ঐতিহ্যময় কালনা ....✍প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
ইতিহাস
ঐতিহ্যময় কালনা
প্রাণকৃষ্ণ মিশ্র
অবিভক্ত বর্ধমান জেলার প্রাচীন জনপদ, অধুনা পূর্ব বর্ধমানের কালনা । অতীতে নাম ছিল অম্বুয়া নগরী । কথিত আছে ঋষি অম্বু এই কালনা শহরেই বসবাস করতেন । তাঁরই নাম অনুসারে শহরের নাম অম্বিকা কালনা। দ্বিমতে কালনার অধিষ্ঠাত্রি দেবী অম্বিকার নাম অনুসারে কালনা, অম্বিকা কালনা নামে পরিচিত।
কালনা শহরে শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা আছে। শহরের প্রানকেন্দ্রে একটি মহাবিদ্যালয় ও নয়টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। সঙ্গীত সাধনায়, ক্রীড়া, অঙ্কন সহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষকের বাস কালনায়। সঙ্গীত সাধক পন্ডিত গুরুপ্রসাদ মিশ্র কালনার বাসিন্দা।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এই কালনা শহরে বসবাস ও ধর্মাচারন করেন। এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের পাশাপাশি মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, জৈন ধর্মের মানুষও বসবাস ও ধর্মাচারন করে থাকেন।
বর্ধমান মহারাজাদের রাজত্বকাল হইতেই কালনার গরীমা বৃদ্ধি পায়। কালনা শহরের উত্তরে ভাগিরথী নদী। বর্নিত আছে কালনা কোন এক সময় রাজ্যের অন্যতম প্রধান জাহাজ বন্দর ছিল। আজও কালনা ব্যাবসার অন্যতম প্রধান জায়গা দখল করে আছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়।
কালনা মন্দিরময় শহর। ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে কালনায় অসংখ্য মন্দির তৈরী করেছেন বর্ধমানের মহারাজারা। আমাদের জেলায় একমাত্র এক বৃত্তের মধ্যে সুদৃশ্য ১০৮ শিব মন্দির কালনাতেই আছে। এই মন্দির স্থানীয়দের কাছে নব কৈলাশ মন্দির নামেই পরিচিত।
বর্ধমান মহারাজার তৈরী রাজবাড়ি খুবই সুন্দর। এই রাজবাড়ির ভিতরে প্রতাপেশ্বর শিবমন্দির, রাশমন্দির, ২৫ চূঁড়া বিশিষ্ট লালাজি মন্দির ও কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির অবস্থান করছে। অনেক ছোট বড় গল্প গাঁথা রচিত আছে লালাজী মন্দির ও রাজবাড়ি নিয়ে। বর্তমানে এই মন্দিরগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ব বিভাগ কর্তৃক সংস্কার ও পরিচর্যা করা হলেও, তা যথেষ্ট নয়। মন্দিরের গাত্রে টেরাকোটার মূর্তিগুলিও কালের নিয়মেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।প্রতিবৎসর রাজ্য সরকারের পক্ষ্য থেকে বর্তমানে পর্যটন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সারা বৎসর প্রতিদিনই মন্দিরগুলিকে আলোকসজ্জায় সাজানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
তবে বর্ধমান মহারাজাদের তৈরী জগন্নাথ মন্দির আজ ধ্বংসের মুখে। গোপাল বাড়ির ২৫ চূঁড়া বিশিষ্ট মন্দিরও রক্ষনাবেক্ষনের অভাব আছে।
তবে কালনার অধিষ্ঠাত্রীদেবী মা সিদ্ধেশ্বরীর এক চালা মন্দির খুবই সুন্দর। কালনায় শিতলা তলায় প্রাচীন মসজিদ আছে, যা কালনার পুরাতন মসজিদ নামে পরিচিত। কালনা বৈষ্ণব সাধনার অন্যতম পীঠস্থান। এখানে নিমাই সন্নাসী, নিত্যানন্দ, গদাধর পন্ডিত বারেবারে এসেছেন ও থেকেছেন। কালনার মহাপ্রভু বাড়ি দর্শনার্থীদের অন্যতম গন্তব্যস্থল। এখানে আজও ঝাঁপি দর্শন প্রথা চালু আছে। ভগবান শ্রী চৈতন্যদেব যে আমলি বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন তা আজও অক্ষত ও বিরাজমান।
পর্যটন মানচিত্রে দেরিতে হলেও আজ কালনা স্থান পেয়েছে। তবে সরকারী উদ্যোগ আশাব্যাঞ্জক নয়।
কালনা শহর সাধক কমলাকান্তের সাধনক্ষেত্র। সাধক ভগবান দাস বাবাজি, সাধক ভবা পাগলা কালনাতেই বৈষ্ণব ও শাক্ত মতে সাধনা করেছিলেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, নেতাজী সুভাষচন্দ্রের পায়ের ধুলা আছে এ শহরে। তারানাথ তর্কবাচস্পতীর পাঠশালা ও বসতবাটী ছিল এশহরে। তবুও এ শহর কেমন যেন ব্রাত্য হয়েই রয়ে গেছে ভ্রমন পিপাসুদের নিকট। ভারতের মানচিত্রে পর্যটন স্থান হিসাবে কালনাকে তুলে ধরতে সর্বস্তরের জেলার মানুষদের এগিয়ে আসা একান্ত কাম্য হোক আগামী দিনে। ছোট্ট এই মফস্বল শহর ইতিহাস খ্যাত ও সুন্দর।
কিভাবে আসবেন:- বর্ধমান- হাওড়া মেন বা কর্ড লাইন ট্রেন ধরে বৈঁচী বা গুরাপে নেমে কালনার বাস পাবেন। হাওড়া কাটোয়া লোকাল ধরে এলে অম্বিকা কালনা স্টেশনে নামতে হবে। গঙ্গার ওপাড়েই শান্তিপুর স্টেশনে নেমে কালনা ঘাটে বাস বা ট্রেকার ধরে আসা যায়। বর্ধমান -কালনা বাস ধরে আসতে পারেন।
(শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। কপি করবেন না। @প্রানকৃষ্ণ)
কালনা শহরে শিক্ষা ও সংস্কৃতির চর্চা আছে। শহরের প্রানকেন্দ্রে একটি মহাবিদ্যালয় ও নয়টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। সঙ্গীত সাধনায়, ক্রীড়া, অঙ্কন সহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী শিক্ষকের বাস কালনায়। সঙ্গীত সাধক পন্ডিত গুরুপ্রসাদ মিশ্র কালনার বাসিন্দা।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এই কালনা শহরে বসবাস ও ধর্মাচারন করেন। এখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের পাশাপাশি মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, জৈন ধর্মের মানুষও বসবাস ও ধর্মাচারন করে থাকেন।
বর্ধমান মহারাজাদের রাজত্বকাল হইতেই কালনার গরীমা বৃদ্ধি পায়। কালনা শহরের উত্তরে ভাগিরথী নদী। বর্নিত আছে কালনা কোন এক সময় রাজ্যের অন্যতম প্রধান জাহাজ বন্দর ছিল। আজও কালনা ব্যাবসার অন্যতম প্রধান জায়গা দখল করে আছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়।
কালনা মন্দিরময় শহর। ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে কালনায় অসংখ্য মন্দির তৈরী করেছেন বর্ধমানের মহারাজারা। আমাদের জেলায় একমাত্র এক বৃত্তের মধ্যে সুদৃশ্য ১০৮ শিব মন্দির কালনাতেই আছে। এই মন্দির স্থানীয়দের কাছে নব কৈলাশ মন্দির নামেই পরিচিত।
বর্ধমান মহারাজার তৈরী রাজবাড়ি খুবই সুন্দর। এই রাজবাড়ির ভিতরে প্রতাপেশ্বর শিবমন্দির, রাশমন্দির, ২৫ চূঁড়া বিশিষ্ট লালাজি মন্দির ও কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির অবস্থান করছে। অনেক ছোট বড় গল্প গাঁথা রচিত আছে লালাজী মন্দির ও রাজবাড়ি নিয়ে। বর্তমানে এই মন্দিরগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ব বিভাগ কর্তৃক সংস্কার ও পরিচর্যা করা হলেও, তা যথেষ্ট নয়। মন্দিরের গাত্রে টেরাকোটার মূর্তিগুলিও কালের নিয়মেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।প্রতিবৎসর রাজ্য সরকারের পক্ষ্য থেকে বর্তমানে পর্যটন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সারা বৎসর প্রতিদিনই মন্দিরগুলিকে আলোকসজ্জায় সাজানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
তবে বর্ধমান মহারাজাদের তৈরী জগন্নাথ মন্দির আজ ধ্বংসের মুখে। গোপাল বাড়ির ২৫ চূঁড়া বিশিষ্ট মন্দিরও রক্ষনাবেক্ষনের অভাব আছে।
তবে কালনার অধিষ্ঠাত্রীদেবী মা সিদ্ধেশ্বরীর এক চালা মন্দির খুবই সুন্দর। কালনায় শিতলা তলায় প্রাচীন মসজিদ আছে, যা কালনার পুরাতন মসজিদ নামে পরিচিত। কালনা বৈষ্ণব সাধনার অন্যতম পীঠস্থান। এখানে নিমাই সন্নাসী, নিত্যানন্দ, গদাধর পন্ডিত বারেবারে এসেছেন ও থেকেছেন। কালনার মহাপ্রভু বাড়ি দর্শনার্থীদের অন্যতম গন্তব্যস্থল। এখানে আজও ঝাঁপি দর্শন প্রথা চালু আছে। ভগবান শ্রী চৈতন্যদেব যে আমলি বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন তা আজও অক্ষত ও বিরাজমান।
পর্যটন মানচিত্রে দেরিতে হলেও আজ কালনা স্থান পেয়েছে। তবে সরকারী উদ্যোগ আশাব্যাঞ্জক নয়।
কালনা শহর সাধক কমলাকান্তের সাধনক্ষেত্র। সাধক ভগবান দাস বাবাজি, সাধক ভবা পাগলা কালনাতেই বৈষ্ণব ও শাক্ত মতে সাধনা করেছিলেন।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, নেতাজী সুভাষচন্দ্রের পায়ের ধুলা আছে এ শহরে। তারানাথ তর্কবাচস্পতীর পাঠশালা ও বসতবাটী ছিল এশহরে। তবুও এ শহর কেমন যেন ব্রাত্য হয়েই রয়ে গেছে ভ্রমন পিপাসুদের নিকট। ভারতের মানচিত্রে পর্যটন স্থান হিসাবে কালনাকে তুলে ধরতে সর্বস্তরের জেলার মানুষদের এগিয়ে আসা একান্ত কাম্য হোক আগামী দিনে। ছোট্ট এই মফস্বল শহর ইতিহাস খ্যাত ও সুন্দর।
কিভাবে আসবেন:- বর্ধমান- হাওড়া মেন বা কর্ড লাইন ট্রেন ধরে বৈঁচী বা গুরাপে নেমে কালনার বাস পাবেন। হাওড়া কাটোয়া লোকাল ধরে এলে অম্বিকা কালনা স্টেশনে নামতে হবে। গঙ্গার ওপাড়েই শান্তিপুর স্টেশনে নেমে কালনা ঘাটে বাস বা ট্রেকার ধরে আসা যায়। বর্ধমান -কালনা বাস ধরে আসতে পারেন।
(শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। কপি করবেন না। @প্রানকৃষ্ণ)
--------------------