পাহাড়ী ফুল ....✍মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
ভুতের গল্প
পাহাড়ী ফুল
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
র্পূবের পাহাড়ী শহরটাতে যোগ দিতে এসেছিলাম স্থানীয় চার্চ সংলগ্ন এক স্কুলে ৷ কলকাতার জীবনে দমবন্ধ লাগছিল ৷
দেবেশ বলেছিল, দুর্গম জায়গা বলে ভাল শিক্ষক নেই উঁচু ক্লাসে ৷
ট্রেনে চেপে পড়ে ছিলাম৷ সম্বল শুধু ঠিকানা ৷
দেবেশ বলেছিল 'একখানা চিঠি লেখ আগে ৷'
মনে হয়েছিল আমাকে ওরা ফেরাবে না ৷
গন্তব্যে পৌঁছানো গেল৷ প্রিন্সিপাল সাদরে গ্রহণ করে আলাপ করালেন অন্যান্যদের সাথে ৷
মুশকিল হল, পরদিন থেকে শীতের ছুটি পড়ে যাচ্ছে৷ ফলে সকলেই ধীরে ধীরে বিদায় নিতে শুরু করলেন৷ কেউই স্হানীয় নন ৷
মাথায় বাজ ৷ এখনি ফেরা অসম্ভব৷ কলকাতার সুখী মানুষ ততক্ষণে কাবু ৷ শরীরের বেদনা বলছে, জ্বর আসছে ৷
প্রিন্সিপাল বললেন "একটা খবর দিয়ে যদি আসতেন........ দারোয়ানও দু দিন থাকবে না৷ ওর মেয়ের বাড়ি যাবে ৷"
আমি জানি এরা ঘোরালো নয়৷ তবে অচেনা মানুষকে কতটা বিশ্বাস করবে?
ভাবতে ভাবতেই সদ্য আলাপ হওয়া মিশ্রজী বললেন "সার, দারোয়ান কি ঘরমে বাঙালী বাবু রহে সাকতে হ্যাঁয় দো এক দিন৷ ফির সুবিধা হোনে সে লট যায়েঙ্গে৷" প্রিন্সিপালের মনে ধরল৷ ডাকলেন দারোয়ানকে ৷
নিরালায় ইতস্তত ঘোরাফেরা করছি৷ প্রকৃতি উদার, শান্ত, ফুলে ভরা৷ গীর্জার পাশের ঢালুতে বসে ঢুলছি ৷
"তুমি ফুল ভালবাস না?"
"বাসি তো" একটু চমকে উঠে বলে দেখি, একটি ছোট্ট মেয়ে, বছর সাত আটের ৷
"এত ফুলের মাঝে কেউ চোখ বুজে বসে থাকে?"
"আসলে শরীরটা খারাপ তো৷ খোলা হাওয়াতে আর ভাল লাগছে না ৷"
"স্কুলের লাইব্রেরীতে গিয়ে বসলেই পারো ৷"
"স্কুল বন্ধ পাগলী ৷"
" তুমি এসো৷ রাস্তা আছে ৷"
পাহাড় ঠেঙিয়ে পৌঁছালাম ইস্কুলের পেছনে৷ সত্যিই একটা দরজা আধ খোলা৷ আমি জানব কি করে ? লাইব্রেরীর দরজা দিয়ে ঢুকে আগেভাগে একটা চেয়ার টেনে রিডিং টেবিলে বসে পড়ল৷ বইপত্র দেখে আমি এগিয়ে যেতেই বলল "দাও না ট্রেজার আইল্যান্ডটা পেড়ে৷ ঐ ডানদিকের সব থেকে উঁচু তাকে দেখ ৷"
নামিয়ে দেবার সময় বই থেকে শুকনো ফুলের মত কিছু পড়ল টুপ করে৷ শুকনো ফুলটা পাতার ফাঁকে রেখে ওকে দিিলাম বইটা ৷
আমিও একটা বই নিয়ে মন লাগিয়ে ফেলেছি৷ হুঁস ফিরতে দেখি মেয়েটি কোথাও নেই৷ চঞ্চলা বালিকা৷ আমি ওর বইটা জায়গাতে রাখতে গিয়ে দেখি পাতার ফাঁকে শুকনো ফুলটা নেই ৷
দারোয়ান ফিরে এসেছে৷ বললাম "দেখ আমি কাল কলকাতা ফেরার ব্যবস্হা করে নেব৷ স্কুল লাইব্রেরীর এই বইটা আমি পড়ে শেষ করব বলে নিয়ে এসেছিলাম৷ তোমার ঘরে থাক৷ স্কুল খুললে জমা করব এখন ৷"
"লাইব্রেরীতে গেলেন কেমন করে?"
তখন সব বললাম৷ শুনতে শুনতে দারোয়ানের মুখ অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে৷ হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে দেখলাম পেছনের দিকে দরজায় বেশ শক্তপোক্ত তালা ঝুলছে ৷
সেই শুকনো ফুলটার কথা মিথ্যে নয়, সব থেকে বড় প্রমাণ তো আমার নিয়ে আসা বইটা৷ আমার মাথা টলছে৷ গীর্জার পাশ দিয়ে ফিরছি৷ চোখে পড়ল ভাঙাচোড়া সমাধি ৷
দারোয়ান বলছিল এখন এখানে আর সমাধি হয় না৷ কেরলের এক শিক্ষক ছিলেন বহু বছর আগে৷ তার বেটি মারা যাবার পর এখানে সমাধিস্হ করা হয়৷ মেয়েটি এই স্কুলেই পড়ত ৷ মা হারা মেয়েকে বাপ দেশে নিয়ে যাবে বলেছিল কদিন পরেই৷ আশ্চর্য এক ফুল না কি সেখানের পাহাড়ে বারো বছর পর পর ফোটে ৷
পুরোনো ফুল তার বাপের সংগ্রহ থেকে সকলকে দেখিয়ে নিজের কাছে রেখে ছিল ৷
কিন্তু বেটির ঘর ফেরা হয়নি৷ স্কুলের লাইব্রেরী থেকে ফেরার পথে একদিন আচমকাই পাহাড় থেকে কেমন করে পড়ে মারা যায়৷ বাবাও স্কুল ছেড়ে চলে গেছিলেন ৷
সত্যিই লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ কেরলে নীলাকুরুঞ্চি ফোটে বারো বছর পর৷ এবছরও ফুটেছে৷ আরও এগিয়ে গিয়ে দেখলাম পুরোনো সমাধিতে টাটকা বন্য নীলচে ফুল সাজানো৷ এ ফুল আমি অনেক বছর আগে কেরলে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম৷ নীলাকুরুঞ্চি ৷
দেবেশ বলেছিল, দুর্গম জায়গা বলে ভাল শিক্ষক নেই উঁচু ক্লাসে ৷
ট্রেনে চেপে পড়ে ছিলাম৷ সম্বল শুধু ঠিকানা ৷
দেবেশ বলেছিল 'একখানা চিঠি লেখ আগে ৷'
মনে হয়েছিল আমাকে ওরা ফেরাবে না ৷
গন্তব্যে পৌঁছানো গেল৷ প্রিন্সিপাল সাদরে গ্রহণ করে আলাপ করালেন অন্যান্যদের সাথে ৷
মুশকিল হল, পরদিন থেকে শীতের ছুটি পড়ে যাচ্ছে৷ ফলে সকলেই ধীরে ধীরে বিদায় নিতে শুরু করলেন৷ কেউই স্হানীয় নন ৷
মাথায় বাজ ৷ এখনি ফেরা অসম্ভব৷ কলকাতার সুখী মানুষ ততক্ষণে কাবু ৷ শরীরের বেদনা বলছে, জ্বর আসছে ৷
প্রিন্সিপাল বললেন "একটা খবর দিয়ে যদি আসতেন........ দারোয়ানও দু দিন থাকবে না৷ ওর মেয়ের বাড়ি যাবে ৷"
আমি জানি এরা ঘোরালো নয়৷ তবে অচেনা মানুষকে কতটা বিশ্বাস করবে?
ভাবতে ভাবতেই সদ্য আলাপ হওয়া মিশ্রজী বললেন "সার, দারোয়ান কি ঘরমে বাঙালী বাবু রহে সাকতে হ্যাঁয় দো এক দিন৷ ফির সুবিধা হোনে সে লট যায়েঙ্গে৷" প্রিন্সিপালের মনে ধরল৷ ডাকলেন দারোয়ানকে ৷
নিরালায় ইতস্তত ঘোরাফেরা করছি৷ প্রকৃতি উদার, শান্ত, ফুলে ভরা৷ গীর্জার পাশের ঢালুতে বসে ঢুলছি ৷
"তুমি ফুল ভালবাস না?"
"বাসি তো" একটু চমকে উঠে বলে দেখি, একটি ছোট্ট মেয়ে, বছর সাত আটের ৷
"এত ফুলের মাঝে কেউ চোখ বুজে বসে থাকে?"
"আসলে শরীরটা খারাপ তো৷ খোলা হাওয়াতে আর ভাল লাগছে না ৷"
"স্কুলের লাইব্রেরীতে গিয়ে বসলেই পারো ৷"
"স্কুল বন্ধ পাগলী ৷"
" তুমি এসো৷ রাস্তা আছে ৷"
পাহাড় ঠেঙিয়ে পৌঁছালাম ইস্কুলের পেছনে৷ সত্যিই একটা দরজা আধ খোলা৷ আমি জানব কি করে ? লাইব্রেরীর দরজা দিয়ে ঢুকে আগেভাগে একটা চেয়ার টেনে রিডিং টেবিলে বসে পড়ল৷ বইপত্র দেখে আমি এগিয়ে যেতেই বলল "দাও না ট্রেজার আইল্যান্ডটা পেড়ে৷ ঐ ডানদিকের সব থেকে উঁচু তাকে দেখ ৷"
নামিয়ে দেবার সময় বই থেকে শুকনো ফুলের মত কিছু পড়ল টুপ করে৷ শুকনো ফুলটা পাতার ফাঁকে রেখে ওকে দিিলাম বইটা ৷
আমিও একটা বই নিয়ে মন লাগিয়ে ফেলেছি৷ হুঁস ফিরতে দেখি মেয়েটি কোথাও নেই৷ চঞ্চলা বালিকা৷ আমি ওর বইটা জায়গাতে রাখতে গিয়ে দেখি পাতার ফাঁকে শুকনো ফুলটা নেই ৷
দারোয়ান ফিরে এসেছে৷ বললাম "দেখ আমি কাল কলকাতা ফেরার ব্যবস্হা করে নেব৷ স্কুল লাইব্রেরীর এই বইটা আমি পড়ে শেষ করব বলে নিয়ে এসেছিলাম৷ তোমার ঘরে থাক৷ স্কুল খুললে জমা করব এখন ৷"
"লাইব্রেরীতে গেলেন কেমন করে?"
তখন সব বললাম৷ শুনতে শুনতে দারোয়ানের মুখ অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে৷ হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে দেখলাম পেছনের দিকে দরজায় বেশ শক্তপোক্ত তালা ঝুলছে ৷
সেই শুকনো ফুলটার কথা মিথ্যে নয়, সব থেকে বড় প্রমাণ তো আমার নিয়ে আসা বইটা৷ আমার মাথা টলছে৷ গীর্জার পাশ দিয়ে ফিরছি৷ চোখে পড়ল ভাঙাচোড়া সমাধি ৷
দারোয়ান বলছিল এখন এখানে আর সমাধি হয় না৷ কেরলের এক শিক্ষক ছিলেন বহু বছর আগে৷ তার বেটি মারা যাবার পর এখানে সমাধিস্হ করা হয়৷ মেয়েটি এই স্কুলেই পড়ত ৷ মা হারা মেয়েকে বাপ দেশে নিয়ে যাবে বলেছিল কদিন পরেই৷ আশ্চর্য এক ফুল না কি সেখানের পাহাড়ে বারো বছর পর পর ফোটে ৷
পুরোনো ফুল তার বাপের সংগ্রহ থেকে সকলকে দেখিয়ে নিজের কাছে রেখে ছিল ৷
কিন্তু বেটির ঘর ফেরা হয়নি৷ স্কুলের লাইব্রেরী থেকে ফেরার পথে একদিন আচমকাই পাহাড় থেকে কেমন করে পড়ে মারা যায়৷ বাবাও স্কুল ছেড়ে চলে গেছিলেন ৷
সত্যিই লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে৷ কেরলে নীলাকুরুঞ্চি ফোটে বারো বছর পর৷ এবছরও ফুটেছে৷ আরও এগিয়ে গিয়ে দেখলাম পুরোনো সমাধিতে টাটকা বন্য নীলচে ফুল সাজানো৷ এ ফুল আমি অনেক বছর আগে কেরলে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম৷ নীলাকুরুঞ্চি ৷
--------------------