মা মহিষমর্দিনী পূজা




ইতিহাস

মা মহিষমর্দিনী পূজা


কালনা বর্ধমান জেলার এক প্রাচীন শহর ৷ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পদধুলি ধন্য এবং বর্ধমান মহারাজাদের দ্বিতীয় রাজধানী শহর ৷ শহরের উত্তর দিক দিয়ে গঙ্গা নদী বয়ে চলেছে ৷ এই শহরেে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা যেমন হয় তেমন কিছু মেলাও বসে ৷ মা মহিষমর্দিনী পূূজা হল তাদের মধ্যে অন্যতম ৷ অতীতে কালনা ছিল একটা বড় গঞ্জ ৷ সেইসময় জলপথই ছিল প্রধান পরিবহন ব্যাবস্থা ৷

নবদ্বীপ,কাটোয়া থেকে বড় বড় ব্যাবসায়ী কালনায় ব্যাবসা করতে আসতেন,ফলে বড় বড় নৌকা, জাহাজ কালনার ঘাটে ভীড়ত৷ বর্তমানের 'মহিষমর্দিনী ঘাট' অতীতে 'সদর ঘাট' বা হপ্তা ঘাট' নামে প্রসিদ্ধ ছিল৷ব্যাবসায়ীদের মধ্যে একজন রানাঘাট থেকে এসেছিলেন পালচৌধুরি পদবী ধারী ৷ তিনি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে গঙ্গা স্নান সেরে পূজা পাঠ করে ব্যাবসায় মন দিতেন ৷ এইভাবেই তার দিন কাটত ৷ একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পেলেন, মা বলছেন আমার খুব কষ্ট,আমায় পূজা কর৷ঘাটে আমার পাটা ভেসে আসবে, সেই পাটা তুলে এখানেইপূজা কর৷ঘুম ভাঙলে ঘাটে এসে দেখলেন,সত্যি করে একটি পাটা গাছের শিকড়ে আটকে আছে৷ এরপর তিনি লোকজন ডেকে পাটা তুলে আনলেন ৷ সেটা ছিল ভাদ্র মাস৷এরপর চালাতৈরি, প্রতিমা বানানো,পুজার যোগার করতে চৈত্র মাস হয়ে গেল৷শুভদিন দেখে পূজা শুরু হল ৷ দেবী দশভূজা সিংহের পিঠে চড়ে মহীষাসুরকে শূলবীদ্ধ করছেন৷ পাশে আছেন জয়া বিজয়া ৷ এইভাবে চলছিল, ক্রমে ক্রমে পাকা মন্দির, আটচালা ও নহবত তৈরি হল৷পূজার সকল খরচ বহন করত সমগ্র কালনার ব্যাবসায়ীগন ৷ বর্তমানে এই পুজা সার্বজনীন রূপ পেয়েছে ৷
এরপর বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেওয়ায় ,চৈত্র মাসের বদলে শ্রাবন মাসের পূর্নিমা অথবা শুক্ন পক্ষের সপ্তমী থেকে দশমী তিথি ধরে পূজা শুরু হয় ৷ চারদিন ধরে মহা সমারোহে চলে কালনা শহরের মহা উৎসব৷বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় ৷ প্রাচীন ধারা বজায় রেখে প্রথম পূজা হয় পালচৌধুরীদের নামে৷চারদিন ধরেই চলে চন্ডীপাঠ,কীর্তন,যাত্রাপালা,দন্ডি কাটা,পুতুলনাচ অনুষ্ঠান৷নবমি পুজার দিন মানসিক পূজার সাথে চলে ছাগ বলি ৷

চার দিন ধরে চলে বস্ত্রদান ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ৷মা এখানে খুবই জাগ্রত, তিনি সকলের মনস্কামনা পুরণ করেন ৷ প্রতিদিন সকালে আটচালার ঠিক আগেই একটি সুউচ্চ নহবৎ খানা থেকে সুমিষ্ট সানাই বাজানো হয় ৷প্রতিদিন বহু মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়ান হয় ৷ পূজাকে কেন্দ্র করে প্রায় দিন ১৫ ব্যাপী এক বিশাল মেলা বসে ৷

এ বছর পূজা ও মেলা শুরু হচ্ছে আগামী ২৭জুলাই থেকে ৷ পুজার চারদিন কালনা শহরে বহু মানুষের সমাগম হয় ৷ মেলা কমিটি এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকে ৷ এ কদিন শহরে অনেক রাত পর্যন্ত পানীয় জলের সরবরাহ চালু থাকে এবং পুলিশি পাহাড়া থাকে সর্বত্র ৷ পুজা কমিটির নিজস্ব ধর্মশালা আছে ,যেখানে এ কদিন বহু মানুষ আশ্রয় নেন ৷মা মহিষমর্দ্দিনীর পূজা দেখতে কালনায় আসুন এবং দুদিন থেকে গোটা কালনা ঘুরে যান ৷ এখানে অনেককটি হোটেল আছে ৷ থাকা ও খাওয়ার কোনো অসুবিধা নেই ৷ আসতে চাইলে এখনই যোগাযোগ করুন ৷
--------------------
ভাষাপথ অ্যাপটি ব্যবহার করবার জন্য ধন্যবাদ। এই অ্যাপটি ভালো লাগেল, অবশ্যই ফাইব ষ্টার রেট দেবেন এবং কমেন্ট করে আপনাদের মতামত জানাবেন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নেবেন।