্য’ বলা হয়।
শোনা যায়, বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে তিনি ইংরেজদের সংগে হাত মিলিয়েছিলেন। পুরস্কার স্বরূপ লর্ড ক্লাইভ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘রাজেন্দ্র বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কৃষ্ণচন্দ্র ‘অগ্নিহোত্র’ যজ্ঞ করেছিলেন। সেই সময় তিনি সারা ভারতের পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। যজ্ঞ শেষে তিনি ‘অগ্নিহোত্রী বাজপেয়ী শ্রীমান মহারাজরাজেন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্র রায়, নামে ভূষিত হন।
বর্গীর হামলার ভয়ে তিনি কৃষ্ণনগর থেকে শিবনিবাসে দ্বিতীয়বার রাজধানী স্থানান্তর করেন।
সূত্রঃ পশ্চিমবঙ্গ, নদিয়া জেলা সংখ্যা
নদিয়ার আন্দুলিয়া (আনুলিয়া?)-রাজ কাশীনাথ রায় মোঘলসম্রাট আকবরের বশ্যতা স্বীকার করতে না চাওয়ায় যুদ্ধ বাঁধে। সেই যুদ্ধে আন্দুলিয়া-রাজ পরাজিত ও নিহত হন। সেই সময় তাঁর পত্নী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি পালিয়ে বাগোয়ানে (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত) চলে আসেন। সেখানে তিনি জমিদার হরেকৃষ্ণ সমাদ্দারের আশ্রিতা হন। সেখানেই তাঁর এক পুত্রসন্তান জন্মায়। হরেকৃষ্ণ ছিলেন নিঃসন্তান। তিনি কাশীনাথ রায় এর সন্তানকে আপন করে নিলেন এবং নাম রাখলেন রামচন্দ্র সমাদ্দার। পরবর্তীকালে তিনি রামচন্দ্রকে তাঁর যাবতীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারি করে যান। রামচন্দ্রের চার ছেলে— দুর্গাদাস, জগদীশ, হরিবল্লভ এবং সুবুদ্ধি। রামচন্দ্রের প্রথম পুত্র দুর্গাদাস মানসিংহের সহযোগী হন। দিল্লির মসনদে তখন জাহাঙ্গীর। পুরস্কার স্বরূপ ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ১৪ পরগনার যে সনদ প্রদান করেন সেই সূত্রে দুর্গাদাস নদিয়ারাজ হন এবং নদিয়া রাজবংশের সূচনা করেন। নদিয়ারাজ পদে আসীনকালে তাঁর নাম হয় ভবানন্দ মজুমদার। যদিও পরবর্তী নদিয়ারাজেরা রায় উপাধি গ্রহণ করেন।
ভবানন্দ মজুমদার তাঁর রাজধানী স্থাপন করেছিলেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাটিয়ারিতে। এখানে তাঁরা তিন পুরুষ ছিলেন। ভবানন্দের পর তাঁর পুত্র গোপাল নদিয়ারাজ হন ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর রাজত্বকাল মাত্র চার বৎসর। তৎপুত্র রাঘব রায় ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নদিয়ারাজ পদে আসীন হন। তাঁর দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজত্বকাল শেষে পুত্র রুদ্র রায় নদিয়ারাজ হয়ে রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। নবদ্বীপ-শান্তিপুরের নিকটবর্তী জলঙ্গী নদীর তীরে অবস্থিত রেউই গ্রামে তিনি তাঁর রাজধানী স্তানান্তরিত করেন এবং শ্রীকৃষ্ণের নামানুসারে রেউইয়ের নতুন নামকরণ করেন কৃষ্ণনগর।
রুদ্র রায়ের পর নদিয়ারাজ হন তাঁর দ্বিতীয়া রানীর পুত্র রঘুরাম রায়। তাঁরই পুত্র সুবিখ্যাত কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৭১০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর সুদীর্ঘ রাজত্বকাল (১৭২৮-৮২ খ্রিঃ) নানা ঘটনার ঘনঘটায় পূর্ণ। তিনি ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও সংস্কৃতিপোষক। কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, সাধককবি রামপ্রসাদ সেন সহ জ্ঞানীগুণীরা তাঁর রাজসভায় সভাসদপদ অলঙ্কৃত করতেন। তিনি নবদ্বীপ-অগ্রদ্বীপ-চক্রদ্বীপ-কুশদ্বীপের সমাজের অধিপতি সহ তৎকালীন রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতির ধারক-বাহক তথা হিন্দুসমাজপতি ছিলেন। তাঁর সময়েই বঙ্গ সংস্কৃতির অভিকেন্দ্র ছিল কৃষ্ণনগর তথা নদিয়া। কৃষ্ণচন্দ্রকে ‘বাংলার বিক্রমাদিত্য’ বলা হয়।
শোনা যায়, বাংলার নবাব সিরাজদৌল্লাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে তিনি ইংরেজদের সংগে হাত মিলিয়েছিলেন। পুরস্কার স্বরূপ লর্ড ক্লাইভ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ‘রাজেন্দ্র বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
কৃষ্ণচন্দ্র ‘অগ্নিহোত্র’ যজ্ঞ করেছিলেন। সেই সময় তিনি সারা ভারতের পণ্ডিতদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। যজ্ঞ শেষে তিনি ‘অগ্নিহোত্রী বাজপেয়ী শ্রীমান মহারাজরাজেন্দ্র কৃষ্ণচন্দ্র রায়, নামে ভূষিত হন।
বর্গীর হামলার ভয়ে তিনি কৃষ্ণনগর থেকে শিবনিবাসে দ্বিতীয়বার রাজধানী স্থানান্তর করেন।
সূত্রঃ পশ্চিমবঙ্গ, নদিয়া জেলা সংখ্যা
--------------------